বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনা: স্রেব্রেনিচা বার্ষিকী

গতকাল, জুলাই ১১ তারিখে, বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনা স্রেব্রেনিচা হত্যযজ্ঞের ১৩তম বার্ষিকী উদযাপন করল। হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত বছর একে অত্র অঞ্চলের মুসলমানদের উপর গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে।

ব্লগ বসনিয়া নিউজ জানাচ্ছে যে নতুন ভাবে ৩০৭ জন গণহত্যার শিকারদের দেহাবশেষ আবিস্কৃত হবার পর তাদের স্রেব্রেনিচার অদুরে পতোকারী মেমোরিয়াল সেন্টারে এক স্মরণ অনুষ্ঠানের পর সমাহিত করা হয়। সেখানে আরও ৩০০০ গণহত্যার শিকারের কবর রয়েছে।

এই ৩০৭ জন (১৫ থেকে ৮৪ বছর বয়সী) গণহত্যার শিকারদের দেহাবশেষ ১৯৯২-১৯৯৫ সালে বসনিয়ায় সার্বিয়ানদের আক্রমনের পর বিভিন্ন গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের সনাক্ত করা হয়েছে।

শোক প্রকাশকারী সমবেত লোকদের জন্যে প্রার্থণার নেতৃত্ব দেয়া ধর্মীয় নেতা ও বসনিয়ান ইসলামিক সমাজের প্রধাণ রেইসুল উলেমা মুসতাফা এফ ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের কাছে আবেদন করেছেন যে জুলাই ১১ তারিখকে সারা বিশ্ব জুড়ে স্মরণ করার সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে।

ইয়াকিমাগুলাগলিটারেরীগ্যাজেট এই দিনটির কথা তার ব্লগে লিখেছেন:

হাসান নুহানোভিচ টিভিতে বেশ কয়েকবার এসেছেন। সে আমার প্রতিবেশীও ছিল এবং তাই প্রায়ই বাসে তার সাথে দেখা হতো। সে তার ছেলে ও স্বামীকে এই গণহত্যার ফলে হারায়। আমি জানতাম এই মহিলার চেহারা খুবই পরিচিত। তাকে গত কাল প্রচারিত “কবর থকে কান্না” ও অন্যান্য ডকুমেন্টারীতে দেখিয়েছিল।

আজ এই গণহত্যায় নিহতদের জন্যে একটি সরকারী স্মরণ দিবস।

অনেক ফেসবুক গ্রুপ তৈরি হয়েছে স্রেব্রেনিচা গণহত্যা স্মরণের জন্যে, যেমন ‘ইতিহাস থেকে শেখ: বসনিয়ান গণহত্যা স্মরণ’ (৬,৬০০ সদস্য) অথবা স্রেব্রেনিচার ১১.০৭.১৯৯৫ এর ঘটনা কখনও ভুলনা  (৪,২০০ সদস্য)। গতকাল, এই স্যোশাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে একটি অনলাইন স্মরণ উদ্যোগও অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

প্রথম ফেসবুক গ্রুপ ১৯৯৯ সালের জনপ্রিয় বিবিসি ডকুমেন্টারী ‘কবর থেকে কান্না‘র সব কয়টি পর্বের লিন্ক তুলে ধরে (প্রথম পর্ব এখানে দেখুন)। বসনা মুসলিম- মিডিয়া ব্লগ পরবর্তীতে প্রচারিত ‘নেভার এগেইন‘ নামের একটি চলচ্চিত্র দেখার অনুরোধ করছে এবং এর একটি ভিডিওরও লিন্ক দিয়েছে:

এই দ্বিতীয় চলচ্চিত্রটি তৈরি করা হয়েছে দেখানোর জন্যে যে গণহত্যার পরবর্তী দিন গুলোতে কি ঘটেছে। যারা তাদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছে তাদের জন্যে কোন কিছু কি করা হয়েছে? কিছূ অপরাধীদেরকে বিচারের সম্মুখীন কি করা সম্ভব হয়েছে? বিশ্ব কি ১৯৪৫ সালের (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের) পর ইউরোপে সংঘটিত সবচেয়ে মারাত্মক হত্যাযজ্ঞকে স্মরণ করার জন্যে কোন ভুমিকা নিয়েছে?

প্রায় একমাস আগে গণহত্যার শিকারদের ৬০০০ আত্মীয়দের নিয়ে ‘মাদার্স অফ স্রেব্রেনিচা’ নামক সংগঠনটি নেদারল্যান্ড এবং জাতিসংঘের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তারা বসনিয়ান-সার্ব সেনাবাহিনী কর্তৃক ৮০০০ বসনিয়ানের হত্যাযজ্ঞ রুখতে ব্যর্থ হয়েছে। স্রেব্রেনিচা হত্যাযজ্ঞের বার্ষিকির এক দিন আগে, ডাচ কোর্ট ঘোষণা করে যে এই কেস শোনার জন্যে তাদের কোন জুরিস্ডিকশন নেই কারন জাতিসঙ্ঘ ইমিউনিটির আওতায় রয়েছে। যদিও পূর্ব এথনিয়ার এরিক গোর্দি বলেছেন “জাতিসঙ্ঘের কর্মীদের দায়িত্ব ছিল যাদের রক্ষার কেউ ছিল না তাদের রক্ষা করা”। ডাচ সরকারের বিরুদ্ধে হিয়ারিং অবশ্য সেপ্টেম্বারে অনুষ্ঠিত হবে।

এই রুলিং সম্পর্কে ব্লগ সামাহা মন্তব্য করেছেন:

জাতিসঙ্ঘের মত প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব কনভেনশনগুলো ভঙ্গের দায়ে যদি জবাবদীহিতা করা না যায় তাহলে তারা তা অন্য দেশের উপর সেগুলো চাপাতে পারবে এই নিশ্চয়তা কে দেবে? যদি সদস্য দেশগুলো জাতিসঙ্ঘের ইমিউনিটিকে তাদের ব্যার্থতা ঢাকতে ব্যবহার করে তাহলে কি করে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে শান্তিরক্ষা বাহিনী সংঘর্ষে কি করে পক্ষপাতিত্বহীন থাকবে? জাতিসঙ্ঘ যখন তার ম্যান্ডেট পূরণে নিরাশ হয় বা অনিচ্ছা প্রকাশ করে তাহলে এই উদাহরণ কি করে অন্যান্য গণহত্যা ঘটানো রুখবে?

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .