১৯৭৬ সালে একটি গবেষণা প্রকল্প হিসেবে শুরু হওয়া গ্রামীন ব্যাংককে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে আজকের অবস্থানে আসার জন্যে। এটি আজ একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক উন্নয়ন ব্যাংক যার বিশ্বব্যাপী অনেক সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিন দশক পরে এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার (যা এর প্রতিষ্ঠাতা ড: মুহাম্মাদ ইউনুস এর সাথে একত্রে প্রাপ্ত) থেকে শুরু করে অনেক পুরস্কারে সমৃদ্ধ হয়ে এটির কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে বেশ কিছু শাখা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক স্বেচ্ছাসেবী আর সামাজিক কর্মীরা গ্রামীনের প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যবেক্ষণ করতে আসেন তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার জন্যে। এই গ্রীষ্মে আমেরিকার কেন্টাকি স্টেটের নর্দার্ন কেন্টাকি বিশ্ববিদ্যালয় (এনকেইউ) এর মাস্টার্স অফ পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশন (এমপিএ) প্রোগ্রামের আটজন ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকরা বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকে শিক্ষানবিশ হিসেবে এসেছেন। তারা বেশ অনেকগুলো মাঠ পরিদর্শনে গিয়েছেন এবং তাদের অভিজ্ঞতাগুলো লেখনি, ছবি এবং ভিডিওর মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করেছেন তাদের ব্লগে।
এমপিএ প্রোগ্রামের সম্পাদিকা বেথ তার অভিজ্ঞতা “তারা আমাকে বাংলাদেশে নিয়ে যাচ্ছে” নামক ব্লগে বর্ণনা করেছেন। মাঠ পরিদর্শনের সময় গ্রামের পরিবেশের সাথে তার খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হলেও তিনি মন্তব্য করেছেন:
গ্রামের পরিবেশ শহরের পরিবেশ থেকে অনেক আলাদা। এটি অনেক সবুজ। বায়ু কম দুষিত এবং অবশ্যই শব্দ দুষণ অনেক কম।
বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী ব্লগের মাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন। মাইক তার “দাঁড়ান…এটি কত মাইল দুরে?” শিরোনামের ব্লগে কিছু ভিডিও পোস্ট করেছেন:
এই ভিডিওতে রয়েছে ধামরাইতে এনকেইউ দলের প্রথম পরিদর্শন, কেন্দ্রের মিটিং, ইত্যাদি..:
ব্র্যান্ডি বাংলাদেশকে ভাল ভাবে জানার জন্যে বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন এবং একটি বাংলাদেশী বিয়ে খাবার অভিজ্ঞতা তার হয়েছে। তিনি গ্রামীন শিক্ষা পরিদর্শন নিয়ে খুবই খুবই উৎফুল্ল এবং সেটি তার দুটি ব্লগে লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন – “আমি ভুলতে পারব না আমি কি পরিমানে আশীর্বাদ প্রাপ্ত” এবং “গ্রামীন এখানে, গ্রামীন সেখানে, গ্রামীন সবখানে“।
টিম গ্রামীন শিক্ষা সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন এবং জানিয়েছেন কিভাবে শিশুরা তাদের জীবনধারণের জন্যে কাজ করার পাশাপাশি তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে:
গতকাল এবং আজ আমরা গ্রামীন শিক্ষা নামে একটি স্কুলের প্রোগ্রাম দেখতে গিয়েছিলাম। এটি বস্তির ছেলে মেয়েদের জন্যে গ্রামীনের একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম যা তাদের নূন্যতম শিক্ষা নিশ্চিত করে (বাংলা, ইংরেজী, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান এবং পরিবেশ) যাতে তারা যখন বড় হবে, তাদের কাজের সুযোগ বাড়ে। এই শিক্ষা ছাড়া হয়ত এইসব শিশুদের শিক্ষার তেমন সুযোগ নেই। [..]
স্কুল বেলা দুইটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত চলে। এই সময়ের বাইরে, সব শিশুরাই কাজ করে। অনেকের ভোরে উঠতে হয় (৬টার দিকে) এবং এই অঞ্চলে তাদের পারিবারিক ব্যবসায় (বেশীরভাগই সেলাই কাজ) হাত লাগাতে হয়। ক্লাসের পরে তারা কাজ করতে ফিরে যায় এবং রাত দশটা পর্যন্ত অনেকদিন কাজ করে। তাদের কাজ করতে হয় কারন তাদের পরিবারের তাদের আয় দরকার হয়। বস্তিবাসীদের আয় খুবই কম (৪ ডলার থেকে ১১ ডলার পর্যন্ত এইসব শিশুদের কথা অনুযায়ী) এবং তাদের সন্তানদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়। [..]
এইসব ছেলেমেয়েরা সপ্তাহে প্রায় ছয়দিনই একইভাবে কাজ করে। আমি এরপর কখনই আমার কাজের ভার নিয়ে অনুযোগ করব না.. ভাবতে পারেন যে তারা শিশু হিসেবে খেলার কোন সময় পায় না?
লিন তার ব্লগে লিখেছেন ‘গ্রামীন ফিশারিজ’, ‘ড্যানোন এবং চক্ষু সেবা’ আর ‘দারিদ্র্য হচ্ছে দারিদ্র্য এবং হাসি হচ্ছে হাসি‘ শিরোনামে। তিনি বাংলাদেশীদের আতিথেয়তা নিয়ে মুগ্ধ।
টোরি আমেস তার পোস্টের জন্যে অনেক ছবি তুলেছেন, উদাহরণস্বরূপ গ্রামীন ফিশারিজ, সোশ্যাল বিজনেস, রাস্তার শিশু এবং সরকারী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে ছবি। তিনি লিখছেন:
আমি সত্যি বাংলাদেশকে এবং এর সৌন্দর্যকে ভালবাসি। আমি নিশ্চিত যে আপনারা আমার পোস্টের ছবিগুলো দেখে তা বলতে পারবেন।
ব্র্যান্ডি তার শেষ পোস্টে লিখছেন:
আজকে বাংলাদেশে আমার শেষ দিন এবং আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে এই ভ্রমণ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমার সত্যিই খুবই সুন্দর একটি সময় কেটেছে গ্রামীন ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে। আমার এই দেশটির অনেক কিছুই ভুলতে চাই না, তাই আশা করি আমি অনেক কিছুই লিখে গেছি, পর্যাপ্ত ছবি তুলেছি, এবং অনেক কিছু স্মৃতিতে নিয়েছি যাতে আমার ভালবাসা হারিয়ে না যায়।
গ্রামীন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সম্পর্কে আরও কিছু জানতে এনকেইউ ছাত্রছাত্রীদের ব্লগগুলো পড়ুন।
1 টি মন্তব্য
Fine