দক্ষিণ আফ্রিকা: আফ্রিকার ফ্যাশন সপ্তাহ আফ্রিকান ডিজাইনারদের জন্য স্টেজ তৈরি করেছে

আফ্রিকার ফ্যাশন সপ্তাহ। উৎস: www.jamati.com

২০১০ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা সবার নজর কেড়েছে। ফুটবলের এই মহা আয়োজনের এখন পর্যন্ত কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই চলেছে, কাজেই এই দেশ প্রমান করেছে যে আফ্রিকা জানে কিভাবে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান করতে হয়।

তাদের খেলার প্রতিপক্ষ দেশগুলোর চেয়ে পিছনে পরে না থাকার জন্যে আফ্রিকার ফ্যাশন ডিজাইনাররা তাদের প্রতিভা দেখাচ্ছেন তাদের নিজেদের আয়োজিত একটি মিনি বিশ্বকাপে। এই আফ্রিকা ফ্যাশন সপ্তাহ ৩০শে জুন থেকে ৩রা জুলাই পর্যন্ত চলেছে – ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপের চলার সময়ে।

আফ্রিকা ফ্যাশন ইন্টারন্যাশনাল অনুসারে (যারা এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে) এতে অংশ নেবে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্যাশন জগতের তারকারা যাদের মধ্যে আছে মারিয়ান ফ্যাসলার, এরোল আরেন্ডজ, স্টোনড চেরিআর ডেভিড টিলালে যারা বিশ্বের অন্যন্য প্রতিভা যেমন দিওলা সাগোই (নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন সপ্তাহে অংশ নেয়া) আর নামকরা তারকা – জনপ্রিয় লাকুয়ান স্মিথের সাথে র‍্যাম্পে উঠবে।

জেসিকা রামোহোয়োবো আফ্রিকার ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রী সম্পর্কে তার মন্তব্য জানাচ্ছেন

আমি দক্ষিণ আফ্রিকার সাম্প্রতিক একজন স্টাইলিস্ট আর ব্লগার জেসিকা রামোহোয়েবোর সাথে কথা বলেছি যিনি দুবাই এ থাকেন, আর তাকে আফ্রিকা আর এর ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে প্রশ্ন করেছি, আর তিনি উত্তর দিয়েছেন:

মিডিয়া আফ্রিকাকে প্রায়শই যুদ্ধে আক্রান্ত, দুর্ভিক্ষপীড়িত মহাদেশ হিসাবে দেখায় যার লাগাতার সাহায্য লাগে। যদিও অনেক ব্যাপার আছে যেখান থেকে পালানো যাবে না, কিন্তু আফ্রিকার উজ্জ্বল একটা দিক আছে। এখানে কেবলমাত্র দারিদ্র্য নেই- আমরা সৃজনশীল একদল মানুষ! ফ্যাশন একটা শিল্প, আর শিল্পকে কখনো হত্যা করা উচিত না। এটা যেন শিল্পের কেন্দ্রে আর সব কিছু এখান থেকে হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সকল সমস্যা নিয়ে, আফ্রিকানদের কি উচিত ফ্যাশনের উপরে গুরুত্ব দেয়া?

কোনভাবেই ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির লোক দুর্দশাকে ব্যঙ্গ করতে পারে না। আফ্রিকান হিসাবে আমাদের দরকার আমাদের গুণগুলো সঠিকভাবে কাজে পরিণত করা। আমাদের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি মানুষকে চাকুরি দিচ্ছে- আমরা একটি অবদান রাখছি।

আফ্রিকান ফ্যাশন ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারপার্সন ড: প্রেশাস মলয়- মোতসেপে একটি প্রেস বার্তায় বলেছেন:

আফ্রিকা ফ্যাশন সপ্তাহ দক্ষিণ আফ্রিকা, গোটা আফ্রিকা মহাদেশ এবং প্রবাসীর মধ্যে উজ্জ্বল নক্ষত্রদের জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে দিচ্ছে। সকল আফ্রিকার পোষাকের প্রতি বিশ্ব তার ভালোবাসা জানাচ্ছে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে থাকছে আফ্রিকা, একটা খোটা হিসাবে না আর এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা যেন তা সমর্থন করি।

এনডেবেলে ডিজাইন

জেসিকার কাছে ফিরে যাই। আফ্রিকান মহাদেশ ফ্যাশনের জগৎকে কি দিতে পারে?

আমরা যা করতে পারি তার মাধ্যমে উপরিকাঠামোকে ছোঁয়া শুরু করেছি মাত্র। আমার নিজের ভ্রমণে আমি তা দেখেছি। আমাদের যা আছে অন্যান্য স্থানের তা নেই। পুরো মহাদেশেরই সম্ভাবনা আছে। আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের দেশগুলো চেইন স্টোর দ্বারা ভরে যাচ্ছে না। আমরা নিজেদের ‘আফ্রিকান-পরিচিতি’ তৈরি করতে পেরেছি। বিশ্ব খেয়াল করছে। লক্ষ্য করে দেখুন ক্রিষ্টিয়ান লুবুটিন এনদেবেলের ডিজাইনে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেই ডিজাইন তার জুতাতে ব্যবহার করছেন।

ব্লগ জগৎে এই অনুষ্ঠান নিয়ে উৎসাহ আছে। নিয়িতি তাবিতি জানিয়েছেন:

নাইজেরিয়ার সুপার ঈগল (তাদেরকে ক্ষমা করে দেই যারা এদেরকে সুপার মুরগী বলে) দক্ষিণ আফ্রিকা ফিফা বিশ্বকাপে হয়ত প্রতিযোগী হিসেবে খুব ভালো খেলতে পারেনি কিন্তু আমরা গর্বিত যে আমাদের ফ্যাশনের দিকপালরা সেখানে যাচ্ছে তাদের কার্যক্ষমতা প্রমান করতে।

ভয়েস অফ নানা ফোসু জানিয়েছে যে এরকম অনুষ্ঠান একেবারে নতুন আর খুব কম দেখা যায়:

এটা খুব কম দেখা যায়, আসলে একেবারে নতুন, আফ্রিকান ফ্যাশনের সকল প্রথমসারির মানুষকে একসাথে পাওয়া এক স্থানে, এক সময়ে, এক দেশে।

জ্যাকি মাইবুর্গ চেমালি এই অনুষ্ঠানকে দেখেন “ফুটবলের পাগলামি থেকে চমৎকার একটি বিরতি” হিসেবে:

আফ্রিকান ফ্যাশন সপ্তাহ সকল ফুটবল পাগলামির মধ্যে দারুন একটা বিরতি ছিল যদিও শো এর প্রথম দিকে বিকালের সেশনে আসন খালি ছিল দু:খজনকভাবে। যারা ফুটবল দেখতে পছন্দ করে না তাদের যদি আমাদের সুন্দর ফ্যাশন দলকে কাজ করতে দেখার আমন্ত্রণ করা যেত।

ব্লাক সিড ফ্যাশন শো এর প্রথম রাতের কথা লিখেছেন:

গতকাল রাত্রে স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে দ্বিতীয় বাৎসরিক আফ্রিকান ফ্যাশন সপ্তাহ খুব ভালোভাবে শুরু হয়নি যেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ৪৫ মিনিট দেরিতে শুরু হয়। প্রথম শো আমি দেখতে পাইনি, কিন্তু দ্বিতীয়টা দেখেছি; সেটি ছিল নাইজেরিয়ার ডিজাইনার দিওলা সাগোর চাকচিক্যময় প্রদর্শনী। তার ককটেল পোশাক সৃষ্টিশীলতার নিদর্শন ছিল – যেমন চুমকি আর মৎসকন্যার মতো অনেক ঘেরসহ আর মাঝে মাঝে ঝালর ওয়ালা পোষাক। আমি জানতে পেরেছি খুব কম গুরুত্ব দেন- যদি দেন তো- আফ্রিকাকেন্দ্রিকতার উপরে আর তিনি আধুনিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন।

“আফ্রিকা ফ্যাশন এর শৈল্পিক উদ্বোধন” শিরোনামে লেবোগাঙ্গ টিসেলের ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে টাইমস লাইভ মাল্টিমিডিয়া সাইটে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .