২০১১ সালের জুন মাস থেকে ইউক্রেইনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং অরেঞ্জ রেভুল্যুশন (কমলা বিপ্লব) অন্যতম এক নেত্রী ইউলিয়া তিমোশেঙ্কো ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে রাজধানী কিয়েভে বিচারাধীন রয়েছেন।
তদন্ত অনুযায়ী, রাশিয়ার সাথে গ্যাস ক্রয়ের ক্ষেত্রে তিমোশেঙ্কো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে যে চুক্তি করেছিলেন, তাতে তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশী দামে গ্যাস কিনেছেন, যা ইউক্রেইনের অর্থনীতির জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হয়েছে। এই অপরাধে তার দশ বছরের সাজা হতে পারে।
বিচারের সময় ইউক্রেইন এবং এর বাইরের নাগরিকরা সক্রিয়ভাবে এই মামলা নিয়ে আলোচনা করেছে। ফরেন নোটস-এর লেভকো আবিষ্কার যে, এই অভিযোগ প্রমাণ করা অসম্ভব:
“ ২০০৯ সালে রুশ প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে জ্বালানী সম্পর্কিত চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ইউক্রেনের ১৯০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতির দায়ে তিমোশেঙ্কোকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।”
কি ভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে যে এই পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে?
পুতিন বা গাজপ্রম কি কখনো স্বীকার করেছে যে, ২০০৯ সালে নাফতোহাজ ইউক্রেনী নামক ইউক্রেনের প্রতিষ্ঠানের কাছে জ্বালানী তেলে বিক্রির ক্ষেত্রে যে ১৯০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তারা তার চেয়ে কমে গ্যাস বিক্রি করতে সম্মত হয়েছিলেন? মনে হয় না…
অপরাধ প্রমাণিত হলে তিমোশেঙ্কোর দশ বছরের জন্য জেল হতে পারে, ২০১২ সালের সাংসদীয় নির্বাচন ও ২০১৫ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে এই বিচারের স্পষ্টতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। ওপেনডেমেক্রেসি.নেট-এ নাতালি সেডলস্টকা লিখেছেন :
“১৬ মাস আগে প্রেসিডেন্ট ইয়াঙ্কোভিচ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিরোধী দলকে উৎপাটনের চেষ্টা চলছে। ইয়োশেঙ্কোভিচের সদস্যদের বিরুদ্ধেও নানাবিধ অপরাধের মামলা হয়েছে। কিন্তু, এটা কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইয়াঙ্কোভিচের যুদ্ধ? নাকি, এই মামলা গুলো কি রাজনৈতিকভাবে চালিত হচ্ছে?”
সবাই বুঝতে পারছে যে ভিক্টর ইয়াঙ্কোভিচের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা অর্জন। তিনি সংসদে ৪৫০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ২২৬টি আসন তার দলের নেতাদের জন্য চান। আর এর মাধ্যমে তিনি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা চান। এটাই ইয়াঙ্কোভিচের সব সঙ্গীদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য আইন বিভাগ এটাকে মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আর অপরাধীরা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, প্রথম বর্ষে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে ইয়াঙ্কোভিচের কার্যালয়ের হিমবাহ-সদৃশ নিপীড়নের ব্যাখ্যা এটাই। নির্বাচন-পূর্ব কর্মসূচী ঘোষণার পূর্বেই তিমোশেঙ্কোর দলের বিরুদ্ধে সকল প্রকার তদন্ত অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আদালতের ঘটনাবলিও দেখে মনে হয়েছে যে এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত বিচার ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রথম দিন মোকদ্দমার শুনানী যে কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তা আকারে ৪০ বর্গফুটের বেশি ছিল না, অথচ সেখানে একশর বেশি লোক উপস্থিত ছিল। ইউক্রেনে অবস্থিত ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রধান হোসে ম্যানুয়েল পিন্টো টেক্সেইরা এই বিচার কার্যক্রমকে “অমানবিক” [ইউক্রেনীয় ভাষায়] এবং তিমোশেঙ্কোর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে তিনি সোভিয়েত আমলের ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিচারের সাথে তুলনা করেন।
বিষয়টিকে আরো খারাপ করতে, ৬ জুলাই বিচারক কিয়েরেভ, তিমোশেঙ্কো ও তার সমর্থকদের আদেশ অমান্য করার জন্য আদালত ত্যাগের নির্দেশ দেন। ইউক্রেইনিয়ানান ব্লগের তারাস, এভাবে তা বর্ণনা করেছেন:
“বিচারের কৌতুকটি শেষ পর্যন্ত শক্তি প্রয়োগের প্রদর্শনীতে পরিণত হওয়ার পরে, বিচারক যথারীতি আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ সহ্য করতে পারলেন না। তিমোশেঙ্কো এবং সোভিয়েত আমলের একজন রাজনৈতিক কারাবন্দী এবং বর্তমান সংসদ সদস্য মিখাইলো কোসিভ (বিওয়াইইউটি)-সহ মোট ৭৭ জন সমর্থকের উপর খড়গ নেমে আসে।”
দৃশ্যতঃ সাংসদদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রথমে শক্তি প্রয়োগ করতে অস্বীকৃতি জানালেও পরে তিমোশেঙ্কোর সমর্থকদের সরিয়ে দেয়ার ও সাংবাদিকদের বের করে দেয়ার জন্য বারকুট নামক বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীকে ডাকা হয়েছিল (এখানে তার ভিডিও দেখুন)। আদালতে উপস্থিত বিরোধীদলীয় সাংসদ আন্দ্রেই শেভচেঙ্কো বারকুট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যে বিশেষ আচরণ পেয়েছেন, তা টুইটারে [ইউক্রেনীয় ভাষায়] বর্ণনা করেছেন:
Вивихнули руку, здається. Не звернув увагу зразу
ইউলিয়া তিমোশেঙ্কোর ভাষ্য অনুযায়ী, তার আইনজীবীকে ৫০০০ পৃষ্ঠার এই মামলার সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে জন্য মাত্র দেড় দিন সময় দেওয়া হয় [ইউক্রেনীয় ভাষায়] । যার জন্য তিনি পর পর তিন দিন, ২-৩ ঘন্টা ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছেন, যা শুনানীতে উল্লেখ করা হয়েছিল। ৮ জুলাই তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
সব কিছুর ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে, এসবের মূলে হল দেশে-বিদেশে তিমোশেঙ্কোর জনপ্রিয়তা। ইউক্রেনের অরেঞ্জ ব্লুজ-এর আলেক্সান্ডার মতিল একে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে:
“যে কোন কিছুর জন্য আপনি আপনার স্পষ্টভাষী, সচ্ছল, আকর্ষণীয়, ধনী, উদ্ধত ও রূপবতী প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে সর্বশেষ যা করতে পারেন, তা হল, তাকে বিচারে ফেলে দেয়া। এবং আপনার সমর্থক ও প্রমাণ অবশ্যই বিতর্কিত হবে না। এক শক্তিধর বিরোধীর বিরুদ্ধে একটি খারাপ মামলা তিমোশেঙ্কোকে আন্তর্জাতিক তারকায় পরিণত করেছে এবং যেসব ইউরোপীয় দেশে ইয়াঙ্কোভিচের সুসম্পর্ক আছে, সেসব দেশে বিক্ষোভ হয়েছে।
তিমোশেঙ্কোর জনপ্রিয়তা যে বাড়ছে টুইটারেও তার প্রমাণ রয়েছে। আদালতের ঘটনাবলি বিষয়ে যখন তিনি নিজের ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্টটি খুললেন এবং এই ঘটনার উপর যখন সরাসরি লিখা শুরু করলেন, তখনই তার অনুসারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে ২৩,৫০১-এ এসে দাঁড়িয়েছে। বিচারক এই কার্যক্রম যাতে টিভিতে সরাসরি প্রচার না হয়, বিচারক বুধবারে তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করায়, এখন তার অ্যাকাউন্টের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।
টুইটার ব্যবহারকারী স্লাভিক (@স্লাভিক_ক্রায়েভেস্ক), তিমোশেঙ্কোর প্রতি [ইউক্রেনীয় ভাষায়] তার বার্তায় একটি জনপ্রিয় উপসংহার টেনেছেন:
@YuliaTymoshenko: Незвиртайте уваги на той тиск який чинить на вас янукович, тільки на твіттері ЗА ВАС майже 23,500 тис. Громадян