এইচআইভি এইডস এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা একটি নতুন অস্ত্র পেয়েছে – মুঠো ফোন। রোগ সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকানদের প্রতিদিন বার্তা (এসএমএস) পাঠানো হবে একটি নতুন উদ্যোগ।
গত সপ্তাহে আমেরিকা'র মাইন এ অনুষ্ঠিত পপ!টেক২০০৮ কনফারেন্সে প্রকল্পটি ঘোষণা করা হয়েছে; যা কিনা ‘প্রজেক্ট মাসিলুলেকে’ বা ‘প্রজেক্ট এম’ নামে পরিচিত। এটি দক্ষিণ আফ্রিকায় মুঠোফোনের জনপ্রিয়তার সদ্ব্যবহার করে দেশটির এইচআইভি এবং বক্ষব্যাধীর সর্বোচ্চ সংখ্যার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। প্রকল্পটির প্রথম পর্বে প্রায় এক মিলিয়ন সাধারন মানুষকে এইচআইভি এবং বক্ষব্যাধি কল সেন্টারে ফোন করার আবেদন জানিয়ে ফ্রী বার্তা (এসএমএস) পাঠানো হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বহুল ব্যবহৃত এক ধরনের বার্তা “দয়া করে আমাকে ফোন করুন” এর অংশ হিসেবে এই বার্তাগুলো পাঠানো হবে।
হোয়াইট আফ্রিকান ব্লগ প্রকল্প এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা করেছে:
দক্ষিণ আফ্রিকায় জ্ঞানী মুঠোফোন বিশেষজ্ঞদের একজন ‘গুস্তাভো প্রায়েলকেট’ এই প্রকল্প চালাতে সহায়তা করছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবহৃত “দয়া করে আমাকে ফোন করুন” এসএমএস ব্যবস্থার ১২০ অক্ষর খালি জায়গা ব্যবহার করে এটি করা হচ্ছে। তারা বার্তাটিকে জোড়া লাগাচ্ছে যেন মানুষ নিজে থেকে এসে এইচআইভির চিকিৎসা করায় এবং মানুষ এই চিকিৎসা করাতে কোন লজ্জা না পায়।
লজ্জা'র সাথে সাথে ভুল তথ্যকে খুব কম সংখ্যক দক্ষিণ আফ্রিকানদের এইচআইভি সনাক্তকরন এবং চিকিৎসার মূল কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় ৫.৭ মিলিয়ন মানুষ এইচআইভি নিয়ে বেঁচে আছে, প্রকল্প পরিচালকের ভাষ্যমতে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ রোগ সনাক্তকরণ পরীক্ষাটি করছে। দক্ষিন আফ্রিকায় বক্ষব্যাধি রোগের সংখ্যাটিও অন্যতম সর্বোচ্চ,এইচআইভি রোগীদের অন্যতম হন্তারক।
প্রজেক্ট এম তৈরী করা হয়েছিল এই দুই রোগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য। এটি পপটেক এক্সেলেটর প্রোগ্রামে আসে এবং সেই সাথে একত্রিত করে ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব পার্টনার,আইটেক সহ, প্রায়েলকেট ফাউন্ডেশন, ফ্রগ ডিজাইন, নোকিয়া সিমেন্স নেটওয়ার্ক এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটিকে। থ্রী শিপ বের করে যে এই প্রকল্পে মোবাইল ফোনের ব্যবহার প্রমান করে যে তারা কতটুকু দক্ষিণ আফ্রিকান সংস্কৃতির সাথে যুক্ত এবং আরো যোগ করে:
অনেক দেশেই প্রতিষ্ঠিত কোন হার্ডওয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেই এবং জনযোগাযোগের জন্য তারা মোবাইল নেটওয়ার্কের দিকে তাকিয়ে থাকে; যেখানে আগে অন্যান্য মাধ্যম যেমন বেতার এসব কাজের জন্য ব্যবহৃত হত। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার প্রকল্পটি সকল মাধ্যমের গুরুত্বটি অনুধাবন করায়।
যদিও এই ধরনের প্রকল্প দক্ষিণ আফ্রিকায় এই প্রথম নয়, উদ্যোক্তারা বলেন এটিতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য প্রেরণে মোবাইল ফোনের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে এবং এই প্রকল্পটির অনেক আশা রয়ছে। পূর্বে পরীক্ষা করা বার্তা প্রেরণের এই উদ্যোগটি জোহান্সবার্গের জাতীয় এইডস সাহায্য লাইনে গড়ে প্রতিদিন করা কল ভলিউমের প্রায় তিনগুন বাড়াতে সাহায্য করেছে। পরবর্তীতের এই প্রকল্পটি যদি সফল হয়, তবে এই মডেলটি আফ্রিকার বাইরেও ব্যবহার করা যাবে।
আহেলগে আফ্রিকান গ্লোবালাইজেশনে করা একটি কমেন্টে বলেছে এই প্রকল্পের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।
সর্বসাধারণের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠানোর জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার একটি অসাধারন পদ্ধতি। একবার দেখানো একটি বিজ্ঞাপণ বা ফ্লায়ারের তুলনায় এই লিখিত বার্তাটি গ্রাহক বারবার দেখতে পারেন। ফোনে পাঠানো বার্তাটি সাধারণত মেইলবক্সে কয়েকদিন থাকে, এতে তিনি সেখানে গিয়ে সেটি দেখতে পারেন। আমার মনে হয় বার্তাটি মানুষকে নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে উদ্ধুদ্ধ করে। এই বার্তাগুলো মুঠোফোনের জন্য পিএসএ (পাবলিক সার্ভিস এনাউন্সমেন্ট)।
ডিজাইন ইন আফ্রিকাতে ব্লগিং করা ডেভ স্বীকার করেন যে এই প্রকল্পটি সম্ভবত সফল হতে যাচ্ছে :
একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বলা হয়েছে; একটি সহজবোধ্য সমাধান পরিকল্পনা করা হয়েছে স্টেকহোল্ডারদের বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ের। মানুষ এবং সমাজের জন্য কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে এবং আগত বার্তাগুলো ফ্রী। অসাধারণ!
কিন্তু ল্যাবলেডী, যিনি কিনা ওয়াইজ এডভাইসে ব্লগিং করেন, মনে করেন এটি দু:খজনক যে এইচআইভি এইডসের বিরূদ্ধে যুদ্ধের মধ্যভাগ দখল করেছে প্রযুক্তি। তিনি বলেন:
সমাজ কোন অবস্থায় পৌছলে এইডস এর ঝুঁকিপূর্ণ গরীব মানুষদের কাছে কনডমের চেয়ে মোবাইল ফোন কেনা আকর্ষনীয় হয়? আমার কাছে এটি অস্বাভাবিক মনে হয় যে প্রযুক্তি মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে এমন কিছুর যা কিনা একবারের জন্য, একটি রক্ত পরীক্ষা আর শিক্ষা কার্যক্রমএটি কি আমার ঔদ্ধত্য হবে যে পুরো জাতি প্রতিরোধযোগ্য রোগের জন্য সফল স্বাস্থ্য কার্যক্রমে প্রবেশের আগে কেন সবার কাছে মোবাইল ফোন পৌছবে?
ক্যাথরিন ফোর্সিতে, যিনি কিনা ডগরিডারে ব্লগিং করেন; যোগ করেন যে এই বার্তাগুলোকে ‘স্বাস্থ্য স্প্যাম’ হিসেবে দেখা হবে :
প্রশ্ন হল কতদিন পর্যন্ত এই পদ্ধতি চালু থাকবে? প্রথম দেখার পর, মানুষ অন্যান্য বার্তার মতই এই বার্তাগুলো দ্রুত মুছে ফেলবে।
প্রজেক্ট এম সেটি আশা করে না। এই প্রকল্পের পরবর্তী ধাপগুলোতে এইচআইভি সনাক্তকরণ যন্ত্রে “ভার্চুয়াল কল সেন্টার” যুক্ত করে বাড়িতে বাড়িতে বিতরণ করা হবে এবং এইডসে আক্রান্ত রোগীর ব্যক্তিগত চিকিৎসার জন্য বার্তার সহায়তা নেয়া হবে।
ছবিটি ফ্লিকারের জনজনটুকেএইট এর সেলফোন ক্লোজআপ থেকে নেয়া হয়েছে