পূর্ব আফ্রিকায় খরা ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে প্রায় ৩০ লক্ষ উগান্ডাবাসি এক দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। সম্প্রতি অক্সফাম প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে জানা যাচ্ছে, এই অঞ্চলের আবহাওয়ায় যে বিশেষ পরিবর্তন এসেছে, তার কারণেই এই খাদ্যাভাব। ২০০৭ সালে ভয়াবহ এক বন্যা উগান্ডার শস্য ধ্বংস করে দেয় এবং দেশটির উত্তর ও পুর্বাংশের জমি ক্ষয় করে ফেলে। চলতে থাকা এই খরা বর্তমানে প্রতিবেশি রাষ্ট্র কেনিয়ায় তার প্রভাব বিস্তার করেছে। এই ঘটনা খাদ্যশস্য কমে আসার ব্যাপারটিকে আরো খারাপে পরিণত করেছে ও অঞ্চলটিকে বর্তমান সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দেশটির উত্তর ও পুর্বাংশে দুর্ভিক্ষে সৃষ্ট অনাহার ৪০ জন লোকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ব্লগাররা শংকিত যে সরকার এই বিষয়ে মনোযোগ দেবার আগেই আরো অনেক লোক মারা যাবে।
এন্টিপপ কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেছেন। সরকার দুর্ভিক্ষের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে একে “খাদ্য ঘাটতি” বলে অভিহিত করেছে:
পূর্ব উগান্ডায় দুর্ভিক্ষ চলছে, ঠিক টেসো নামক এলাকায়। এই দুর্ভিক্ষ ৩৫ জন লোকের জীবন হরণ করেছে। এই বিষয়টি আমাদের অনেককে বিস্মিত করেছে। এমনকি আমরা অনেকে এই বিষয়টি প্রথম শুনি এক আকস্মিক মুহূর্তে যখন আমরা উদরপুর্তি করা পেটে বাতাস পূর্ণ করার জন্য খানিকটা বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। এটা দু:খজনক এবং এর জন্য আমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।
কিন্তু রাষ্ট্রের কৃষিমন্ত্রী এন্ড্রু বেগিয়ের এবং ত্রান ও দুযোর্গ প্রস্তুতি মন্ত্রী তারসিস কাবওয়েগইয়ারার মতো লজ্জা পাওয়া নয়, যারা এই ঘটনায় ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করেছে; টেসো এলাকার লোকদের বেগিয়ের এই বলে উপহাস করেছে যে, সেখানকার লোকজন বেশীর ভাগ সময় অজন (স্থানীয় ভাবে তৈরী করা মদ) পান করে সময় কাটিয়েছে। তারা ফসল ফলায়নি ও শস্য সংগ্রহ করেনি। কেবল অলস ভাবে বসে সময় কাটানোর জন্য এখন তারা তার মুল্য প্রদান করেছে। কাবওয়েগইয়ারার একে “দুর্ভিক্ষ নয়, খাদ্যের কমতি” বলে, এতে উৎসাহ জুগিয়েছেন।
ইজিই জানাচ্ছে যে, দেশটির উত্তর এবং পূর্বে দুর্ভিক্ষ খুবই খারাপ আকার ধারণ করেছে। এদেশে যারা পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করেছে তারা দুর্ভিক্ষ থেকে সামান্য নিরাপদে রয়েছে। ভদ্রমহিলা বিস্মিত হবেন, যদি সরকার এই সমস্যায় দ্রুত সাড়া দেয়। বাস্তবতা এই যে, উগান্ডার রাষ্ট্রপতি পশ্চিম-উগান্ডার লোক:
যেমনটা আশা করা হয়েছিল, কারণ দুর্ভিক্ষ কবলিত এই সমস্ত এলাকা উগান্ডার উত্তর ও পুর্বাংশে পড়েছে। আমি তা বলছি, কারণ আমি সেই এলাকা থেকে এসেছি। (পশ্চিমের) জনগণ হয়তো অনেক বেশি সম্পদশালী নয়, কিন্তু তারা সব সময় খেতে পায়। আমি এইসব তথ্য অস্বীকার করতে পারি না যে, বড় বড় সব ব্যাক্তি, রাজনীতিবিদ ও সরকারী কর্মচারী (যার মধ্যে রাষ্ট্রপতিও অর্ন্তভুক্ত) পশ্চিম থেকে এসেছে। তুমি হয়তো তাদের সাহায্য করতে পারো না কিন্তু এই অনুভুতি পাবে যে, তারা এই বিষয় নিয়ে চিন্তিত নয়… যা এক নির্লজ্জ লজ্জা এবং এই সরকার থাকার কোন মানে নেই! আমি সত্যিই তাই মনে করি। যদি একটি সরকার এ রকম একটি দুর্ভিক্ষের মতো মৌলিক সমস্যাকে মোকাবেলা করতে না পার, তাহলে আসলে তারা করছেটা কি?

উত্তরপূর্ব উগান্ডার কারামোজা ক্ষুধাপীড়িত অন্যতম এলাকা। ছবি রুকো ফান ডের মেরভের সৌজন্যে।
উগান্ডার ডেইলি মনিটর এক রিপোর্টে জানাচ্ছে, দুর্যোগ মোকাবেলা মন্ত্রী তারসিস কাবওয়েগইয়ারার কারণ খুঁজছেন দুর্ভিক্ষে যারা মারা গেছেন তারা কেন মরেছেন। তিনি বলেছেন, বলা হচ্ছে যারা দুর্ভিক্ষে মারা গেছে আসলে তারা স্বাস্থ্যগত কারণে মারা গেছে। উগান্ডা টকে লেখার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিয়োমুহেন্ড- এতিনিয়া এর উত্তর দিচ্ছেন:
যখন বড় আকারের এক দুর্ভিক্ষের কথা কাম্পালায় ছড়িয়ে পড়ে সম্মানিত দুর্যোগ মোকাবেলা মন্ত্রী (এক সাংবাদিক সম্মিলেনে ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করেছেন) দুর্যোগের বার্তা বাহকদের অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে কবরস্থান দেখাতে বলেন!
তার মতে এই দুর্ভিক্ষের প্রচার এক সুনাম নষ্ট করা কাজ। এটি হতাশ মাথাগরম করা বিরোধী দলের সাজানো। তাদের কাজ হচ্ছে, যেখান প্রয়োজন নেই সেখানেও ঢোল বাজানো। তিনি এরপর জনতাকে মনে করিয়ে দেন, জনগণকে খাওয়ানোর দায়িত্ব সরকারের নয় এবং দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনতাকে বেশি করে আম উৎপাদন করতে বলেন। যখন আমের মৌসুম সে সময় আমকে শুকিয়ে কঠিন সময়ের জন্য আম সংরক্ষণ করে রাখতে উপদেশ দেন। তিনি মাকেরেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক যা পুর্ব আফ্রিকার এক অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান।
“বর্তমানে পুর্ব আফ্রিকায় বৃষ্টিপাতহীন শুস্ক মৌসুম চলছে… উগান্ডার সংবাদপত্র গত সপ্তাহে রিপোর্ট করেছে, উগান্ডার উত্তরে না খেতে পেয়ে ৩৫ জন লোক মারা গেছে”। ইন এন আফ্রিকান মিনিট ব্লগে জশ লিখছেন, “কেন ব্যাংকস আমাদের বিশ্ব দারিদ্রের এক প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন করছে হাতি সমন্ধে”, আমাকে, হ্যাঁ আসলেই তাই।