আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মেয়েদের অবস্থা ছিল করুণ। তখন গ্রামের বেশির ভাগ মেয়েকে পড়তে দেওয়া হতো না। সবার ধারণা ছিল, মেয়েরা ঘর-সংসার করবে; তাদের লেখাপড়ার কী দরকার। অল্প বয়সেই তাদের বিয়ে দেওয়া হতো। মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের ভালো ভালো খাবার দেওয়া হতো। কিন্তু আজ মেয়েদের নিয়ে এই নেতিবাচক ধারনার পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের পেছনে একটি কার্টুন চরিত্রের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
সেই কার্টুন চরিত্রের নাম মীনা। এই অঞ্চলের শিশু-কিশোরদের কাছে একটি অতি পরিচিত চরিত্র। ইউনিসেফের সহায়তায় এই কার্টুন ধারাবাহিকটি নির্মিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ ছিল প্রথম দেশ যেখানে ১৯৯৩ সালে বিটিভিতে মীনার স্কুলে যাওয়ার গল্প দেখানো শুরু হয়। এই কার্টুনের আরও জনপ্রিয় চরিত্র তার ভাই রাজু এবং তার পোষা টিয়াপাখি মিঠু।
ইউনিসেফের ভাষ্যে:Since her inception 14 years ago she has shown millions of women and girls what can be achieved. She has delivered messages on issues as far reaching as solving the problem of bullying through to challenging the stigma of HIV/AIDS through to girls’ right to play sport. The Meena stories are highly entertaining and fun, but also reflect, at their core, the realities of girls’ lives in South Asia.
প্রায় দুদশক ধরে মীনা দেখিয়েছে কোটি মেয়েদের কি করা সম্ভব। সে ইভ টিজিং থেকে শুরু করে এইচআইভি/এইডস বা মেয়েদের খেলার অধিকার সম্পর্কে তথ্য ও সমাধান দিয়েছে। মীনার গল্পগুলো খুবই চিত্তাকর্ষক ও মজার, তবে সেগুলো দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের বাস্তব সমস্যা নিয়ে কথা বলে তাই হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
ইউনিসেফের মীনা কমিউনিকেশন ই্নিশিয়েটিভ নামক প্রচারণার দ্বারা মীনা কার্টুনের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নির্মাণ ও ব্যবহারে উৎসাহিত করা, মেয়েদের স্কুলে পাঠানো, কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে থেকে স্কুলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া, যৌতুক বন্ধ করা, ছেলে-মেয়ে সমান পুষ্টি ও সুযোগ-সুবিধার দাবিদার, প্রয়োজনীয় ও সমঅধিকার পেলে মেয়েরাও অনেক কিছু হতে পারে তা বোঝানো, শহরের বাসায় বাসায় কাজে সাহায্য করে এমন মেয়েদের প্রতি সুবিচার ও তাঁদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে।
একটা বাচ্চা মেয়ের মাধ্যমে যে বার্তা দেয়া হচ্ছে, তা সবাইকে প্রভাবিত করছে। দৈনিক প্রথম আলো‘কে গৃহবধু নাজনীন রহমান জানিয়েছেন:
আমার মা জোহরা বেগম তাঁর দুই ছেলের বিয়েতে যৌতুক নিয়েছেন। তখনো টিভিতে মীনা দেখাতে শুরু করেনি। তারপর যেই তিনি মীনা দেখতে শুরু করলেন, তাঁর চরিত্রে মেয়েদের প্রতি আলাদাভাবে একটা সহানুভূতি কাজ করতে লাগল। তারপর যখন তাঁর ছোট ছেলের বিয়ে দিলেন, তখনই আমরা বুঝতে পারলাম তিনি মীনার দ্বারা কতটা প্রভাবিত। আম্মা আমার ছোট ভাইয়ের বিয়েতে যৌতুক নেননি।
ইতিবাচক পরিবর্তন আসার কথা লিখেছেন শুভ অংকুরও:
প্রচার হবার পর থেকেই মীনা পেয়ে যায় দারুন জনপ্রিয়তা। এবং এর ফলে আসতে থাকে বেশ কিছু পরিবর্তন। আগে গ্রামাঞ্চলে মেয়ে শিশুদেরকে স্কুলে যেতে না দিয়ে বাড়ির কাজ করানো হতো। মীনা কার্টুন প্রচার হবার পর থেকে আস্তে আস্তে ঘটতে থাকে পরিবর্তন। কারণ মীনা কার্টুনেও দেখানো হয়েছে যে তাকে স্কুলে যেতে দেয়া হতো না। কিন্তু কিছু ঘটনার পরে তাকে স্কুলে যেতে দেয়া হয়। এবং মীনা বিভিন্ন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় রাখতে থাকে। সে লেখাপড়া শিখে তার বাবাকে ঠকে যাবার হাত থেকে রক্ষা করে। আবার বাড়ির গরু চুরি ঠেকায়। এমনি সব কাজের জন্য মীনা হয়ে যায় সবার জনপ্রিয় এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোতে মেয়ে শিশুদেরকে অবহেলাও কমে যেতে থাকে।
সোহানুর রহমান মীনা কার্টুন থেকে অনেক কিছু শেখার কথা উল্লেখ করেছেন:
[…] মীনার কাছ থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি। সেই ৯০ দশক থেকে আজকের দিন প্রযন্ত প্রায় ১৭ বছর ধরে মীনা আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষের মনের মনিকোঠায় একটি উজ্জ্বল চরিত্র হিসেবে স্থান দখল করে নিয়েছে।
টুইটার ব্যবহারকারী বেঙ্গলিথিঙ্কের (@bengalithingss) কাছে মীনা কার্টুন ছিল রোল মডেল:
To be honest, Meena from Meena cartoon was one of my childhood role models. #nosarcasm #truth #bengali
— PerksOfBeingBengali♡ (@bengalithingss) October 24, 2013
সত্যি বলছি, ছোটবেলায় মীনা কার্টুনের মীনা ছিল আমার রোল মডেল।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের (@UNICEFBD) টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেও সমাজের নেতিবাচক ধারনা বদলে দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
Animation character Meena continues to influence lives of children and dispel negative social stereotypes… http://t.co/h5mbXHr64Y
— UNICEF Bangladesh (@UNICEFBD) December 24, 2013
অ্যানিমেশন চরিত্র মীনা শিশুদের অনুপ্রাণিত করছে, সমাজের নেতিবাচক ধারনা দূর করতে ভুমিকা রাখছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শতভাগ শিশুর ভর্তি, ঝরেপড়া রোধ ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণের জন্য প্রতিবছর ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশে মীনা দিবস পালিত হয়ে থাকে।
মীনা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাইরেও জনপ্রিয় হয়েছে। আরবি, বার্মিজ, চীনাসহ ত্রিশটির বেশি ভাষায় এর ডার্বিং হয়েছে। মীনা কমিক বইগুলো এখানে থেকে ডাউনলোড করা যাবে।
1 টি মন্তব্য