পৃথিবী বিখ্যাত এ্যাম্বোসেলি ন্যাশনাল পাকের্র মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের মাদি হাতি ইকো মারা গেছে। এ্যাম্বোসেলি ট্রাস্ট ফর এলিফেন্ট (এটিই)বিশ্বাস করে যে ইকোর মৃত্যু তার বয়স এবং এই এলাকায় চলা তিন বছর ধরে চলা খরার ফল। তিন বছর ধরে চলা একটানা অনাবৃষ্টি কেনিয়ার বন্য প্রাণী সংরক্ষন এলাকাকে শুস্ক করে ফলেছে এবং সেখানে সামান্য খাদ্য অবশিষ্ট রয়েছে।
ইকো রোবারার ৩ মে ২০০৯ তারিখে দুপুর ২টায় মৃত্যুবরণ করে। শনিবার সকালে সে শেষ শয্যায় আশ্রয় নেয় এবং ২৪ ঘন্টা এভাবে অতিবাহিত করে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। ইকোর মৃত্যু সংবাদ শোনার সময় সিনথিয়া মস তহবিল বাড়ানোর জন্য আমেরিকা ভ্রমণের এক পরিকল্পনা করছিলেন। তিনি ওয়ার্ল্ডলাইফডিরেক্টকে ৪ মে সোমবারে জানান তিনি আমেরিকার সফর স্থগিত করেছেন এবং এসটিএর শোকার্ত সদস্যদের সাথে সময় কাটানোর জন্য কেনিয়া যাচ্ছেন বিষয়টি দেখার জন্য যে ইকোর পরিবার এই মৃত্যুশোক কি ভাবে কাটিয়ে উঠে।
১৯৭৩ সালে মস ইকোকে প্রথম আবিস্কার করে। সে সময় এই হাতি পরিবারে সাতজন সদস্য ছিল। তার মৃত্যুর সময় ঠিক ৩৬ বছর পরে ইকো ৪০টি হাতির এক পরিবারের নেত্রী হয়েছিল। তারা রাজকীয় পাহাড় কিলমানজারোর ছায়ায় এ্যাম্বোসেলি সমভুমিতে ঘুরে বেড়াতো।
ইকো ছিল সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত বন্যহাতি। বিশেষ করে বিভিন্ন ছবিতে অভিনয়ের পর তার খ্যাতি বেড়ে যায়। ইকো অভিনীত ছবির মধ্যে রয়েছে তার প্রথম ছবি যেটি ছিল বিবিসির ন্যাচারাল হিস্ট্রির তোলা এবং সেখানে ধারাবর্ণনায় ছিলেন বিখ্যাত হাতি গবেষক সিনথিয়া মস। এই ছবির ক্যামেরায় ছিলেন বিবিসির মার্টেন কোলব্যাক। ইকো ধারাবাহিকভাবে তিনটি ছবিতে অভিনয় করে যা ইকো ট্রিলজি নামে জনপ্রিয় হয়।
ইকো ট্রিলজির মধ্যে ছিল ইকো অফ দি এলিফেন্ট (১৯৯৩, ইকো অফ দি এলিফেন্ট: দি নেক্সট জেনারেশন(১৯৯৬) এবং খুব সম্প্রতি তোলা ছবি ইকো দি এলিফেন্ট: ফাইনাল চ্যাপ্টার(২০০৫)। সম্প্রতি ইকোকে দেখা গেছে মার্টিন কোলব্যাকের কাজে যার নাম এন আই ফর এন এলিফেন্ট বা একটি হাতির জন্য একটি চোখ। মসের মতে ইকোকে হারানো হাতি পরিবারের জন্য বিরক্তির কারন হতে পারে।
এটি হতে পারে সকলের জন্য, তবে তার বোন এলার জন্য বিশেষ ক্ষতি কারন ইকো ছিল তাদের একমাত্র নেত্রী যাকে তারা জানতো।
ওয়ার্ল্ডলাইফডিরেক্ট এর সাথে এক যোগাযোগের সময় মস এ কথা বলেন। তিনি তা এটিই ওয়েবসাইটে পোস্টও করেছেন। মস পর্যবেক্ষণ করছেন কিভাবে হাতিরা কেনিয়ার এ্যাম্বোসেলির এই দুযোর্গ সামাল দেয়।
মস বলেন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও ইকোর অনেক বড় অবদান ছিল।
আমাদের এ্যাম্বোসেলি গবেষনা প্রজেক্টের জন্য সে অনেক মুল্যবান বিষয় ছিল। হাতিদের আচরন, যোগাযোগ, সামাজিক সর্ম্পক এবং বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য সরবরাহ করে ইকো গবেষনায় অনেক অবদান রেখেছে। কিন্তু ইকো কেবল একটি গবেষণার প্রজেক্ট ছিল না, ছিল তারচেয়ে বেশী। সে আমাদের প্রতিদিন আনন্দ আর বিস্ময় দিয়ে ভরিয়ে দিত।
যারা ইকোকে জানতো তাদের জন্য এটা এক অপুরণীয় ক্ষতি। ডা: পাওলা কাহুমভু বারজা ব্লগে পাঠকদের অনুরোধ করেছেন এই চমৎকার হাতি মায়ের জন্য একটি মোমবাতি জ্বালাতে। জয়েস পুল এবং পিটার গ্রানিল সেই মুহুর্তটি স্মরণ করেছেন যখন তারা হাতির স্বর গবেষণা করার জন্য ইকোর সাথে ছিলেন। তারা তাদের এই ঘটনা তাদের ব্লগ এ্যাট এলিফেন্ট ভয়েসে তুলে দিয়েছেন।