৬০০ বছরের পুরোনো ওক গাছ বাঁচাতে সার্বিয়া জুড়ে প্রতিবাদ

ইস্তাম্বুলের গেজি পার্ক উচ্ছেদের পরিকল্পনায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তুরস্কে চলছে ব্যাপক প্রতিবাদ। একই সময়ে সার্বিয়ার জনগণও একই ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। সেখানে একটা হাইওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আর এর জের ধরে কাটা পড়তে যাচ্ছে মধ্য সার্বিয়ার ৬০০ বছরের পুরোনো ওক গাছ। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে প্রতিবাদ কর্মসূচি চলায় সরকার চাপে পড়েছে। এজন্য ওক গাছ বাঁচাতে রাস্তা নির্মাণ পরিকল্পনায় সংশোধন আনা হচ্ছে।

গত জুন মাসের শেষ দিকে খবর বেরোয় করিডর ১১ রাস্তা নির্মাণের জন্য ৪৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ৮৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাচ্ছে। উল্লেখ্য, মধ্য সার্বিয়ার সাথে যোগাযোগের সবচে’ কৌশলগত রাস্তা হবে এটি। এরজন্য সেখানকার জনগণ দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করে আসছিল।

কিন্তু সার্বিয়ার জনগণ শোনে, এই হাইওয়েটা সোজা চলে যাবে। আর এর ফলে গর্নজি মিলানোভেকের কাছে সাভিনেক গ্রামের একটি ৬০০ বছর বয়সী ওক গাছ কাটা পড়বে। গাছ কাটার কথা শুনেই জনতা তাত্ক্ষণিকভাবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে প্রতিবাদ জানায়। একই সঙ্গে সাভিনেকের রাস্তায়ও প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে।

বিস্ময়কর প্রাকৃতিক গুণ এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছাড়াও সার্বিয়ানরা বিশ্বাস করে, ওক গাছ কাটলে দুর্ভাগ্য আসে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। সরকারের প্রতিনিধি এবং হাইওয়ে নির্মাণ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা কড়িডোর ১১ এর যাত্রাপথে পড়া এই ওক গাছের কথা। তারা এর জন্য একটা সমাধান খুঁজে বের করেছেন। কিন্তু সরকারের নগরায়ন এবং নির্মাণ বিষয়ক মন্ত্রী ভ্লাদিমির আইলিক এর আগে তারা “মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন নি” বলে জানান।

সার্বিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় অতি দ্রুত হাজার হাজার প্রতিবাদী পোস্ট আসতে থাকে। নেটিজেনরা ফেসবুক এবং টুইটারে #ওক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে এই প্রতিবাদ জানান।

"In hrast [oak] we trust" became a popular banner held by many at the protest in Savinac and shared on social networks; photo courtesy of Institute for Sustainable Communities - Serbia Facebook fan page.

“সাভিনাকের প্রতিবাদ মিছিলে অনেককে “আমরা ওক গাছকে বিশ্বাস করি” ব্যানার বহন করতে দেখা যায়। এবং এটা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হয়। ছবিটি ইনস্টিটিউট অব সাসটেইনেবল কমিউনিটি'র ফেসবুকের পেজের সৌজন্যে।

ওক গাছ কাটার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় গড়ে ওঠা আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে সার্বিয়ার মূলধারা'র মিডিয়াতেও। নগরায়ণ মন্ত্রী আইলাক দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানান। ওক গাছ বাঁচাতে সমাধান খুঁজে পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৬০০ বছরের পুরোনো, ৪০ মিটার উঁচু, ৭.৫ মিটার চওড়া এই গাছটিকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হবে। মন্ত্রীর এই সমাধানে সবাই সমালোচনা করেন। সমালোচনাকারীর দলে আছে অনলাইন ট্যাবলয়েড পত্রিকা টেলেগ্রাফ। তারা সমালোচনা করার পাশাপাশি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রকাশ করে:

Da bi se taj hrast, te veličine bezbedno iskopao, to zahteva veliki posao, veliki broj radnika i veliki prostor, odgovarajuću mehanizaciju. Teorijski je moguće, ali niko nema to iskustvo, te verujem da bi iskopavanje hrasta bio i njegov kraj. To je sve besmisleno. U zemljama koje drže do sebe takvo drvo bi se “uklopilo” u ambijent – kaže botaničarka Vasić.

এই ওক গাছের যে সাইজ, তাতে নিরাপদে অন্য কোনো জায়গায় সরিয়ে নেয়া বিরাট কাজের ব্যাপার। এর জন্য যেমন অনেক শ্রমিক লাগবে, তেমনি বিরাট জায়গা এবং সাজসরঞ্জাম ও লাগবে। তাত্ত্বিক ভাবে এটা হয়তো করা সম্ভব। তবে কেউ হয়তো এ ধরনের পরীক্ষায় যেতে চাইবে না, যেখানে আমি বিশ্বাস করি, ওক গাছ সরিয়ে নিলে এটা মারা যেতে পারে। পুরো ব্যাপারটাই বোকামি। মানুষ নিজে থেকেই এর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। এমনটাই বলেছেন উদ্ভিদবিজ্ঞানী ভাসিক।

সরকারের মন্ত্রী এবং অন্যান্য অফিসাররা যেখানে সমস্যার সমাধান খুঁজছেন, সে সময়ে সাভিনেকে জনতার প্রতিবাদ চলছে। জুন মাসের শেষ দিনে প্রতিবাদকারীরা গাছটি রক্ষা করতে এর চারপাশে জড়ো হতে থাকেন। গাছের চারপাশ ঘিরে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির উদ্যোক্তা ছিলেন সার্বিয়ার কবি ডোব্রিকা এরিক। তার বাড়ি এই অঞ্চলেই। এছাড়াও “গ্রিন অব সার্বিয়া”র মতো বেসরকারি সংস্থাগুলোও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। তবে সবার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে “ওক গাছ কাটা মানি না” এই স্লোগান প্রতিধ্বনিত হয়।

"Green of Serbia" activists gather around the 600-year-old oak tree in Savinac; photo courtesy of Insitute for Sustainable Communities - Serbia Facebook fan page.

সাভিনাকের ৬০০ বছর পুরোনো ওক গাছ ঘিরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে “গ্রিন অব সার্বিয়া”র কর্মীরা। ছবিটি ইনস্টিটিউট অব সাসটেইনেবল কমিউনিটি'র ফেসবুকের পেজের সৌজন্যে।

এই প্রতিবাদ কর্মসূচি চলতে থাকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহান্তের ছুটির দিন পর্যন্ত। এদিকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে প্রধানমন্ত্রী আইভিকা ডাসিস-এর সাথে বৈঠকে বসেন নগরায়ণ এবং নির্মাণ মন্ত্রী। মিটিং শেষে ৯ জুলাই নগরায়ণ মন্ত্রী আইলিক জনগণের উদ্দেশ্যে একটি বিবৃতি দেন। সেখানে তিনি ওক গাছ সংরক্ষণের কথা জানান। ট্যাবলয়েড পত্রিকা কুরির প্রতিবেদন প্রকাশ করে:

“Asfalt će biti potpuno odvojen jednim betonskim armiranim nosačem, tako da asfalt ne ošteti žile, a ni žile asfalt. Na taj način će se izbeći moguća oštecenja auto-puta”, rekao je Ilić.

“রিইনফোর্সড কংক্রিট বিমের মাধ্যমে পিচ পুরোপুরি আলাদা করা হবে। এর ফলে পিচ গাছের শিকড়ের ক্ষতি করতে পারবেন না। আর এভাবে হাইওয়ের ক্ষতি এড়ানো যাবে।” বলেছেন আইলিক।

হাইওয়ে এবং অনেক জাতির চেয়ে শতবর্ষ পুরোনো ওক গাছ দুটোই সার্বিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই হাইওয়ে সার্বিয়া অঞ্চলের কৃষি এবং উত্পাদনমুখী ব্যবসায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। তাই সার্বিয়ার জনগণ এই পরিমাণ আত্মত্যাগও করতে পারবে না।

ব্লগার জোরান সকিচ ওক গাছের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, এটা সার্বিয়াকে নাড়া দিয়েছে। তিনি স্মরণ করেছেন মধ্য সার্বিয়া অঞ্চলে পাহাড় আর বনভুমিতে কাটানো ছেলেবেলার কথা। তিনি উল্লেখ করেছেন তিনটি গাছের কথা যা তার জীবনকে অন্যরকম করে দিয়েছে। তিনি সমাপ্তি টেনে বলেন:

Mogu samo da kažem da će se u mom kraju slaviti čovek koji tu dovede auto – put i pominjaće ga na slavama i okupljanjima u lokalnim kafanama, nakon branja malina, bar deset narednih vekova. Stara je lokalna priča, verovatno koliko i taj hrast u Savincima, da smo pravo slepo crevo, da komunisti nisu dali da tuda prodje pruga jer je četnički kraj, da će se sva omladina odseliti ako ne dodje put … Slažem se. Ali sa druge strane, ne bih dao ni jedno od ova svoja tri drveta ni za tri auto puta ili tri pruge.

আমি একমাত্র এটাই বলতে পারি, আমাদের শহরে যিনি এই হাইওয়ে নিয়ে এসেছেন, তিনি বিখ্যাত বনে যাবেন। আগামী দশ শতাব্দী ধরে স্থানীয় ক্যাফেতে রাস্পবেরি মুখে নিয়ে তার নামে জয়ধ্বনি দেয়া হবে। বুড়োরা বলবে সেইসব লোকগল্প, এতে থাকতে পারে সাভিনাকের এই ওক গাছটিও। এই গাছের জন্য আমরা রাস্তায় নেমে পড়েছিলাম। কমিউনিস্টরা এখানে রেলওয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়নি। কারণ এটা ছিল চেচনিক এলাকা। যদি হাইওয়ে না আসে তাহলে আমাদের সব তরুণ দূরে চলে যাবে- আমি এই কথার সাথে একমত। কিন্তু অন্যদিকে আমি আমার এই তিনটি গাছের একটিও দিতে চাই না। এমনকি সেটা তিনটি হাইওয়ে কিংবা তিনটি রেলওয়ের বিনিময়েও।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .