সুপার টাইফুন হাইয়ানের আঘাতে লণ্ডভণ্ড ফিলিপাইন্সের সংবাদ কভার করতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মধ্যে সিএনএন প্রথম সাংবাদিক দল পাঠায়। ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে এবং পরে সিএনএন-এর বিস্তারিত সংবাদ পরিবেশন ফিলিপাইন্সের অনেক নাগরিকেরই দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
Wow! @CNN has great coverage of the Super Typhoon Haiyan/Yolanda than local news. I wasn't worried till I switched the channel to CNN! 🙁
— Frances Amper Sales (@FrancesASales) November 9, 2013
দারুণ! স্থানীয় সংবাদপত্রের চেয়েও সুপার টাইফুন হাইয়ান নিয়ে সিএনএন অনেক বেশি কভারেজ দিচ্ছে। আমি এখন সিএনএন খুলে বসে থাকলেও এটা নিয়ে চিন্তিত হবো না! 🙁
Thank you @CNN for the great #Haiyan/#Yolanda coverage! The Philippines is glued to you.
— Emilio (@13thFool) November 9, 2013
হাইয়ান নিয়ে ব্যাপক কভারেজ দেয়ায় সিএনএন-কে ধন্যবাদ জানাই! ফিলিপাইন্স সিএনএন-এর সাথে আঠার মতো লেগে থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত টাকনোবান শহর থেকে সরাসরি সংবাদ পরিবেশন করায় অনেকে সিএনএন-এর উপস্থাপক এন্ডারসন কুপারের প্রশংসা করেছেন।
I'd rather believe those people on the field like @andersoncooper than those inside the news room
— Mei Lamamigo (@iloveMEIself) November 13, 2013
ঘরে বসে নয়, যারা এন্ডারসনের মতো মাঠে গিয়ে সংবাদ দেন আমি তাদের খবরেই আস্থা রাখবো।
@andersoncooper, when journalists like you keep watch/notice, there's a bigger chance that most relief donations will reach Yolanda victims.
— Tinay VCS (@tin_tangkad) November 13, 2013
এন্ডারসনের মতো সাংবাদিকরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে সংবাদ তুলে আনার ফলে হাইয়ান আত্রান্ত মানুষজনের বেশি করে ত্রাণ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এন্ডারসন দূর্গতদের কাছে ত্রাণ ও অন্যান্য সাহায্য সামগ্রী দেরিতে পৌঁছানোয় সরকারের সমালোচনা করেছেন। ফিলিপাইন্সের সাংবাদিক জেল সান্তোস রেলোস মনে করেন, এন্ডারসন তার প্রতিবেদন প্রকাশে সত্য ছিলেন:
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এন্ডারসন, অন্যান্য সাংবাদিক এবং বিশেষজ্ঞরা লেইটার পরিস্থিতি ঠিকভাবেই কভার করেছিলেন। তারা হাইয়ানের তাণ্ডব যথাযথভাবেই তুলে ধরেছিলেন। তাছাড়া জোরাইদায় ত্রাণ কার্যক্রম এবং সেখানে যেসব বাঁধা-বিপত্তি আসছে সেসবও তুলে ধরেছে।
সিএনএন এখানে ফিলিপাইন্সের ভাবমূর্তি নষ্ট করেনি। তারা সেখানে যা দেখেছেন, সেটাই তুলে ধরেছেন। যাতে করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় খুব দ্রুত সহায়তা পাঠাতে পারে।
তবে তার সহকর্মী এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব করিনা সানচেজ ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তিনি তার রেডিও শো-তে এন্ডারসনের সমালোচনা করেছেন:
Itong si Anderson Cooper, sabi wala daw government presence sa Tacloban. Mukhang hindi niya alam ang sinasabi niya.
এন্ডারসন কুপার অভিযোগ করেছে, টাকলোবানে সরকারের উপস্থিতি নেই। মনে হচ্ছে, সে জানে না, সে আসলে কী বলছে।
অনেকেই ম্যানিলার অফিসে বসে এন্ডারসনের মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদনের সমালোচনা করায় করিনাকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। করিনা তার পরের দিনেই সরেজমিনের পরিদর্শন করতে টাইফুনে বিধ্বস্ত শহর ওরমোক শহরে যান।
তবে এরমধ্যেই এন্ডারসন জেনে যান করিনার সমালোচনার কথা। তিনি তার বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান নিয়ে করিনাকে আমন্ত্রণ জানান টাকলোবানে যাওয়ার:
আমি মিস সানচেজকে অনুরোধ করবো সেখানে যেতে। আমি জানি, তবে শুনেছি তার স্বামী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমার নিশ্চিত, তিনি একটি হেলিকপ্টার ম্যানেজ করে দিতে পারবেন।
এন্ডারসনের বক্তব্য ঠিক ছিল। কারণ করিনার স্বামী মার রোক্সাস স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির প্রধান। নেটিজেনদের বেশিরভাগেরই প্রতিক্রিয়া এন্ডারসনের পক্ষে গেছে।
ইতোমধ্যে ইয়ামীন আরকুইজা সবাইকে ‘প্যারাস্যুট জার্নালিজম’-কে অতি দ্রুত গ্রহণ করার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন:
ঘূর্ণিঝড়ে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে কয়েকশ’ কিলোমিটার উপকূল অঞ্চল জুড়ে যে তাণ্ডব চালিয়েছে, সেই ভয়াবহতার বর্ণনা দেয়া অনেকটা গল্পের সেই হস্তি দর্শনের মতোই। একেক জন একেক অঞ্চলের খবর দিচ্ছে। বেশিরভাগ চিত্রই নিদারুণ বেদনার, যার বর্ণনা দেয়া কঠিন। যদি ‘প্যারাস্যুট জার্নালিজম'(বিদেশ থেকে স্বল্প সময়ের জন্যে এসে স্থানীয় অভিজ্ঞতা ব্যতিরেকে রিপোর্ট করা) হয়ে থাকে, তাহলে তো বেশিরভাগ জায়গা এখনো অজ্ঞাত থেকে গেছে। বাস্তবতার খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ উঠে এসেছে। বিদেশী সাংবাদিকরা সাধারণভাবেই পুরো বিষয়টাকে সর্বজনীন করে দেখেছে।
Anderson Cooper's coverage of the haiyan disaster in tacloban is a good example of parachute journalism and scaremongering.
— cebulog (@jdlctalk) November 16, 2013
টাকলোবানে হাইয়ানের ধ্বংসযজ্ঞের কভারেজ প্যারাস্যুট জার্নালিজমের সুন্দর উদাহরণ।
সরকারের ধীর গতির ত্রাণসামগ্রী পরিচালনা নিয়ে সমালোচনা শেষ হয়নি। অধ্যাপক গ্যারি লানুজা লিখেছেন:
সিএনএন প্রতিবেদক এন্ডারসন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ নিয়ে সমালোচনা না করলে করিনা সানচেজ টাকলোবানে যেতেন না। ঘূর্ণিঝড় আক্রান্তরা অভিযোগ না জানালে সরকার সাড়া দিতে ব্যর্থ হতো। সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সমালোচনা না করলে ত্রাণসামগ্রী লুট হয়ে যেত এবং তার রাজনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হতো।
সাংবাদিকদের মনে করিয়ে দেয়ার জন্য আইন শিক্ষক ফ্লোরিন হিলবে এই টুইটটি করেছেন:
regardless of whose side you're on, the journalist should not be the news. http://t.co/QwIqKP21zj
— florin hilbay (@fthilbay) November 15, 2013
আপনি যে পক্ষেই থাকুন না কেন, সাংবাদিকরা সংবাদ হতে পারেন না।
ফিলিপাইনে সিএনএন-এর ঘূর্ণিঝড়ের কভারেজের মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিয়ে আয়ি ম্যাকারেইগ লিখেছেন:
সিএনএন-এর টাইফুন কভারেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিলিপিনোদের দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। কেউ সিএনএন-এর ব্যাপক কভারেজ এবং সরকারের ধীর গতির ত্রাণ কাজ নিয়ে সমালোচনা করায় প্রশংসা করছেন। আবার কেউ সিএনএন-এর ‘প্যারাস্যুট জার্নালিজম’ এবং যৌক্তিক সমস্যা না বুঝে সরকারকে অভিযুক্ত করার সমালোচনা করেছেন।
মজার ব্যাপার হলো, হাইয়ান বিপর্যয় থেকে ফিলিপাইন্সের মানুষের জেগে ওঠার মন্ত্রে সিএনএন-এর প্রশংসা নিয়ে মিম বানানো হয়েছে। তবে এই ‘প্রশংসা’ ছিল ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সিএনএন একটি লেখার মন্তব্য থেকে নেয়া।
সিকার্স পোর্টাল ব্যাখ্যা করেছেন, ফিলিপাইন্সের অনেক মানুষ কেন সিএনএন-এর ছবি বিশ্বাস করে:
আমি বিশ্বাস করি, সিএনএন-এর সম্পাদিত ছবি জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হলো, আমরা ফিলিপাইন্স বাসীরা টাইফুন এবং ভূমিকম্পের দু:খদুর্দশা দূর করতে চাই। আমাদের এই সাহসকেই আমরা শেয়ার করছি।
তবে সিএনএন ফিলিপাইনের মানুষের প্রশংসা করেছে। আন্ডারসন গতকাল তার প্রতিবেদনের বলেছেন:
তারা মাথা আনত করে আছে, তারা ক্লান্ত, তারা আক্রান্ত। তবে তারা ভেঙ্গে পড়েনি। আমাদের সাথে যাদেরই দেখা হয়েছে, ধন্যবাদ জানিয়েছে। ধন্যবাদের সাথেই দেখিয়েছে, তারা কীভাবে বেঁচে আছে।
স্বাভাবিকভাবেই এই মন্তব্য ফিলিপাইনের মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
Because of the accurate report of Anderson Cooper, we filipinos were awakened of the real situation w/o bias. Thanks @CNN & @andersoncooper
— Angie G ♡ (@imSoooAngie) November 15, 2013
সিএনএন-এর প্রতিবেদনের সত্যতার কারণ হলো, আমরা ফিলিপাইন্সবাসীরা সব ধরনের পক্ষপাত ঝেড়ে আসল পরিস্থিতিতে জেগে উঠতে পারি। ধন্যবাদ সিএনএন এবং এন্ডারসন।
যদিও সিএনএন-এর সাংবাদিক দলকে সরকারের ভিআইপি সুবিধা দেয়ার বিষয়টিকে কেউ কেউ বাঁকা চোখে দেখছেন। কিছু স্থানীয় মিডিয়া প্রেসিডেন্টের অফিসে সিএনএন-এর সাংবাদিকদের ‘বেবিসিটিং‘ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন।