ক্যাম্বোডিয়ার কারাগারগুলো এখন জনাকীর্ণ এবং ক্রমশ পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে মানবাধিকার গ্রুপ লিকাডহোর প্রকাশিত এক সংবাদে এই তথ্য জানা যায়:
ক্যাম্বোডিয়ার কারাগারগুলো এখন অস্বাভাবিক পরিমাণ বন্দীর ভারে ভারাক্রান্ত। এখন থেকে মাত্র সাত বছর আগে, লিকাডহো যে ১৮টি কারাগার পর্যবেক্ষণ করত, তখনই সেগুলোর সবগুলোর ধারণ ক্ষমতার প্রায় ১০০ ভাগ পুর্ণ হয়ে গিয়েছিল। আর এখন সে গুলোতে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় ১৮০ শতাংশ বেশী বন্দী অবস্থান করছে। এর ফলে ক্যাম্বোডিয়ার জেলখানা বিশ্বের সবচেয়ে বেশী বন্দী অধ্যুষিত ২৫ টি জেলখানাসমূহের মধ্যে অন্যতম একটিতে পরিণত হয়েছে।
ক্যাম্বোডিয়ার কোন কোন জেলখানায় বন্দীর সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশী এই বিষয়টি চিহ্নিত করার জন্য এই গ্রুপ একটি মানচিত্রের সৃষ্টি করেছে:
এই গ্রুপ বেশ কিছু তথ্য উদ্ধার করেছে যা জেলখানায় অতিরিক্ত বন্দী রাখার ক্ষেত্রে যে সমস্যা তা তুলে ধরতে সাহায্য করেছে:
এই রিপোর্টে তিনটি নতুন ক্ষেত্রে চিন্তা ব্যক্ত করা হয়েছে, লিকডহো যা বিগত বছরগুলোতে সঙ্কলিত করেছে। সেই সমস্ত ব্যক্তিদের জেলে ঢোকানোর অভ্যাস-যারা তাদের অপরাধের জন্য ধার্য করা জরিমানা প্রদান করে না বা করতে প্রদান করতে অসমর্থ; এদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক এক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে বিচারকালীন সময়ের বন্দী্দের স্থানীয় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয় যাতে কারগারের বাড়তি বন্দীর চাপ কমানো যায়। এখানে সেই সমস্ত অপরাধের জন্য কারগারে পাঠানোর মত ব্যবস্থা গ্রহণ, যে সমস্ত কাজ তুলনামূলক কম অপরাধ যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়, যা তাড়নায় কেউ করতে বাধ্য হয়। পরের বিষয়টি বেশ কিছু ঘটনার উপর পরিচালিত গবেষণার দ্বারা প্রমাণিত, যেমন এর মধ্যে একটি ঘটনা রয়েছে, যে ঘটনায় একজন ব্যক্তিকে একটি মুরগী চুরির দায়ে এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
অ্যাংকর পোস্ট একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করছে যেখানে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে যে কারগারের উপর বন্দীর চাপ কমানোর জন্য ব্যবহারিক সংস্কার হিসেবে শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ড না দেবার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।:
আইনের ধারায় কারাদণ্ড ব্যাতিরকে- এর বিকল্প যত শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে আমি সেগুলো ভীষন ভাবে সমর্থন করি। এই সমস্ত শাস্তি যাতে বাস্তবসম্মত এবং কার্যকর হয় তার জন্য আরজিসি (ক্যাম্বোডিয়ার রাজকীয় সরকার) আদালত, পুলিশ এবং সমাজ সেবা কার্যক্রম অফিস সমূহকে প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করবে। আর এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ এক পরিষ্কার প্রক্রিয়া স্থাপন করবে এবং শাস্ত হিসেবে কারাদণ্ড না পাওয়া অপরাধীদের উপর নজর রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
কারাদণ্ড প্রদান না করে শাস্তি দেওয়া, সেটি যেখানে যে রকম হওয়া উচিত, সে ভাবে প্রদান করা দরকার, এতে ক্যাম্বোডিয়ার কারাগারগুলো যে বন্দীর চাপে স্ফীত আকার ধারণ করেছে তার একটা গ্রহণ যোগ্য সমাধান করা সম্ভব হবে; যা ছোটখাট অপরাধীর সাজা প্রদানে এবং জেলখানায় অপরাধীর সংখ্যা কমিয়ে আনার এক কার্যকরী সমাধান হতে পারে।
সরকার জেলখানার পরিবেশ উন্নত করার লক্ষ্যে কিছু নীতি সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে। এদিকে এই প্রবন্ধে সংবাদ প্রদান করা হয়েছে যে বন্দীর চাপ কমানোর জন্য একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলকে করাগারে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
কারাগারের ব্লগ
গত মাসে প্রে সারি কারাগারে এক বিদেশী কারাবন্দীর ব্লগ অভিযোগ নামা ক্যাম্বোডিয়ার সাইবার জগতে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। ডেরেক স্টাউট উল্লেখ করেছে যে “ লেখকের সাহসী এবং জীবন ঘনিষ্ঠ ভাষার ব্যবহার আমাদের আরভিন ওয়েলেশে উপন্যাসের এক চরিত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়”।
প্রে সারির প্রথম ব্লগার, সাইবার জগতে দ্রুত আগ্রহের সাথে তার লেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকা পাঠক লাভ করেছে। তবে অনেকে এই ব্লগের বিশ্বাসযোগ্যতার ব্যাপারে সন্দিহান।
গত বুধবার প্রথম পোস্ট প্রকাশিত হয়। সপ্তাহান্তে এটা টুইটারে যুক্ত হয় এবং ক্যাম্বোডিয়ার ইংরেজী -ভাষী ইন্টারনেট ফোরামে যুক্ত হয়।
এই ব্লগের লেখক দাবী করেছে যে সে এই কুখ্যাত জেলের বন্দী যে কিনা তার বিচারের শুনানীর জন্য অপেক্ষা করছে।
এই লেখার শিরোনাম “এক বর্গ মিটারের এক জীবন”। এই লেখায় জনাকীর্ণ এই কুখ্যাত প্রে সার জেলের এক কামরার ভেতরের পরিবেশের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। লেখকের সাহসী এবং জীবন ঘনিষ্ঠ ভাষার ব্যবহার আমাদের আরভিন ওয়েলেশে উপন্যাসের এক চরিত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়”।
কারাগার ব্লগ “ এক বর্গ মিটারে এক জীবন” ইতোমধ্যে ইন্টারনেট থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে এলটিও ক্যাম্বোডিয়া এর কয়েকটি প্রবন্ধ সংগ্রহ করে রাখে এবং সেগুলো তারা অনলাইনে পোস্ট করে :
নিঃসন্দেহে বলা যায় এখানে এই ফোন সংযোগ এবং ইন্টারনেটের সংযোগ পাওয়া, প্রধান প্রয়োজনীয় বিষয়। বাইরের জীবনকে অনুসরণ করতে সক্ষম হওয়া, তথ্য পাওয়া এবং সক্রিয়ভাবে কাজে যুক্ত থাকা, নেট সংযোগ এ সব পার্থক্য গড়ে দেয়!
অবৈধ যন্ত্র পাচার করার উপায় বের করা যেমন এই রকম একটা যন্ত্র, এটা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ এবং এর জন্য অনেক চেষ্টা করতে হয়। ভুল হয়ে যায় আবার তা ঠিক করতে হয়, টাকা এবং সময়ের অপচয় এর একটা অংশ।
প্রথম সপ্তাহে আমি খানিকটা অসুস্থ ছিলাম। ঠিক মত খেতে পারতাম না এবং বেশীর ভাগ সময় ক্ষুধার্ত ও বিরক্ত থাকতাম। যখন এখানে এনজিও-এখানে এসে উপস্থিত হল, তখন আমি বেশ কয়েকবার হাসপাতলে ভর্তি হবার চেষ্টা করি, যা একেবারে অর্থহীন ঘটনায় পরিণত হয়, তারা এখানকার ডাক্তারদের মতই কাজের না।
আমার কারাসঙ্গী আমাকে হাসাপাতালে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করতে সমর্থ হয়। সেখানে তারা আমাকে কিছু তরল ওষুধ প্রদান করে এবং কারা হাসপাতালে একটি কক্ষে ফেলে রাখে।
সেখানে বন্দীরা হচ্ছে ডাক্তার এবং সৌভাগ্যক্রমে আমার ভালোভাবে যত্ন নেওয়া হয়েছে। আর এই কাজটি করেছে আমার মত এক বন্দী। নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে সেখানকার অনেক কিছু দেখছে।