অনলাইনে গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে এক অভিযান হিসেবে গুজব ছড়ানো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চীন এক আইন জা্রি করেছে [চীনা ভাষায়]। ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত বিচার বিভাগের এক প্রেসনোট অনুসারে জাতীয় স্বার্থকে গালাগালি এবং এর জন্য ক্ষতিকর, ইন্টারনেটে এ রকম ভুয়া তথ্য ছড়ানোর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে তিন বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হতে পারে, যদি তার পোস্ট ৫০০০ বার দেখা হয় কিংবা ৫০০ বার অন্য কাউকে পাঠানো হয়।
সুপ্রিম পিপলস কোর্টের জারিকৃত নতুন নির্দেশনা অনুসারে গুজব ছড়ানো ব্যক্তির সংজ্ঞা এবং তাকে বিচারের আওতায় আনার বিষয়টিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বড় আকারের কোন ঘটনা ঘটানো, গণ আদেশে বিঘ্ন সৃষ্টি করা, জাতিগত এবং ধর্মীয় সংঘর্ষ ছড়ানো উদ্ধৃতি, এবং রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার মত বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।
শিনহুয়ার সংবাদ অনুসারে, উইহান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোব্লগিং বিষয়ক বিশেষজ্ঞ শেন ইয়াং, বিষয়টিকে আইনী প্রক্রিয়ায় আনার ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছে এই বলে যে, এটা ইন্টারনেটকে জঞ্জালমুক্ত করতে সাহায্য করবে।
গত কয়েক মাসে চীন সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে কারারুদ্ধ করেছে। এই বিষয়টিকে রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এর অনলাইন নিয়ন্ত্রকের নতুন নীতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। জুলাই, ২০১৩ -এ সিনা ওয়েবোতে সরকারি ভবনে বোমা মারার হুমকি প্রদান করার অভিযোগে গায়ক উ হংফেই গ্রেফতার করা হয়। একই সাথে আগস্ট মাসে অনলাইনে মিথ্যা গুজব তৈরী করা এবং সাজানোর দায়ে বেইজিং পুলিশ চীনা সাংবাদিক লিউ হুয়াকে গ্রেফতার করে আটক করে ।
সামাজিক প্রচার মাধ্যমকে নিজের ইচ্ছেমত ব্যাবহার করার বিষয়টির সুবিধার কথা মাথায় রেখে নাগরিকদের তাদের পোস্ট লেখার ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া দরকার, এই বাস্তবতায় হর্ষান্বিত কোন ব্যাক্তি বা যার কোন উদ্দেশ্য আছে সে দ্রুত ওই সমস্ত নাজুক পরিস্থিতিতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে একটি বিশেষ বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারে। নতুন এই নীতির ব্যপারে অনেক নেট নাগরিকরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
“ডুনান গুয়ানডিয়ান” [চীনা ভাষায়] লিখেছে:
一个人的同一个行为,他是不是个罪犯,决定权掌握在其他网民手中,别人不转他就是良民,别人转多了他就是个罪犯。
যদি কেউ অন্য কোন নেট নাগরিকের মাধ্যমে অপরাধ করে, যদি কেউ কারো টুইট পুনরায় টুইট না করে, তাহলে সে এক ভালো নাগরিক, যদি কেউ পুনরায় টুইট করে, তাহলে সে এক অপরাধ করল।
“ শেন বিজি” [চীনা ভাষায়] রসিকতা করেছে:
本人刚注册了500个小号,谁要惹我,就找他敏感贴,往死里转
এই মাত্র আমি ৫০০ একাউন্ট নিবন্ধন করলাম, কেউ যদি আমাকে খেপায়, তাহলে আমি তার সংবেদনশীল পোস্ট পুনরায় টুইট করে এর প্রতিশোধ নেব।
নতুন এই আইন চীনের বাকস্বাধীনতার বিষয়ে দ্রুত উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
“ইয়াংফেন কে ইয়াঙ্গাং” [চীনা ভাষায়] লিখেছে:
从“谣言转发500条入刑”事件中看不到新政府有什么要改革的苗头,只要看要对民众禁言的冲动;
এই নীতিতে আমি নতুন সরকারের সংস্কারের কোন চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি না, আমি কেবল নাগরিকদের বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা দেখতে পাচ্ছি।
“আইহফশাকা” [চীনা ভাষায়] লিখেছে:
一个不允许负面的ZF本身必然是专制,“谣言”转发500就可入刑,简直是滑稽加无耻,这无疑是告诉所有的百姓“你们必须保证说的是真理,要么我就可以给你转500,然后拿谣言的大帽子压死你”,潜在的意思就是都老实点,不然我就治你。
যে নীতি, নেতিবাচক মন্তব্য প্রকাশ করতে দেয় না, তখন তা এক স্বৈরাচারী নীতি। গুজব যদি ৫০০ বার ছড়ানো হয় তাহলে আপনাকে শ্রীঘরে সময় কাটাতে হবে, খুব সাধারণ ভাবে বলতে গেলে বিষয়টি অদ্ভুত। এই বিষয়টা সকলকে বলা যে আপনি যা বলছেন তা শতভাগ সত্য, তা না হলে আমি আপনার টুইটটি ৫০০ বার ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে টুইট করব, আর গুজব ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করব। আর এর সারমর্ম হচ্ছে আপনি যদি যথাযথ আচরণ না করেন তাহলে আমি আপনাকে শাস্তি প্রদান করব।
হংকং বিশ্বদ্যালয়ের অধ্যাপক চেন ওয়ানইং মন্তব্য করেছে [চীনা ভাষায়]:
法律也是需要的,要营造一种气氛,一方面打击谣言,但是也要给民众有讲话的空间,大家来探索,不然你不利于创新,不利于国家的发展。
গুজব মোকাবেলায় আইনের প্রয়োজন কিন্তু জনগণ যাতে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারে এবং নিজেদেরকে আবিস্কার করতে পারে, তার জন্য আমাদের জায়গা তৈরী করা দরকার, আর তা না হলে বিষয়টি উদ্ভাবন এবং জাতীয় উন্নয়নে সহায়ক হবে না।