বাংলাদেশ: যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে নারী ও শিশুরাও শাহবাগে

শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ব্লগার এবং অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন নারীরাও। সাথে নিয়ে এসেছেন তাদের কোলের সন্তানকেও। শাহবাগ যেন হয়ে উঠেছে নারী-পুরুষের জেগে ওঠার সম্মিলিত তরণি।

 

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে প্রাণ হারায় ৩০ লক্ষ নিরীহ বাঙালি। ধর্ষণের শিকার হন ২ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি নারী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে এসব কাজে সহযোগিতা করে এদেশীয় রাজাকার, আলবদর বাহিনী। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সেই সময়কার যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম চলছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসি এবং আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে নারী-পুরুষ রাজপথে নেমে এসেছেন এই ভয়ে যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের মুক্তির সম্ভাবনা থেকে যায়। এজন্যে তারাই জন্ম দিয়েছেন ‘শাহবাগ মুভমেন্ট’-এর।

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল শাহবাগে নারী ও শিশুদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। সামহোয়ারইন ব্লগে মাহাবুব ভূঁইয়া লিখেছেন:

মায়ের কোলে কিংবা বাবার হাত ধরে চলে আসছে শিশুরাও। গৃহবধূরাও আজ রাজপথে নেমে গেছেন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা এই তারুণ্যেও মিছিলে পা ফেলছেন যৌবনের বীর্যে বলীয়ান হয়ে।

পাভেল মহিতুল আলম তার ফেসবুকে জানাচ্ছেন কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশের কথা:

ভিকারুননিসার একদল মেয়ে এসেছিলো আজ সংহতি প্রকাশ করতে। তাদের মধ্যে কারো কারো আবার পরীক্ষা। পরীক্ষার পড়ার জন্য আন্দোলন কিংবা আন্দোলনের জন্য পড়া– কোনোটাই বাদ দেয়নি তারা। প্রজন্ম চত্বরেই তারা বসে পড়ে বই-খাতা নিয়ে। চলে পড়াশোনা, সেই সংগে চলে শ্লোগানও।

কবি, সাংবাদিক আবু হাসান শাহরিয়ার আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন উত্তাল শাহবাগ ঘুরে এসে তার অভিজ্ঞতার কথা ফেসবুকে শেয়ার করেছেন:

রাত তখন দেড়টার বেশি। এক কিশোরীকে দেখলাম, মায়ের হাত ধরে প্রজন্ম চত্বরের দিকে এগিয়ে আসছে। মাইক থেকে ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’ স্লোগান ভেসে আসতেই কিশোরীটি সমবেত জনতার সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলছে– ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই’। মাইকে ‘গোলাম আযমের ফাঁসি চাই’ শোনামাত্রই তার কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ছে– ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই’।

শাহবাগ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারী ও শিশুদের কিছু ছবি দেয়া হলো। ছবিগুলো ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্যাটেজি ফোরামের অ্যালবাম শাহবাগ স্কয়ার আপরাইজিং: জাস্টিজ ফর দ্য ভিকটিমস অব ৭১ থেকে নেয়া। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

সচলায়তনের ব্লগার মণিকা রশিদ শাহবাগে এসে জীবনে প্রথমবারের মতো কোনো মিছিলে গিয়ে স্লোগান দিলেন। সেটার কথা তিনি তার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন:

আমি কখনো মিছিলে গিয়ে স্লোগান দিয়েছি বলে মনে পড়ে না! কিন্তু শাহবাগ চত্তরের এই উত্তাল সময়ে চীৎকার করে স্লোগান দিতে কী যে অসাধারণ আনন্দ, তা বুঝিয়ে বলার ক্ষমতা রাখিনা। আজ আবার যাবো, স্লোগানও দেব

ব্লগার লীনা ফেরদৌসও শাহবাগে আসতে চেয়েছেন লক্ষ প্রাণের জ্বলে ওঠার মিছিলে:

আজ রাত ১০টার পর শাহবাগ থাকবো। 🙂 মোমের আলোয় পুড়িয়ে ফেলতে চাই ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা…

ব্যাংকার, ব্লগার নাজমুস নূপুর তার সন্তানের জন্য রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশের জন্য শাহবাগে এসেছেন। স্লোগান দিয়েছেন। প্রতিবাদী গানে গলা মিলিয়েছেন। তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন:

সারাদিন গলা ফাটিয়ে শ্লোগান দেয়ার সময় একবারো গলা কাঁপেনি, মনে হয়নি জীবনে প্রথম গলা ফাটাচ্ছি। ৭১-এ বাপ মা পথে নেমেছে, আজ আমরা নামলাম, জয় আমাদের হবেই। আমার সন্তানকে আমি রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ দিতে চাই। জয় বাংলা।

ফেসবুক ব্যবহারকারী জিনাত জোয়ার্দার রিপা লিখেছেন:

কোন এক সময়ে, নিজের সন্তানকে নিয়ে শাহবাগের রাস্তা দিয়ে যখন যাব তখন বলতে পারব- এই পথে নেমেছিলো তোর মা। রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে।

শাহবাগের এ আন্দোলনে প্রাণ জাগানো স্লোগানের নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে অনেক তরুণীকেই। এদের মধ্যে লাকি আক্তার অন্যতম। স্লোগানে নেতৃত্বদানকারী নারীদের নিয়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী জামাত-শিবির চক্র ফেসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। অপপ্রচারকারীদের উদ্দেশ্যে লাকি আক্তার তার ফেসবুকে লিখেছেন:

যারা আমাদের নামে কুৎসা রটনা করেছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, দেখুন আমরা যারা রাজপথে নেমেছি তারা কোন ধর্মের বিপক্ষে নই। তাই মাদ্রাসার ছাত্ররাও এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। জামাত শিবিরের ধর্ম ব্যাবসার রাজনীতি আইন করে বন্ধ করতে হবে।

একরামুল হক ইমন শাহবাগ আন্দোলনে অংশ নেয়া নারীদের স্যালুট জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন:

শাহবাগে সপরিবারে যারা যোগ দিয়েছেন তাদের লক্ষ কোটি স্যালুট, স্যালুট ওইসব অবুঝ শিশুদের যারা ভালভাবে ‘মা’ উচ্চারণ শেখার আগেই ‘তুই রাজাকার তুই রাজাকার‘ কিংবা ‘ফাঁসী চাই, ফাঁসী চাই’ গর্জনে নিজের কান তাতাল দিয়ে গেঁথে নিচ্ছে। স্যালুট সেইসব নারীদের, যারা দিনভর অফিসের কাজ ও সাংসারিক ঝামেলা মিটিয়ে রাতে যোগ দিচ্ছেন। আপনাদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি ও চিৎকার আমাদের শক্তি ও সাহস ত্বরান্বিত করছে প্রতিনিয়ত।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .