এই অনুচ্ছেদটি আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিবেদন সিরিজের একটি অংশ।
২০১২ সালের ২৭শে এপ্রিল অন্ধ চাইনিজ আইনজীবী ও কর্মী, চেন গুয়াংচেং, মধ্যরাতে নিরাপত্তা বাহিনী পরিবেষ্টিত একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে পালান। আন্তর্জাতিক মাধ্যমগুলো এ ঘটনা ফলাও করে প্রচার করেছে, এবং এই ঘটনা চীন ও আমেরিকা উভয় সরকারেরই কূটনীতিক সমস্যা হিসেবে পরিলক্ষিত হয়েছে, যারা বেইজিং এ বার্ষিক সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
যেহেতু চেন স্বাধীনতার জন্য গিয়েছেন, এটি পরিষ্কার যে তিনি আমেরিকার দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দূতাবাসে, চেন একটি বিস্ময়কর মন্তব্য করেনঃ তিনি চীন বা আশ্রয়স্থল ছেড়ে যেতে চান নি। যদি চেন আমেরিকার মাথাব্যাথার কারণ হন, তাহলে আমেরিকা চেনের জন্য সেরকমই।

চেন গুয়াংচেং: “মাননীয় ওয়েন, আমার তিনটি অনুরোধ আছে!”
আঙ্কল স্যামঃ “দাঁড়াও, দাঁড়াও! আমাকে একটা কথা দাও!”
ওয়েন জিয়াবাওঃ “বিশ্বাস কর! স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার সূর্যের চেয়েও মহীয়ান।”
‘সূর্যের চেয়েও মহীয়ান’ চীন ডিজিটাল টাইমসের হেক্সি ফার্মস ক্রেজি ক্র্যাবের সৌজন্যে।
বিতর্কের ঝড়
চেনের ঘটনা তিয়ানামেন বিক্ষোভ পরবর্তী নির্বাসনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা সৃষ্টি করেছেঃ চীন ছেড়ে গেলে চেন কি তার সমর্থন ও প্রভাব হারাবেন? এবং আমেরিকার সাথে মতপার্থক্যের পর কি সরকার তাকে আসতে দেবে?
যখন চেন পলায়ন করেন, তখন তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত কর্মী ছিলেন। বিশেষ করে তিনি সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নাগরিকবোধ সম্পন্ন মানুষদের চোখে এক নায়ক [en, zh] ছিলেন। অনুমোদন নিয়ে অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বিশ্বের সর্বত্র ও চীনা সামাজিক মিডিয়ায় চেনকে নিয়ে মন্তব্যে ভরে গেছে।
নিরঙ্কুশ সমর্থন
মিউট্যান্টফ্রগ ব্লগ থেকে, রয় বারম্যান, তর্ক করেনঃ
কিন্তু যখন চেনের প্রতি সারা বিশ্বে সমর্থন রয়েছে, তখন আমি ভাবছি আমেরিকায় তার ও তার পরিবারের আরামদায়ক জীবন ব্যতীত আর ভালো কিছু আদৌ হবে কিনা। উদাহরণস্বরূপ, অনৈতিক গ্রেফতারের পরে নির্বাসিত চাইনিজ শিল্পী আই ওয়েওয়েইর সমর্থনের দিকে তাকিয়ে দেখুন। […] কিন্তু তার এভাবে লড়াইয়ের জন্য বেঁচে থাকার প্রতি এই সমর্থন কতটুকু শর্ত সাপেক্ষ? […]
যার কর্মকান্ড আইনি ব্যবস্থা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে […], সেই চেন গুয়াংচেং এনওয়াইইউতে যাওয়ার পর তার কর্ম কতটুকু চালিয়ে যেতে পারবেন সেটা অনুমেয় নয়।
এম-বন উত্তর দেনঃ
আরেকটি প্রশ্ন হলঃ “এ ব্যাপারে তিনি চীনে ‘মুক্তহস্তে’ কি কিছু করতে পারবেন?”
চেন একটি প্রায় অকেজো আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন, যা চীনে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাকে বৈধ নাগরিকত্ব প্রদান করবে। দেখে মনে হয়, চেন চাইনিজ সরকারকে তার উপর স্থানীয় কর্মকর্তাদের “অবৈধ ক্ষতিসাধনের” উপর তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে, তিনি একটি বৈধ পন্থা গ্রহণ করেছেন যখন তিনি বুঝতে পারলেন তিনি বা তার পরিবার চীনে নিরাপদ ননঃ সরকারি ভাষায় আমেরিকায় পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন, “অন্য যে কোন চাইনিজ নাগরিকের মতই”।
সিং রেড ইন চায়না ব্লগ থেকে টম লিখেছেনঃ
চেন গুয়াংচেং কখনোই নিজেকে নির্বাসিত বলবেন না; তিনি হয়তো নিজেকে কর্মী বলতেও সংকোচ করবেন। […] তিনি এমন একজন যিনি ভাবেন যে কাগজে কলমে আইন সিদ্ধ হওয়া উচিত।
সরকারের প্রতিশ্রুতি
সিনোসিজম ব্লগ চেনের বাইরে পড়াশোনার বিষয়টি তুলে ধরেছেঃ
এই ফলাফল চাইনিজ সরকারের জন্য পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সর্বোত্তম এবং সম্ভবত পছন্দনীয়(নাকি পরিচালনার জন্য) উপায়, যেহেতু নির্বাসিত চাইনিজটিকে হয়রানি করা তাকে বিদেশে নির্বাসন করার চেয়ে অপ্রাসঙ্গিক।
মূলত, মার্কিন দূতাবাসকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে চেনের বিশ্বাসযোগ্যতায় ইতোমধ্যে হয়তো ফাটল ধরেছে। সরকারি মাধ্যমগুলো সামাজিক মাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে গিয়ে, তাকে আক্রমণ করেছে। দি গ্লোবাল টাইমস লিখেছেঃ
দুর্ভাগ্যবশত, সরকারের বিরুদ্ধে তীব্রভাবে গিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে, চেন চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কিছু পশ্চিমা শক্তি দ্বারা চালিত এক রাজনৈতিক চরে পরিণত হয়েছেন।
চেন, যাহোক, সম্ভবত সরকারের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করবেনঃ
আর কোন ধারণার দরকার নেই। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অনুমতি দিচ্ছে। তারা আগে কি করেছে তা এখন বাইরের বিষয়। যতক্ষণ তারা সঠিক সিদ্ধান্তে আসছে, আমাদের ততক্ষণ [উৎসাহ] দেয়া উচিত।
এখন চাইনিজ সরকার চেনকে ফিরে আসতে দেয় কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। নির্বাসিত চাইনিজ ইয়াং জিয়ানলি বলেন, “নির্বাসন স্বাধীনতা নয়। চেন এবং আমার জন্য, ফিরে আসাটাই সবচেয়ে বড় স্বাধীনতা যুদ্ধ।”

1 টি মন্তব্য