মেক্সিকো: মারা যাচ্ছে লরমা নামের নদীটি

লরমা সান্তিয়াগো নদী (সাধারণত এই নদী রিও লরমা নামে পরিচিত) মেক্সিকোর দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। একই সাথে এই নদী দেশটির রাজধানী এবং কেন্দ্রীয় এলাকার সুপেয় পানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৭ ও ১৮ শতকে নদীর পাড়ে বিশাল হেসিয়েনডাস বা চাষের জমি, খামার, বাড়ি, কারখানা, খনি স্থাপন করা হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে বর্তমানে নদীটি ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে।

বেশ কিছু দুষণের উৎসের কারণে (যেমন কারখানা) নদীটি ভয়াবহভাবে দুষিত হয়েছে। ফলে, নদীর পূর্বের অবস্থা ফিরিয়ে আনা ও তাকে পরিষ্কার রাখার জন্য কোটি কোটি টাকা (মিলিয়ন ডলার) খরচ করা হয়েছে, কিন্তু তা খুব একটা কাজে আসেনি।

ব্লগ এজেনডাহিডালগুয়েনসে [স্প্যানিশ ভাষায়], মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতি ফিলিপে কালডেরন এর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করেছে, তিনি একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এই সব বিষয়ের মধ্যে জলধারা পরিষ্কার রাখা অন্যতম এক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

Schuldes Dávila recordó que desde el 26 de marzo del presente año, el Lic. Felipe Calderón Hinojosa, hizo un llamado a todos los actores a involucrarse en el uso, manejo y preservación del recurso agua, para que juntos construyamos esta Agenda del Agua, que sin duda marcara la historia de nuestro país, mencionó que es necesario alcanzar un México limpio, donde el 100 por ciento de las aguas residuales sean tratadas. Un México donde toda la población,  disponga de agua potable. Un México responsable con el medio ambiente, que preserve el equilibrio, no sólo de los acuíferos, sino de sistemas y microsistemas ambientales completos.

সুলডেন ডাভিলা এ বছরের ২৬ মার্চের দিনটির কথা স্মরণ করেছেন, সেদিন ফিলিপে কালডেরন হিনোজোসা সকল অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পানির উৎসের ব্যবহার, ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান এবং একসাথে মিলে পানি বিষয়ক এক কর্যক্রম তৈরির কথা বলেন। নিশ্চিতভাবে বলা যায় আমাদের দেশের জন্য এটি এক ইতিহাস হবে। এছাড়াও, তিনি উল্লেখ করেন যে আমাদের পরিবেশগতভাবে পরিষ্কার এক মেক্সিকোকে তৈরি করা প্রয়োজন, যেখানে শত ভাগ ব্যবহৃত নষ্ট হয়ে যাওয়া পানিকে (গৃহস্থালী, ইত্যাদি কাজে নষ্ট হয়ে যাওয়া পানি বা ওয়েস্ট ওয়াটার) পুনরায় পরিশোধিত করা হবে। এমন এক মেক্সিকোকে আমাদের নির্মাণ করতে হবে যেখানে সমগ্র জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানির উপর অধিকার থাকবে, এমন এক মেক্সিকো যা পরিবেশ বিষয়ে দায়িত্বশীল হবে, যেখানে আমরা কেবল ভারসাম্যপূর্ণভাবে পানির প্রাকৃতিক উৎস সংরক্ষণ করব না, তার সাথে পুরো পরিবেশগত পদ্ধতি এবং মাইক্রোসিস্টেম বা ক্ষুদ্র সব যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনাকে সংরক্ষণ করব।
Image by Flickr user Gobierno Federal, used under an Attribution-NonCommercial 2.0 Generic Creaative Commons license

পানি নিয়ে কর্মসূচি: ২০৩০ সালকে উপস্থাপন নামক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ফিলপে কালডেরন। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী গবিয়েরনো ফেডারেলের। এট্রিবিউশন-ননকর্মাশিয়ার ২.০ জেনেরিক ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এর অধীনে ব্যবহার করা হয়েছে।


দুষণ

প্যাট্রিসিয়া ভেগা ভিলাভিসিয়েনসিও-এর লেখা এবং আইএসপি সংবাদ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত “মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া নদী অববাহিকার জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ নেই” নামক প্রবন্ধ অনুসারে নদীর পানি পরিষ্কার করার জন্য বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, কিন্তু তার খুব সামান্যই কাজে এসেছে:

গত ১৬ বছর মেক্সিকো রাজ্যের স্থানীয় সরকার যা মেক্সিকো সিটির কেন্দ্রীয় জেলার সীমানায় অবস্থিত, তারা নষ্ট হয়ে যাওয়া নদীর পানি পরিশোধনের জন্য ৭১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে এবং রাজ্য জুড়ে বয়ে যাওয়া ১২৫ কিলোমিটার গতিপথের মাত্র ২৭ শতাংশ পরিষ্কার করতে পেরেছে।

স্থানীয় অধিবাসীরা ভালো করেই জানে যে নদীর পানি দূষিত হয়ে গেছে। কারণ সেই এলাকাতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং কারখানা গড়ে উঠেছে ( এ সবের মধ্যে রয়েছে মাংস, দুগ্ধজাত দ্রব্য, পানীয়, মণ্ড, এবং কাগজ, চামড়াজাত সামগ্রী, পেট্রোলিয়ামজাত রাসায়নিক উপাদান এবং রাসায়নিক পদার্থ তৈরির কারখানা) এবং এইসব কারখানার বর্জ্য দ্রব্য নদীতে এসে পড়ে। প্রবন্ধের পরবর্তী অংশে ভেগা ভিলাভিসেনসিও বলে চলেছেন:

দৃশ্যত মনে হচ্ছে লরমা নদীকে দুষিত করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা বন্ধের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পরিবেশবিদরা হিসেব করে দেখেছেন যে এই নদীর ৯০ ভাগই দুষিত হয়েছে এবং তারা ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, যদি পরিকল্পনা কৌশল না পাল্টানো হয়, তাহলে কোন পরিশোধন অভিযানে পানিকে দূষণ মুক্ত করা সম্ভব না।

জিম এন্ড কারোল’স মেক্সিকো এ্যাডভেঞ্চার ব্যাখ্যা করছে:

অনেক বছর ধরে, উজান থেকে বয়ে আসা লরমা নদীর পানি কৃষিকাজের কারণে নষ্ট হয়েছে। এছাড়া কারখানা থেকে আসা শিল্প বর্জ্য নদীর স্রোতের মাধ্যমে তার বুকে এসে জমা হচ্ছে, একই সাথে কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদানও এই নদীতে এসে পড়ছে।

ব্লগ কাজাডোর ডে লা ভেরডাড [স্প্যানিশ ভাষায়] (সত্য শিকারী) দুটি ভিডিও পোস্ট করেছে, যেগুলো নদী দুষণের প্রভাব প্রদর্শন করছে।

ঘটনার প্রভাব

লরমা নদী দুষণের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তার মূল্য অনেক, এমনকি তা অপূরণীয়। বেশ কিছু সংবাদে প্রকাশ হয়েছে, যে সমস্ত লোকেরা এই নদীর কাছে বাস করা তারা এই দুষণের ফলে শারীরিক ভাবে আক্রান্ত হয়েছে।

২০০৭ সালে ব্লগ টুলুকা গ্রিংগার ব্লগার ক্রিস্টিন টাইলর নামক ভদ্রমহিলা এই নদীর সামনে দাঁড়াবার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন:

এর আগে যতবার আমি মেক্সিকো সিটি পার হয়ে গেছি, ততবার আমি সেই গন্ধটি পেয়েছি। এটা মূলত রাতে এই বিশ্রী গন্ধ তীব্র হয়, যখন কারখানাগুলো চোখের পলকে পরিত্যক্ত বর্জ্য নদীতে নিক্ষেপ করে। নেসলের চকলেটের পাউডার এই দুষণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণ অপরাধী। এখন এসব? সম্প্রতি আমি দিনের বেলা সেখানে গিয়েছিলাম। দশ মিনিটের মধ্যে আমার কণ্ঠনালীর পেছনে এক বিচিত্র জ্বলন অনুভব করলাম। এটা কোন কৌতুক নয়। কয়েক ঘন্টা পর যখন আমি এলাকাটি ত্যাগ করলাম, তখন আমার চোখ জ্বালা করছিল। পানিতে কোন কিছু ছিল না, সেখানকার কোন প্রাণী আর জীবিত নেই, অন্তত কয়েক প্রকার পরিবর্তিত কিছু প্রাণী তারা দুর্গন্ধময় পানির মধ্যে টিকে থাকতে সমর্থ হয়েছে। যে পানির স্তর আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, শেষ বারের যখন আমি সেখানে গিয়েছিলাম তখন তা তৃতীয় মাত্রার পুড়ে যাওয়ার থেকে শরীরের যে রকম জ্বলন হয়, সে রকম জ্বলন সৃষ্টি করেছিল।

পেরিওডিকা এল সুর [স্প্যানিশ ভাষায়] (সাউথ জার্নাল)-এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যে, লরমা নদীর দূষণের ফলে “ক্যান্সার রোগে মৃত্যুর পরিমাণ উল্লেখ যোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে”।

মিচোয়াকান থেকে প্রকাশিত অন্য এক সংবাদপত্র, লা জরনাডায় [স্প্যানিশ ভাষায়] লেখক সেলিক মেনডোজা লিখেছে:

Varios niños que viven en la cuenca, han presentado diversos cánceres como leucemia a consecuencia de la contaminación del afluente.

এখানকার শিশুদের মধ্যে এক ধরনের ক্যান্সার (লিউকেমিয়া) দেখা যাচ্ছে, যা নদী দুষণের কারণে ঘটছে । আর এই নদী দূষিত হচ্ছে সেখানে অবাধে বর্জ্য ফেলার কারণে।

গবেষক জেফ কোনান্ট-এক প্রবন্ধ লিখেছেন যা আর্থ আইল্যান্ড জার্নাল-এ [স্প্যানিশ ভাষায়] প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি এক বেদনাদায়ক ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন:

জানুয়ারী ২০০৮-এ মিগুয়েল এনজেল লোপেজ রোচা নামের আট বছরের এক বালক সান্তিয়াগো নদীর কাছে এল সালটো নামের এক ঝর্ণায় পড়ে যায়। পরে দ্রুত বালকটিকে উদ্ধার করা হয়। দুইদিন পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। উনিশ দিন পড়ে সে মারা যায়। মেডিকেল রিপোর্ট জানা যায় সেপ্টিসিমার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। সাধারণ রক্ত যদি দূষিত হয়, তবে তাকে সেপ্টিসিমা বলা হয়। অন্য এক শবব্যবচ্ছেদ পরীক্ষা নির্দেশ করে যে তার শরীরে ভারী ধাতব বিষ ঢুকে গিয়েছিল। মিগুয়েল এনজেলের দেহে স্বাভাবিকের চেয়ে দশগুণ বেশী মাত্রায় ভয়াবহ আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছিল। এই বালকটির মৃত্য এক অপ্রত্যাশিত আঘাতের সৃষ্টি করে এবং তা মেক্সিকোর অন্যতম এক পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করে।

কিন্তু কেবলমাত্র মানুষেরাই এই দুষনের কারণে আক্রান্ত হচ্ছে না। লা জরনাডা অন্য এক প্রবন্ধে এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে:

Miles de peces murieron en el río Lerma, a la altura de la comunidad Cuatro Milpas, debido a la severa contaminación que padece el afluente, señalaron grupos ambientalistas, mientras que autoridades municipales, estatales y federales sostuvieron que el fenómeno se debió a “un fenómeno natural, a consecuencia de la falta de oxigenación”.

লরমা নদীর হাজার হাজার মাছ মারা গেছে। কুয়োট্রো মিলপাস সম্প্রদায় ভয়াবহ দুষণের কারণে প্রচণ্ড ভুগছে, যেমনটা পরিবেশবাদী দল বলছে। পৌরসভা এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে একটি স্বাভাবিক কর্যক্রমের অভাবে এটি ঘটেছে, আসলে অক্সিজেনের অভাবে এই ঘটনা ঘটেছে।

সবশেষে এই ইউটিউব ভিডিওটি পোষ্ট করেছে [স্প্যানিশ ভাষায়] ব্যবহারকারী নাটিটাচুলিটা। ভিডিওটি লরমা নদীর বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরছে। এই ভিডিওর নাম, “আগুয়া পারা ইয়োরা [স্প্যানিশ ভাষায়]” যার মানে “কান্নার জন্য জল”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .