“এক সময়ে আমাদের এই দ্বীপ গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্বর্গ ছিল। এখন এটা আর গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্বর্গ না।“
এই ভাবে উরসুলা রাকোভা তার বাসভূমির অবস্থা বর্ণনা করেছেন নিউ ইয়র্কে সম্প্রতি একটি প্যানেল আলোচনার সময়ে। তিনি বলিষ্ঠভাবে লাগাতার কাজ করে যাচ্ছেন পাপুয়া নিউ গিনির ক্যাটারেট দ্বীপপূন্জের বাসিন্দাদের নিয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি করে তাদের পুন:স্থাপনের জন্য সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে। বিশ্ব উষ্ণায়নের এর ফলে সমুদ্রের পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় কারনে এইসব দ্বীপ ক্রমে বন্যা কবলিত হচ্ছে। ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে যে ২০১৫ সালে এই প্রবাল দ্বীপ সম্পূর্ণ ডুবে যাবে।
সমুদ্রের পানির স্তর বৃদ্ধি দ্বীপের ফসল নষ্ট করেছে আর খাওয়ার পানির উৎস ধ্বংস হয়েছে। এর ফলে, জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভিডিওতে দেখা যাবে, এই দ্বীপের বাসিন্দারা ক্ষুধার্ত থাকছেন।
ডুবে যাওয়া দ্বীপের জন্যে স্থানীয় সমাধান, পাপুয়া নিউ গিনির ক্যাটারেট দ্বীপ সৌজন্যে ভিমিও তে জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যানেল।
এর ফলে, এই দ্বীপের বাসিন্দাদের বুগানভহিল দ্বীপের বড় পরিসরে পুন:স্থাপন করতে হবে। এদেরকে বিশ্বের প্রথম পরিবেশ উদ্বাস্তু হিসেবে ধরা হচ্ছে। তাদের সাহায্য করার এই জটিল কাজ সম্পন্ন করছেন রাকোভা, যাকে এই বিশাল দায়িত্ব দিয়েছেন তার বয়োজ্যেষ্ঠরা আর গোত্রের বাকি সবাই। তিনি বিশ্বব্যাপী ঘুরে বেড়াচ্ছেন সচেতনতা সৃষ্টির জন্য, কিন্তু আরো গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, অর্থ জোগাড় করতে যাতে এই ১২০টা পরিবারকে সহজে পুন:স্থাপন করা যায়।
কিছু পরিবারের পুন:স্থাপন এরই মধ্যে হয়েছে, কিন্তু কোন সমস্যা ছাড়া না। সাংবাদিক ড্যান বক্স এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে লিখছেন আর রাকোভা আর দ্বীপের অন্যান্য দলে সাথে যোগাযোগ রাখছেন, যারা এই পরিস্থিতির উপরে সর্বশেষ খবর দিচ্ছে। বক্স তার ব্লগ জার্নি টু দ্যা সিংকিং ল্যান্ডস এ লিখেছেন:
প্রাথমিক ভাবে স্থানান্তর করা লোকেরা (পাঁচজন পুরুষ, যারা পাঁচটি পরিবারের পিতা) নতুন দ্বীপে সমস্যার মধ্যে পরেছিল যেটা বোঝা যায়। ছোট দ্বীপ ছেড়ে দিয়ে বড় মূল ভূমিতে বাড়ি তৈরির জন্য প্রথম অভিবাসীর দলের পাঁচজনের মধ্যে থেকে তিনজন দ্বীপে আবার ফিরে এসেছেন। তারা আসলে নতুন জায়গায় বাস করা আর পরিবার থেকে দূরে থাকা কষ্টকর মনে করছিলেন। নতুন তিনজন পুরুষ তাদের বদলে যাওয়ার জন্য বাছাই হয়েছেন আর শীঘ্রই তারা যাত্রা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রথম পাঁচজন যে বাগান শুরু করেছিলেন তাতে এরই মধ্যে সবজি আর ফল ধারণ শুরু করেছে আর এই খাদ্যের সম্ভার বাকি দুইজনের পরিবারকে তাদের সাথে থাকার জন্য আসতে বলতে সহায়তা করেছে।
এই ভিডিওতে, রাকোভা ব্যাখ্যা করেছেন কেন এই প্রচারণা দরকার:
আমি আমার গোত্রের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নিশ্চিত ভবিষ্যৎ রেখে যেতে চাই। যেসব মানুষ বিশ্বাস করে না যে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে তাদের জন্য আমি বলতে চাই, আপনার কি হৃদয় আছে বোঝার জন্য যে আপনি রক্ত মাংসের মানুষ? আপনার জন্য এটা জীবন যাত্রার পছন্দের ব্যাপার। আমাদের জন্য যারা এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন আর সমুদ্রের পানি বাড়ার ফলে ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছি, এটা জীবন মরনের প্রশ্ন। কারণ আমরা না সরে গেলে, আমরা ডুবে যাব। আর এরই মধ্যে আমরা আমাদের বাস ভূমি হারাচ্ছি। আমার মনে হয় না এখানে প্রশ্ন করার আছে যে এটা জলবায়ু পরিবর্তন কিনা। আপনাদের আমাদের জায়গায় নিজেদের রেখে ভাবা উচিত, আর হয়তো আমাদের দ্বীপে আসা উচিত। আমরা আমাদের দ্বীপে এসে নিজের চোখে দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আপনাদের।
আসন্ন কোপেনহেগেন সম্মিলনে তারা ভালো কোন সমাধানে না পৌঁছুতে পারলে, আমার গোত্রের মানুষেরা ডুবে যাবে। প্যাসিফিক আর অন্যান্য জায়গার দ্বীপগুলো গায়েব হয়ে যাবে আগামী বিশ বছরের মধ্যে। আমরা সবাই আমাদের মাতৃভূমি হারাবো, আর এটা আমার ভয়, যে আমরা আমাদের পিতা-মাতার আদি বাড়ি হারাবো। আর এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন, আমাদের আদিম বাড়িতে থাকার অধিকার খর্ব করা।
এই পুন:স্থাপন প্রক্রিয়ার জন্য যেমন আশা করা হয়েছিল তেমন অর্থ জোগাড় হচ্ছে না – লিখেছেন রাকোভা বক্সকে লেখা তার এক ইমেইলে। এইসব অর্থ দরকার জমি কিনে বাসিন্দাদের জন্য বাড়ি নির্মাণে। তিনি তার প্রচারণা চালিয়ে যাবেন যখন ডিসেম্বরের ৭-১৮ তারিখে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে তিনি জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মিলনে অংশগ্রহণ করবেন।