এইচআইভির প্রকোপ কামানোর জন্যে ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশ এবছরের প্রথম দিকে একটি বিতর্কিত প্রস্তাব দিয়েছে, যে বিয়ের আগে দম্পতির জন্যে এইচআইভি টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হবে। একই ধরনের টেস্ট অন্যান্য কিছু ভারতীয় প্রদেশেও প্রস্তাব করা হয়েছে, যেমন কর্নাটক, গোয়া এবং অন্ধ্র প্রদেশ।
এই প্রস্তাবিত বিল ভারতে বিপুল আলোচিত সাম্প্র্রতিক এক বিতর্কের পালে আরও হাওয়া দিয়েছে যে বিবাহ-পূর্ববর্তী এইচআইভি টেস্ট কি এইডস রোধে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ হবে কি না? ভারতে নব্বুইয়ের দশকে এইচআইভি ভাইরাসের বিস্তারের হার আকাশচুম্বী হয়েছে এবং বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী সে দেশে প্রায় ২৫ লাখ এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত লোক রয়েছে। এই ব্যাপক প্রকোপ সত্বেও জাতীয় এইডস নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (নাকো) বাধ্যতামূলকভাবে নয়, স্বইচ্ছায় এইচআইভি পরীক্ষার জন্যে বলে।
ব্লগ.বায়োএথিকস.নেট বলছেন যে এই ধরনের বাধ্যতামূলক নীতি ভারতের জন্যে নতুন কিছূ সমস্যার সৃষ্টি করবে:
“এই বাধ্যতামূলক পরীক্ষার নীতি কি এক নতুন শ্রেণীর অচ্ছুত মানুষ তৈরি করবে? এই নীতি ভারতের মহিলাদের কিভাবে রক্ষা করবে যারা বিয়ের পর বহুগামী স্বামীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়? এইচআইভি আক্রান্ত লোকেরা কি ভবিষ্যতে শুধুমাত্র অন্যান্য এইচআইভি আক্রান্ত জীবনসঙ্গীকেই খুঁজে নিতে শুরু করবে (এই প্রবনতাকে সেরোসর্টিং বলা হয়)?
সিটিজেন নিউজ সার্ভিসের ববি রমাকান্ত যুক্তি দিচ্ছেন যে এই ধরনের নীতি একজন মানুষের ব্যাক্তি স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করে এবং এইচআইভি আক্রান্ত হবার পর সে যে সমস্ত পক্ষপাতিত্ব আর ঘৃণার মুখোমুখি হয় সেগুলো দুর করতে কোন সাহায্য করে না। এই নীতি হয়ত কার্যকরী না হতে পারে, কারন শুধু একটি এইচআইভি পরীক্ষা মানুষের স্বভাবের (সুরক্ষাবিহীন যৌনসম্পর্ক) পরিবর্তন ঘটায় না যেটা দরকারী এইচআইভি ভাইরাস ছড়ানো রোধ করতে:
“আমাদের ইতিমধ্যে অর্জন হয়েছে যে বিষয়টি যে আমরা এদের আলাদা কোন স্থানে রেখে সেবা করতে চাই না সেটি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের এই নীতির ফলে হারাতে বসেছি আমরা। কারন এই নতুন নীতিতে এইচআইভি আক্রান্ত লোকদের সেবা, রোগমুক্তি বা আশ্রয় ইত্যাদি কোন চিন্তা নেই।”
কুইয়ার ইন্ডিয়া এক পা এগিয়ে বলেছেন এই চিন্তা বোকামী:
এই ধরনের উদ্ভট চিন্তা অচিরেই ভয় আর অজ্ঞতার এক পরিবেশে গেঁড়ে বসবে যেখানে যৌনতা সম্পর্কে কথা বলাও খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয়।
যদিও রিজন ফর লিবার্টি মতামত দিচ্ছে যে এই নীতি হয়ত কোন (পরিকল্পনার) কার্যকরী প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে, যেখানে ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে এইচআইভি ছড়িয়ে যাচ্ছে। বিবাহ-পূর্ববর্তী এইচআইভি পরীক্ষা হয়ত একটি সমাধান হতে পারে তবে সাথে সাথে বেশ্যাবৃত্তিও আইনগতভাবে স্বীকার করে নেয়া উচিৎ। এ ছাড়া যৌনতা সম্পর্কে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করে ভারতে এইচআইভির প্রকোপ কমানো যায়।
“সমস্ত নড়বড়ে সংস্কার এবং সংস্কৃতি থাকা সত্বেও চোখ বন্ধ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণী নিরাপদে আছে এমন ধারণা অমূলক। আসলে আমার মনে হয় মধ্যবিত্তদের সবচেয়ে বেশী সম্ভাবনা রয়েছে এইচআইভি আক্রান্ত হবার। যখন মধ্যবিত্ত শ্রেণী (সঙ্গী নির্বাচনে) রাশিফল মেনে বিয়ে করতে পারে তাহলে কারা কেন এইচআইভি পরীক্ষা মেনে নিতে পারবে না?
মাহিমা, যিনিও বাধ্যতামূলকভাবে এইচআইভি পরীক্ষার সমর্থন করেন, বলছেন যে আসল প্রশ্নটি হচ্ছে এই পরীক্ষার প্রয়োগ কিভাবে হবে।
যে সব কর্তৃপক্ষের কাছে এই সব পরীক্ষার ফলাফল থাকবে, এই ক্ষেত্রে প্রাদেশিক সরকার, কেউ কি নিশ্চিত হতে পারে যে এটি এইচআইভি আক্রান্ত লোকদের নির্মূল করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ব্যবহার করা হবে না? কিন্তু আমরা যদি আশাবাদী হই, তাহলে কেন ভাবছি না যে এই পরীক্ষার কারনে যুবারা- এমনকি বিবাহিত দম্পত্তিরাও তাদের যৌন ব্যবহারে সংযত হবে (যদি এই পরীক্ষা কিছূ দিন অন্তর অন্তর করা হয়)। কারন শেষ পর্যন্ত এটি একটি অভ্যাসগত অসুখ আর যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে পুরোপুরি এটা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ।
সাক্ষী এই বিতর্কের উভয় দিকের সারসংক্ষেপ করেছেন। যদিও তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া বাধ্যতামূলক এইচআইভি পরীক্ষা সম্পর্কে ধণাত্বক ছিল, কিন্তু এখন তিনি এ নিয়ে দ্বিধায় আছেন।
“এসবের মোদ্দা কথা হলো বিবাহপূর্বক এইচআইভি পরীক্ষা দম্পতিকে সুখি জীবনের অধিকার দেয় যা তারা চাইলে নিতে পারে। কিন্তু আমাদের এই রোগ সম্পর্কে আগে থেকে ঠিক করা ধারনা , আমাদের পরিবারের অস্বস্তি আর সমাজের মানসিক প্রতিবন্ধকতা আমাদের অনেককে এই অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত করবে। কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের আগে থেকে ঠিক করে রাখা ধারণার মতো অকিন্চিতকর কিছু জীবন মৃত্যুর ব্যাপার হতে পারে।
আর তাই আমি বিশ্বাস করি যে এটি সহজভাবে একজনের অধিকারের প্রশ্ন। আপনার কি মনে হয়?
ছবি: মহারাষ্ট্রের বধুর চিত্রকলা ফ্লিকার ব্যবহারকারী ইয়াশআরজির সৌজন্যে