রাশিয়া: বরোদিনোর যুদ্ধ এখনো জীবন্ত

১৮১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বরোদিনোর যুদ্ধে ফ্রান্সের নেপোলিয়ান বোনাপার্ট, রাজকীয় রুশ বাহিনীর জেনারেল মিখাইল কুটুজভের মুখোমুখি হন। এই ঘটনার ২০০ বছর পর, লিও তলস্তয়ের মত লেখকদের (একই সাথে এই যুদ্ধক্ষেত্রে ঐতিহাসিক বিষয়বস্তুর সংরক্ষণ নিয়ে আইনগত জটিলতা) কাজের মধ্যে দিয়ে, বরোদিনো নামক যুদ্ধক্ষেত্র ক্রমাগত উদ্দীপ্ত আগ্রহ এবং উত্তেজনাপূর্ণ বিতর্ক তৈরী করছে।

সম্প্রতি রুনেট ইকো, যুদ্ধে নেপোলিয়ানের বিরুদ্ধে রাশিয়ার জয়ের ঐতিহাসিক এবং আধুনিক প্রেক্ষাপট পরীক্ষা করে দেখেছে। বরোদিনোর যুদ্ধের বিষয়ে নিবিড় এক মনোযোগ প্রদান করে এই পোস্টে আমরা এই বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাব।

প্রথম নেপোলিয়ান এবং বরোদিনো নামক উপত্যকা। চিত্রশিল্পী ভেসেলি ভেরেশ্চাগিন (১৮৭৯), পাবলিক ডোমেইন।, public domain.

নেপোলিয়ানের ব্লগ বরোদিনোর যুদ্ধের কৌশলগত গুরুত্বের বিষয়টি বর্ণনা করছে, যা নীচে প্রদান করা হল :

৭ সেপ্টেম্বর ১৮১২ সালে বরোদিনোর যুদ্ধ ( রুশ ভাষায়: Бородинская битва বরোদিনোস্কায়া বিটভা, ফরাসি ভাশাহায়: Bataille de la Moskowa, ব্যাটাইল দে লা মস্কোয়া) সংগঠিত হয়। সম্রাট নেপোলিয়ান যতগুলো একদিনের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, এটি ছিল সেগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে রক্তাক্ত । এই যুদ্ধে প্রায় ২৫০, ০০০ জন সেনানী অংশ নেয় এবং প্রায় ৭০,০০০ জন যোদ্ধা নিহত হয়। মঝাস্কাইয়া নামক ছোট্ট শহরের কাছের এক গ্রাম বরোদিনোতে, ফরাসী সম্রাট প্রথম নেপোলিয়ানের নেতৃত্বে সম্মিলিত ফরাসী বাহিনী জেনারেল মিখাইল কুটুজফের রাজকীয় রুশ বাহিনীর মুখোমুখি হয়। ঘটনাক্রমে ফরাসী বাহিনী মূল রুশ সেনাদলকে পাকড়াও করতে সক্ষম হয়, কিন্তু তারা রুশ সেনাদলকে ধ্বংস করতে অক্ষম হয়।

কোন লড়াই ছাড়াই এই যুদ্ধ শেষ হয়, কিন্তু কৌশলগত বিষয় বিবেচনা করলে, পরাজয় ডেকে আনতে পারে এই প্রেক্ষাপটে রুশ বাহিনী পরের দিন এলাকা থেকে সরে যায়। বরোদিনোর যুদ্ধ ছিল, ফরাসী সেনাদের চালানো হামলার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং এটা ছিল রাশিয়াতে নেপোলিয়ানের শেষ যুদ্ধ। যুদ্ধের ময়দান থেকে সরে গিয়ে রুশ সেনাদল সামরিক শক্তি সংরক্ষণ করে রাখতে সক্ষম হয় এবং এই ঘটনা নেপোলিয়ানকে রাশিয়া ত্যাগে বাধ্য করে।

ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট রাশিয়া-চ্যানেল.কমের ব্লগ বর্ণনা করছে কিভাবে বরোদিনোতে আজও যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে (একই সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাত থেকে তাকে রক্ষা করে):

রাশিয়ার মস্কো প্রশাসনিক এলাকার মঝাস্কাইয়া জেলায় বরোদিনো গ্রামটি অবস্থিত। অনিবার্য রুশ ইতিহাসে এই গ্রামটি বেশ বড় একটা ছাপ রেখেছে, কারণ এই গ্রামটি দুটি ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছে। ঐতিহাসিক বরোদিনো যুদ্ধক্ষেত্রটি এখন এক সুরক্ষিত এলাকা, যা এখানে সংগঠিত দুটি যুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংরক্ষিত। বড় আকারের দুটি যুদ্ধের প্রথমটি সংগঠিত হয়েছিল ১৮১২ সালে রাশিয়া এবং ফ্রান্সের মাঝে এবং দ্বিতীয়টি ১৯৪১ সালে সোভিয়েট ইউনিয়ন এবং জার্মানীর মাঝে। রাষ্ট্রীয় সুরক্ষিত এলাকার অংশ হিসেবে বরোদিনো যুদ্ধ এবং ইতিহাস বিষয়ক জাদুঘর এই দুটি লড়াইয়ের বিস্তারিত ঘটনাপঞ্জি তৈরী করেছে এবং প্রাক্তন এই যুদ্ধক্ষেত্রের এখানে ওখানে বিচ্ছিন্ন ভাবে নানান স্মৃতি চিহ্ন এবং স্থাপনা ছড়িয়ে আছে, যা আমাদের এই দুটি বিশেষ ঘটনার কথা এবং এই উভয় যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

রাশিয়ার লাইফ জার্নাল ব্লগার পালুচ ৬৭৫, জার দ্বিতীয় নিকোলাস এবং তার পরিবারে ছবি আমাদের সরবরাহ করছে [রুশ ভাষায়] যারা ১৯১২ সালে বরোদিনো যুদ্ধের শতবার্ষিকী উদযাপন করছিল, যার মধ্যে নীচের অনুষ্ঠানের ছবিও আছে:

Император Николай II, императрица Александра Федоровна с дочерьми и сопровождающие их лица проходят по перрону железнодорожного вокзала по прибытии на станцию Бородино для участия в торжествах. Второй справа — барон В. Б. Фредерикс. Бородино, 25 августа 1912 года.

সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাস, সম্রাজ্ঞী আলেকজান্দ্রা ফেদোরোভানা, এবং তাদের কন্যারা, অন্য সব সঙ্গীসহ বরোদিনোর একটি উৎসবে অংশ নেবার জন্য বরোদিনো স্টেশনের প্লাটফর্মে হাঁটছে। ডান থেকে দ্বিতীয় জন হচ্ছে– ব্যারন ভি. বি. ফ্রেড্রিক্সস। বরোদিনো ২৫ আগস্ট ১৯১২।

Крестный ход к памятнику Бородинской битвы во время торжеств в деревне Бородино, 25 августа 1912 года.

বরোদিনোর যুদ্ধের এক মূর্তি নিয়ে বের হওয়া এক শোভাযাত্রা, বরোদিনোর গ্রামে এক উৎসবের সময়, ২৫ আগস্ট ১৯১২ ।

২০০৮ সালের একটি পোস্টে, রাশিয়ান হিস্ট্রি ব্লগ ব্লগ বরোদিনো যুদ্ধের সম্মানে কিছু সাম্প্রতিক উদযাপনের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করছে:

সারাদেশের এবং বিদেশ থেকে বিশেষ করে ফ্রান্সের নাগরিকরা এই ঐতিহাসিক উৎসবে যোগ দিতে এসেছে। এই সমস্ত নাগরিকরা ইতিহাসের অত্যন্ত ভক্ত। এই বিশেষ উদযাপন ১৯৬২ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ১৯৯৫ সালে এটি ঐতিহাসিক সামরিক এক উৎসবের মর্যাদা লাভ করে। ২০০২ সালে এর ১৯০ তম বার্ষিকীতে ৩০০,০০০ জন নাগরিক উপস্থিত হয়েছিল।

এই বছর, এই যুদ্ধের ২০০তম বার্ষিকীর সম্মানে আয়োজিত উদযাপনের আশায়, রুনেট এবং এ্যাংলোফোন [ ফরাসী নাগরিক] উভয় ব্লগাররা মিলে, এখনকার ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণকারী এবং গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সৃষ্ট জটিলতার বিষয়ে সংবাদ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। মে ২০১১ রাশিয়া প্রোফাইল এত দুর যায় যে তারা এই ক্ষেত্রে “তৃতীয় বারোদিনো যুদ্ধের” ঘোষণা প্রদান করে। এপ্রিল ২০১২-এ ক্রেমলিন, বরোদিনো যুদ্ধক্ষেত্রের আশেপাশে গড়ে ওঠা অবৈধ হাউজিং কোম্পানীর বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে

বরোদিনোর সংস্কৃতির উত্তরাধিকারের বিষয়টি কেবল যুদ্ধক্ষেত্রের এলাকার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেনি…বরঞ্চ তা এখানকার শৈল্পিক বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

বরোদিনোর যুদ্ধ (একটি তৈলচিত্র-কে স্মরণ করা), নামক শিরোনামে লেখা একটি পোস্টে জাস্টিন সিস্টেমা ব্লগ মস্কোর নেপোলিয়ানের যুদ্ধ বিষয়ক জাদুঘর-এ রাখা এক প্রদর্শনীর বর্ণনা প্রদান করেছে:

এটা একটা অসাধারন তৈলচিত্র, এখানে যুদ্ধের পুঙ্খানুপুঙ্খ দৃশ্য শিল্পীর নিপুন তুলিতে ফুটে উঠেছে। এতে আপনারা সবকিছু দেখতে পাবেন। শত শত সৈনিক ঘোড়ায় চড়ে তলোয়ার হাতে একে অপরের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। উভয় পক্ষের কমরেডরা তাদের বন্দুকে গুলি ভরছে এবং একে অপরের দিকে তাক করে তা ছুঁড়ছে। বিপক্ষ সেনাদলের দিকে লক্ষ্য করে ছোড়া কামানের গোলার ধোয়ায় যুদ্ধক্ষেত্র আচ্ছন্ন হয়ে আছে। এ ছাড়াও একটি বিশাল দেওয়াল চিত্র (মুরাল) রয়েছে, এই শিল্পকর্মের ধুলোর আস্তরণের মাঝে ছোট ছোট সব কুড়ে তৈরী করা হয়েছে, যাতে যুদ্ধের ঘটনাবলি প্রতিস্থাপন করা যায়। এমনকি সেখানে একটি রেকর্ডিং যন্ত্র আছে, যা যুদ্ধের বাজনা বাজাবে। ট্রাম্পেট-এর ধ্বনি, হামলার ঘোষণা, যার সাথে রয়েছে ধাবমান ঘোড়ার খুরের ধ্বনি, কামান এবং বন্দুকের আওয়াজ, এই আওয়াজের প্রভার অবিশ্বাস্য রকমের চিত্তাকর্ষক।

সবশেষে, বরোদিনোর ঐতিহাসিক গুরুত্বের সারমর্ম, হিস্টোরিকাল এন্ড রিজেন্সি রোমান্স ইউকে ব্লগ স্বয়ং নেপোলিয়ান বোনাপার্টের একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছে:

যদিও রুশ সেনারা সাময়িকভাবে পরাজিত হয়েছিল, কিন্তু তাদের সম্পূর্ণ পরাস্ত করা যায়নি এবং পরে এর জবাবে নেপোলিয়ান বলেছিলেন, “ফরাসীরা তাদেরকে প্রমাণ করে যে তারা জয়লাভের যোগ্য ছিল এবং রুশ সেনার সঠিকভাবে নিজেদেরকে অদম্য বলে দাবী করতে পারে। “

 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .