“পর্যবেক্ষণ আর গবেষণার মাধ্যমে নারীরা ব্লগে তাদের ব্যক্তিগত বিষয় তুলে ধরবেন বেশী। আর পুরুষরা রাজনীতি আর প্রযুক্তি নিয়ে বেশী কথা বলবেন তাদের ব্লগে যেটা, যদি বলতেই হয়, হয়ত প্রধান ধারার মিডিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করে মাঝে মাঝে,” বলেছেন লাইডা নামে একজন ক্যাম্বোডিয়ান মন্তব্য কারী। তিনি জেন্ডার আর ব্লগিং এর উপরে থিসিস করছেন আর ‘ক্যাম্বোডিয়াতে ডিজিটাল গণতন্ত্রের আবির্ভাব’ নামক একটা পোস্টের উপর একটি মন্তব্য করেছেন।
কিন্তু তার মন্তব্য খুব নতুন কিছু না যেহেতু এটা আগেও বিভিন্ন লেখক দ্বারা উত্থাপিত হয়েছে যারা ব্লগিং এ লিঙ্গের (জেন্ডারের) ব্যাপারটা নিয়ে কাজ করেছেন:
“ওয়েব শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে এই প্রশ্ন উঠেছে যে কেন নারীদের থেকে পুরুষরা সংবাদ আর রাজনীতি নিয়ে লেখেন,” জানিয়েছেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক লিসা গুয়ের্নসে যার নিজের একটা ব্লগ আছে।
কেউ কেউ আছেন যারা লিঙ্গের ব্যাপারটার সাংস্কৃতিক সম্পর্ক তুলে ধরেন আর অন্যরা প্রধান ধারার প্রচার মাধ্যমকে দোষারোপ করেন যারা পুরুষ ব্লগারদের উপরে বেশী মনোযোগ দেয়।
২১ বছ বয়সী নারী ব্লগার কৌনিলা কেও, বর্তমানে রয়েল ইউনিভার্সিটি অফ নম পেনের মিডিয়া ও মাস কমিউনিকেশনের সিনিয়র ছাত্রী এবং তিনি ২০০৬ এর শেষ দিকে ক্যাম্বোডিয়ার জীবনধারণ ও সামাজিক রাজনীতি নিয়ে ব্লগিং শুরু করেন। কৌনিলা জোর দিয়ে বলেছেন যে পুরুষ অধ্যুষিত বিশ্বে এই দৃষ্টিকোণটি আছে।
“সাধারণত: পুরুষদের শক্তিশালী আর বড় হিসেবে দেখা হয় আর তাদের কথা রাজনীতি বা প্রযুক্তি ছোঁয়া হয় আর নারীদের নরম ও নিম্নমানের দেখা হয় আর তাই রাজনীতি বা প্রযুক্তি নিয়ে কথা বললে তারা অদ্ভুত ‘পুরুষালি’ পরিস্থিতিতে পড়বেন,” বলেছেন কৌনিলা।
কৌনিলা একই ধরণের আরেকটি মতামত পোষণ করেন যে ব্লগিং এ লিঙ্গের যে ফাঁক তা ঐতিহ্যগত ভূমিকার কারণে। তবে, তিনি দোষ দেন ক্যাম্বোডিয়ার সমাজে নারীদের রাজনৈতিক আর প্রতিষ্ঠানগত ভূমিকার অভাবের উপরে:
“আমার মনে হয় ঐতিহ্যগত পুরুষের ভূমিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে যার ফলে পুরুষরা তারা যা করেছিলেন সেই একই কাজ করে থাকেন ব্লগে: রাজনৈতিক ব্যাপার নিয়ে লেখেন আর নারী, তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে লেখে। অবশ্য, অনেক নারী আমি যাদের চিনি ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে লেখা পছন্দ করেন কারণ এটা অনেক সহজ। আমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট হওয়ার জন্য উৎসাহের অভাব হিসেবে দেখি।“
সম্প্রতি, কৌনিলা দেখেছেন যে সামাজিক বিষয় আর রাজনীতি নিয়ে ব্লগ করা নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
“ক্যাম্বোডিয়া এখনো সেই স্থান না হতে পারে যেখানে নারীরা রাজনীতি আর প্রযুক্তি নিয়ে ব্লগ করেন, তবে, আমি আশা করি যে আগামী বছরগুলোতে, আরও বেশী নারীরা শিক্ষিত হবেন, আর তখন উঠতি ব্লগে আমরা রাজনৈতিক বিষয় দেখব।“
যদিও কৌনিলা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে মহিলাদেরকে ব্লগিং আর প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শক্তিশালী করা যায়, ২৭ বছর বয়সী নারী ব্লগার সিদারোথ কং বিশ্বাস করেন যে নারী নিজেই পরিবর্তনের ধারক। কং ৭ বছরের বেশী সময় ধরে এনজিও খাতে কাজ করেছেন বিশেষ করে সামাজিক উন্নয়ন আর লিঙ্গ বৈষম্য দুরীকরণের ক্ষেত্রে কর্মরত আইসিটি প্রকল্পগুলো তুলে ধরছেন ।
“ক্ষমতায়ন আপনা আপনি আসে না, আপনার কাছে ভালো পরিকল্পনা আর উপায় থাকতে হবে এটা করার জন্য। নারীরা যদি রক্ষণশীল ধারণা পোষণ করেন আর কঠোর সংস্কৃতি আর ধারণা দ্বারা ঘেরা থাকেন, তাদের ক্ষমতায়নের হাতিয়ার হিসরবে ব্লগিং কে ব্যবহার করা কঠিন হবে। ক্ষমতায়্ন আর ক্ষমতায়নের প্রভাব নির্ভর করে পরিবর্তনের ইচ্ছার উপরে, মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আর সঠিক লক্ষ্য ও উপায় এর জন্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের উপরে,” বলেছেন সিদারোথ।
এই দুই সক্রিয় মহিলা ব্লগার একটা সাধারণ বিশ্বাস ধারণ করেছেন যে ইন্টারনেটের উচ্চমাত্রার খরচ ব্লগে মানুষের ভূমিকাকে সীমাবদ্ধ করে। তারা আরো বুঝেছেন যে ব্লগারদের জন্য অনুকূল পরিবেশ দেশে নেই। কৌনিলা বলেছেন যে নারীদের ব্লগিং করা থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে জেন্ডারের ভূমিকা এখনো গুরুত্বপূর্ণ:
“ক্যাম্বোডিয়ার ইন্টারনেটের খরচ অনেক, আর রাজনীতি বা কোন ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা পুরুষ দ্বারা মজার বা খারাপ কাজ হিসেবে দেখা হয় যারা নারীদের ছোট ভাবে। ক্যাম্বোডিয়ার সমাজে ঐতিহ্যগত জেন্ডারের ভূমিকা বেশ জোরালো আর মহিলাদের, আমি বিশ্বাস করি, কঠোর আর সাহসী হতে হবে এই বাধা ভাঙ্গতে হলে।“
অন্য দিকে সিদোরাথ, ব্লগারদের জন্য সাধারণভাবে অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করার উপরে জোর দিয়েছেন:
“আমার মনে হয় ব্লগিং এর ক্ষেত্রে একটা প্রধান চ্যালেঞ্জ আছে যা আমাকে বা অন্যকে চিন্তিত করে: ব্লগিং এর জন্য সামাজিক পরিবেশ কতটা নিরাপদ। আমরা সরকারের কোন জটিল ব্যাপার নিয়ে ব্লগ করতে ভয় পাই কারণ আমাদের নিরাপত্তার চিন্তা প্রথমে থাকে আর সেই ভয় যে কেউ অপমান করা হয়েছে বলে যে কোন ব্লগারের বিরুদ্ধে মামলা করতে। তাই একটা দেশের সামাজিক অবস্থা কম বা বেশী চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করে একজনের পক্ষে স্বাধীন ভাবে ব্লগ করার বা না করার জন্য”
জিজ্ঞাসা করা হলে যে তারা নেট এ আরো বেশী করে কি দেখতে চান আর ক্যাম্বোডিয়ার সমাজকে ব্লগিং পাল্টাতে পারে কিনা, সিদারোথ জোর দিয়েছেন যে উচ্চ মান বেশী লোকের ব্লগিং করার উপরে নির্ভরশীল আর সঠিক তথ্যও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো আশা করেন যে ব্লগের মাধ্যমে কিছু লুক্কায়িত গল্প প্রকাশিত হবে।
কৌনিলা অন্যদিকে চান আরো বিচিত্র জিনিষ লেখা হোক কেবল পুরুষ না নারীদের দ্বারাও। তিনি জোর দিয়েছেন যে নারীদের উৎসাহিত করতে হবে আর সুযোগ দিতে হবে রাজনীতি, সামাজিক ব্যাপার আর তাদের মনে যা আসে তা নিয়ে কথা বলার জন্য। তিনি আরো বিশ্বাস করেন যে ব্লগিং তাদের নিজেদের সাথে যোগাযোগে সাহায্য করে, যাতে নারীরা বুঝতে পারেন যে ভিতর থেকে তারা কে আর ব্যবহার্য সামাজিক টুলস হওয়া ছাড়াও এটা সুযোগ দেয় প্রকাশের স্বাধীনতাকে তুলে ধরার।
লক্ষণীয়, যে এই দুই সোচ্চার ব্লগার লিখেছেন রাজনীতি আর নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণের উপরে বেশী ব্লগ আলোচনার আহ্বান করে। কৌনিলা মজার একটি প্রতিবেদন পোস্ট করেছেন ‘এই বিশ্বে আপনি যে রাজনীতি দেখেন’ শিরোনামে যেটি অবশ্যই পড়া উচিত। সিদারোথ গত বছরের জাতীয় নির্বাচনে সময় ভোট দেয়ার জন্য তার পাঠকদের অনুরোধ করেছিলেন তার প্রথমবার আমার ভোট-২৭ জুলাই ২০০৮ নামক লেখায়। এটা থেকে বোঝা যায় যে ব্লগিং কে এডভোকেসীর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক আলোচনার জন্য, বিশেষ করে নারী ব্লগারদের দৃষ্টিকোণ থেকে।
* ইমেইলের মাধ্যমে এই দুই নারী ব্লগারের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।