পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া এলাকার বাসিন্দারা জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত

প্রবাদে আছে বিচার হতে দেরী হওয়া মানে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়া, আর পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিম প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়া (কেপিকে) এলাকা যেখানে সাধারণত শিক্ষার হার খুব সামান্য এবং প্রচণ্ড সন্ত্রাসী হামলায় বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে সেখানে অনেক সময় বিচার বিলম্বিত হয়।

আর এ কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালাতের জন্ম। সাচ টিভির সংবাদ অনুসারে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই)-এর নেতৃত্বে প্রাদেশিক সরকারের অধীনে পাকিস্তানের পতাকার রঙে রঙ করা এই সমস্ত বাসগুলোর যাত্রা শুরু। এই আদালত দ্রুত ও স্বল্প মূল্যে মানুষের দোরগোড়ায় বিচার পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্য গঠিত হয়েছে। আদালত ভবনের চার দেওয়ালের মাঝে বার বার শুনানি হয়, যা কিনা বাড়ি থেকে অনেক দূর এবং অনেক নাগরিকের জন্য তা ব্যয়বহুল। জাতি সংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তায় দ্রুত বিচার প্রদানের উদ্দেশ্য প্রদেশে রকম ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত চালুর পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।

পাকিস্তানে এ রকম ভ্রাম্যমাণ আদালত এই প্রথম নয়। রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি, দেশটির দূর দূরান্তে বসবাসরত নাগরিকরা যাতে দ্রুত এবং ঘরের দোরগোড়ায় বিচার পায় তার জন্য ২০০৯ সালে ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠনের এক আদেশ জারি করে। তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শঙ্কা একটা পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত হয়ত সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় তাদের কার্যক্রমকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে, যেমনটা ঘটেছিল প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মুহাম্মদ চৌধুরীকে পুনরায় স্বপদে ফিরেয়ে আনার জন্য আইনজীবীদের আন্দোলনের সময়, যাকে দেশটির সে সময়কার রাষ্ট্রপতি জেনারেল পারভেজ মুশাররফ চৌধুরী উক্ত পদ থেকে অপসারণ করেছিল। তবে আসিফ আলি জারদারির ভ্রাম্যমাণ আদালত অধ্যাদেশকে আইনজীবীরা “অসাংবিধানিক” বলে চিহ্নিত করেছে, একটা সময় পিটিআই-এর প্রধান ইমরান খান এইসকল আদালতকে ক্যাঙ্গারু কোর্ট হিসেবে অভিহিত করেছে, যা কিনা গণতান্ত্রিক প্রথাকে দমন করবে। চাপের মুখে রাষ্ট্রপতি এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি এই চিন্তার বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রদান করেছে।

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা সক্রিয় ভাবে নতুন এই বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করছে। নাদিয়া নাভিওয়ালা (@নাদিয়ানাভি) ঘোষণা প্রদান করেছে:

ন্যায়বিচার প্রদানের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের প্রথম ভ্রাম্যমাণ আদালতের যাত্রা শুরু। http://t.co/nEtlH6ujog

ফাইজান লাখানি (@ফাইজানলাখানি ) একটি ছবি পোস্ট করেছে:

পেশোয়ারে পিডিএ ভবনের সামনে এক ভ্রাম্যমাণ আদালত, যেখানে এক শুনানি চলছে।pic.twitter.com/RvrGn6At1e

দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এই ব্যবস্থাকে “চাকার উপরে ন্যায়বিচার” বলে অভিহিত করেছে। দুনিয়া টিভি সংবাদ প্রদান করেছে:

বিশেষ এক বাসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়েছে এবং তা জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় স্থাপন করা হয়েছে। এই ধরনের আদালত হাইকোর্টের আদেশ কৃত নির্দিষ্ট স্থান, শহর, ইউনিয়ন পরিষদ, পুলিশ থানা, অথবা অন্য সুনিদিষ্ট স্থানে ঘুরে ফিরে উক্ত স্থানসমূহে বসবে, যা হয়ত জেলা বিচারকের নির্দেশনায় পরিচালিত হবে।

দেখুনঃ পাকিস্তানের নতুন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অধিবেশন চলছে। প্রথম দিনের অধিবেশন কেমন লাগল?http://t.co/Ul4SOBucJO #ROL4GOV

প্রথম দিন পেশোয়ারের ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩০টি মামলার শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ অনুসারে, এই আদালত তরুণদের জেল থেকে মুক্তি দেয়, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের শুনানী গ্রহণ করে এবং ছোট আকারের জরিমানা ধার্য করে।

পেশোয়ারের হায়তাবাদে প্রথম ভ্রাম্যমাণ আদালত তার প্রথম অধিবেশনে ৩০টি মামলার মধ্যে ২৮টির বিচার করেছে। পারভেজ খাটাক (@পারভেজ_খাটাক)

এই প্রদেশ এবং একই সাথে সারা পাকিস্তান ভ্রাম্যমাণ আদালতকে উষ্ণতার সাথে গ্রহণ করেছে। সংবাদ পাঠিকা এবং সাংবাদিক ওয়াজিহ_সানি (@ওয়াজিহ_সানি) টুইট করেছে:

পেশোয়ারের ভ্রাম্যমাণ আদালত কেপিকে সরকারের (পিটিআই) এক ইতিবাচক উদ্যোগ, যার অবশ্যই প্রশংসা করা উচিত। জিও নিউজ নামক টিভি চ্যানেল এই বিষয়ে সংবাদ প্রদান করেছে।

টুইটার ব্যবহারকারী @দিনিউনরমাল_, ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু হবার প্রথম দিন থেকে তার কার্যক্রম নিয়ে দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন–এর ফেসবুকের পাতায় প্রকাশ করা ছবি প্রদর্শন করেছে:

ভ্রাম্যমাণ আদালত তার কাজ শুরু করেছে …… #KPK pic.twitter.com/EtnnImW7Jd

পেশোয়ারের এক কর্মী সাংবাদিক, মুসরাতউল্লাহ জান তার ব্যক্তিগত ব্লগে ব্যাখ্যা করছে কি ভাবে কেপিকে সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালত বিষয়টিকে তুলে ধরেছে।

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)এর বিরোধী দল যেমন মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) এমনকি এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে সোচ্চার। পাকিস্তানে জাতীয় সংসদে এই দলের সদস্য এবন এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের ব্লগার সৈয়দ আলী রাজা আবিদি (@আবিদিফ্যাক্টর), নীচের লেখাটি টুইট করেছে:

কেপিকে-তে ভ্রাম্যমাণ আদালত বাস হচ্ছে এক অসাধারণ উদ্যোগ। কিন্তু আমি আশা রাখি যে সন্ত্রাসী হামলা থেকে এটিকে নিরাপদ রাখার জন্য তাদের একটা পরিকল্পনা রয়েছে।

থাম্বনেইল ছবি টুইটার ব্যবহারকারী ফাইজান লাখানির সৌজন্যে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .