এ সপ্তাহে নর্থ কোরিয়ার একটি বড় সংবাদ আছে। মিশরের বৃহৎ টেলিকম কোম্পানী ওরাসকম সে দেশে একটি তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রি জি) মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করছে। রাজধানী পিওংইওং প্রথমে এই নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে এবং অচিরেই তা অন্যান্য বড় শহরেও প্রসারিত হবে। ওরাসকম অবকাঠামো ও লাইসেন্স ফির জন্যে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। উত্তর কোরিয়ায় এরকম বৃহৎ বাণিজ্য উদ্যোগ নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞই প্রশ্ন তুলেছে যেখানে সেদেশের অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় আছে। আইটিপি নেট ব্লগে মার্ক সাটন মনে করছেন যে ওরাসকমের হয়ত এই প্রকল্প নিয়ে সুদুরপ্রসারী ভাবনা রয়েছে।
অবশ্যই, ওরাসকম হয়ত দীর্ঘমেয়াদী একটি বিনিয়োগ হিসেবেই একে বিবেচনা করছে এবং আশা করছে উত্তর কোরিয়া আস্তে আস্তে উন্মুক্ত হবে। দেশটির একনায়কতান্ত্রিক নেতা কিম জং ইল এর ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা রয়েছে। ওরাসকম গ্রুপের আরও অনেক বিনিয়োগ রয়েছে এ দেশে যেমন তাদের একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরীতে ৫০% বিনিয়োগ রয়েছে এবং রিউগইয়ং হোটেলের পুন:নির্মাণ কাজ তারা করছে। এটি রাজধানীর একমাত্র বিলাসবহুল ও নামকরা হোটেল, যা গত ত্রিশ বছর ধরে নির্মানরত অবস্থায় ছিল।
এরাসকম গ্রুপ সম্পর্কে তথ্য উইকিপিডিয়ায় পাবেন।
রিস্কওয়াচডগ নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন এবং স্মরণ করিয়েছেন যে এর আগে আরেকটি মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের পরিণতি কি হয়েছিল:
তবে উৎফুল্ল হবার কিছুই নেই। আমার মতে এই মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক প্রসারে বাধা পাবার বেশ কয়েকটি সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমত: এই দশকে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার উত্তর কোরিয়া একটি মোবাইল নেটওয়ার্ক নির্মাণে হাত দিল। একটি রুগ্ন নেটওয়ার্ক চালু হয়েছিল ২০০২ সালে কিন্তু দু বছর পরে এটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কারন সরকারী কর্তৃপক্ষরা অনুমাণ করেছিলেন যে উত্তরের শহর রিয়োংচেন রেলওয়েতে যে বিশাল বিস্ফোরণ হয়েছিল সেটা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করা হয়েছিল। এই বিস্ফোরনকে ব্যাখ্যা করা হয় “প্রিয় নেতা” কিম জং ইলকে মারার একটি চাল হিসেবে, যার ব্যক্তিগত ট্রেনটি ঐ স্থান দিয়ে কয়েক ঘন্টা আগে গিয়েছিল।
রিয়েংচন ট্রেন দুর্ঘটনা সম্পর্কে তথ্য পাবেন এখানে।
রিস্কওয়াচডগ তিনটি কারন ব্যাখ্যা করেছেন যে কেন পিওংইয়ং মোবাইল ফোন সম্পর্কে ভীত। তাদের একটি হচ্ছে:
তারা জনসাধারণের একে অপরের সাথে অবাধে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেবে (এটাই মূল ব্যাপার!)। এটি হয়ত সরকার বিরোধী কার্যক্রম আয়োজনে সহায়তা করবে – যেমন প্রতিবাদ অথবা স্যাবোটাজ। উদাহরণস্বরুপ, ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি যোসেফ এস্ট্রাডাকে উৎখাত করার জন্যে যে জনপ্রিয় বিপ্লবটি হয়েছিল তাকে “টেক্সট মেসেজ” বিপ্লব ও বলা হয়। কারন মোবাইলের টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে বিক্ষোভের আয়োজন ও পরিচালনা হয়েছিল। মোবাইল ফোন সাংগঠনিক অপরাধের প্রসারেও সহায়তা করে এবং কালোবাজারীরা একে অপরের সাথে তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যমে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পারে।
এমন হতে পারে যে উত্তর কোরিয়াতে মোবাইল ফোন শুধুমাত্র উচ্চশ্রেণীর জনসাধারণ, ব্যবসায়ী, সেনাবাহিনী এবং বিদেশী কুটনীতিকদের কাছেই শুধুমাত্র সহজলভ্য হবে। যদি নেটওয়ার্ক কোন বাধা ছাড়া উন্মুক্ত হয়ও অনেক উত্তর কোরিয়াবাসীই হ্যান্ডসেট কেনার অর্থনৈতিক সামর্থ নেই। তবুও যোগাযোগের এই নতুন নেটওয়ার্ক অবশ্যই অগ্রগতিরই একটি চিহ্ন।