দেশটির জনপ্রিয় বিরোধী আন্দোলন যাতে আরো তীব্র না হয়, তার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা হিসেবে মুবারক সরকার যখন এই সপ্তাহে বাইরের বিশ্বের মানুষর সাথে মিশরের যোগাযোগ বন্ধ করার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে, তখন গণ প্রতিরোধের ভূমিকার ক্ষেত্রে সামাজিক প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউব মিশর, তিউনিশিয়া এবং এর বাইরের অনেক এলাকায় একটিভিস্টদের ক্ষমতাশালী করেছে।
ভিয়েতনামে, সরকার কি ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে (আইএসপি) ফেসবুক বন্ধ করার আদেশ দিয়ে অনিচ্ছাকৃত ভাবে সাধারণের চিন্তাকে অমান্য করেছে? এদিকে এর বিরুদ্ধে ভিয়েতনামে ক্রমশ প্রতিবাদ আন্দোলন বাড়ছে, অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কয়েক হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, যারা অবস্থান ধর্মঘট দিয়ে আন্দোলন শুরু করে অথবা তারা বক্সাইটের খনির বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রদান করার দরখাস্তে সমর্থন করে।
যখন ডিসেম্বর, ২০১০-এ ফেসবুকের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ নতুন করে আরো বাড়ানো হয়, এই ঘটনায় একই সাথে অসংখ্য ভিয়েতনামী নেট নাগরিক একত্রিত হয়।
ফেসবুকের একটি গ্রুপ নিজেদের “ভিয়েতনামের আইএসপি দ্বারা ফেসবুক বন্ধ করার প্রতিবাদে লক্ষ মানুষের স্বাক্ষর” নামে পরিচয় দিচ্ছে। ইতোমধ্যে এই গ্রুপ প্রায় ৫০,০০০ সদস্য সংগ্রহ করেছে। এই গ্রুপ ঘোষণা দিচ্ছে:
“প্রত্যেকের নিজস্ব সামাজিক পছন্দ অনুযায়ি সামাজিক নেটওয়ার্ক বেছে নেবার অধিকার রয়েছে যা তারা ব্যবহার করতে চায়। ভিয়েতনামের ফেসবুক কমিউনিটিকে সমর্থন করার জন্য আমাদের সাথে যোগ দিন”।
ফেসবুকে ৪৫০০ সদস্যের আরেকটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। তাদের নিজেদের নাম দিয়েছে “যদি তোমরা বয়োজ্যেষ্ঠরা ফেসবুক বন্ধ করে দাও, তাহলে আমরা তরুণরা নেটের দেওয়াল বেয়ে উঠবো এবং সেখানে প্রবেশ করার জন্য এক ফাটল সৃষ্টি করব”। এই গ্রুপের আলোচনা বিভাগে যে সব মন্তব্য পোষ্ট করা হয়েছে, তাতে ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে এবং এই সব মন্তব্যের মধ্যে কয়েকটি পরামর্শ প্রদান করছে, কি ভাবে এই নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া সম্ভব।
লসজি এথেনফোর্ড ছদ্মনামের এক স্থানীয় নাগরিক এই নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে, তার মতে:
“ফেসবুক বন্ধ করে রাখুন, আর লোকজন এই নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে একে ব্যবহার করার আনন্দ লাভ করতে থাকুক”
কৌতুহল জনক বিষয় হচ্ছে, একটি গ্রুপ নিজেদের “ফেসবুক বন্ধের বিরুদ্ধ ১০ লক্ষ লোকের স্বাক্ষর সম্বলিত এক সংগঠন” নামে অভিহিত করছে। তারা তাদের নামের সাথে “সংগঠন” শব্দটি যুক্ত করছে। এই বিষয়টি ভিয়েতনামের সাইবার জগতের কলঙ্ক এবং এই সমাজকে নেটের বাইরে রেখে দিচ্ছে, যেখানে সংগঠনের স্বাধীনতা এখনো কঠোরভাবে প্রদান করা হয় না। এই ওয়েব সংগঠনের সম্প্রতি ৩৫,০০০ জন সদস্য হয়েছে। তারা উৎসাহ প্রদান করছে যে, “যদি সামগ্রিকভাবে ফেসবুক বন্ধ থাকে, তাহলে আমরা সবাইকে আহ্বান জানাবো, যেন তারা সরকার পরিচালিত সামাজিক প্রচার মাধ্যম সমূহ ব্যবহার না করে”
ভিয়েতনামের ফেসবুকের প্রোফাইলে ছবি রয়েছে এমন কয়েকজন ব্যক্তির উপর অনেকটা তাড়াহুড়া করে করা এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সেখানে তরুণরাই বেশি ফেসবুক ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে ভিয়েতনামের তরুণরা সাধারণ কোন বিস্ময়ের জন্ম দেয়নি এবং সামাজিক নেটওয়ার্কের সাথে তরুণরাই যুক্ত থাকে।
ভিয়েতনামের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সাধারণত প্রচুর বুদ্ধিদীপ্ত কার্টুন এবং গ্রাফিক্স বা ছবি তৈরি করে থাকে। অনেকে তাদের নিজস্ব প্রোফাইলের ছবিতে ফেসবুক প্রতিবাদ সম্পর্কিত চিত্র প্রদর্শন করে থাকে।
ত্রিনহ নগুয়েন, নো ফায়ারওয়াল ব্লগের সম্পাদক। এই সাইটটি, নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে কোন কিছু ব্যবহার করার পদ্ধতি বিষয়ে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান করে থাকে। নগুয়েন-এর মতে:
“ভিয়েতনামী কর্তৃপক্ষ সামাজিক নেটওয়ার্কসমূহের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, নিজেদের ব্যর্থতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে যাচ্ছে। এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা কেবল এক ধরনের নতুন রাজনৈতিক প্রজন্ম তৈরি করবে, যারা হবে ভিন্নমতাবলম্বী। অনেক নাগরিক যারা বিশ্বাস করে যে, তাদের বন্ধুদের সাথে ফেসবুকে চ্যাট করার অধিকার রয়েছে, তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তে সত্যিই হতাশ এবং তারা এই ফায়ারওয়ালের নিষেধাজ্ঞাকে কাটিয়ে উঠার জন্য যা করা দরকার তাই করবে”।
নভেম্বর, ২০০৯-এ, ভিয়েতনামে প্রথমবারের মত ফেসবুকের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তার ঠিক কিছুদিনের মধ্যে একটি ভিডিও তৈরি করা হয়, যা ইউটিউবে ছাড়া হয়। এই ভিডিওতে ভিয়েতনামী নাগরিকদের উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে, যেন তারা “ফেসবুককে নেটে ফিরিয়ে আনার” জন্য তাদের আইএসপি প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছে দাবি জানাতে থাকে। এই ভিডিওতে বিদেশে বাস করা ভিয়েতনামী সেলিব্রেটিদের প্রদর্শন করা হয়েছে। এটি দ্রুত সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
ফেসবুকে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের ক্ষেত্রে, মনে হচ্ছে ভিয়েতনামের সরকার অনিশ্চিত ঘটনা প্রবাহকে নিশ্চিত করেছে। সরকারে এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে দশ সহস্র ভিয়েতনামী এক উন্মুক্ত স্থানে জড়ো হয়েছিল ।