জাপান: ৫৩ বছর আগের মৃত্যুদন্ড সম্প্রচার

৫৩ বছর আগে জাপানে রেকর্ড করা একটা মৃত্যুদন্ডের অডিও টেপ যা গত ৬ই মে নিপ্পন সাংস্কৃতিক সম্প্রচার এ আর ২৯শে এপ্রিল আসাহি টেলিভিশনের সুপার মর্নিং শো তে দেখানো হয়েছে, তা এখন দেশের ব্লগারদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং দেশের মৃত্যুদন্ড প্রথার ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ৫০ মিনিটের এই অডিও রিপোর্ট যেখানে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির জীবনের শেষ মুহুর্তগুলোর কথা আছে, এই প্রথম যা সবার জন্যে উন্মুক্ত করা হল। এটি প্রচারিত হল জাপান যখন নাগরিক বিচার ব্যবস্থার প্রয়োগের দিকে যখন যাচ্ছে তখনই আর অতি আলোচিত হিকারি হত্যা মামলা নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে।

হ্যাপি রোড ব্লগে একজন ব্লগার লিখেছেন:

অবশ্যই আমি এটা শুনেছি। ৬ই মে তে নিপ্পন সাংস্কৃতিক সম্প্রচার একটি টেপ শুনিয়েছে যা ৫৩ বছর আগে একটি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার সময় কালে রেকর্ড করা হয়েছিল। ১৯৫৫ তে এই টেপ রেকর্ড করা হয়েছিল যাতে ওসাকা ডিটেনশান সেন্টারের প্রধান পর্যালোচনা করতে পারেন মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত কয়েদিদের সাথে কি ধরনের ব্যবহার করা হয়। ৫৫ মিনিটের এই অনুষ্ঠানে আসামির নাম বলা হয়নি, আর মৃত্যুদন্ডের আগের দিন আসামির বড় বোনের সাথে কথার ১০ মিনিটের একটা টেপ আছে আর ফাঁসির সময়েরও। ফাঁসির আসামি তার বোনকে বলেছে, “কেঁদো না, আমরা হাসতে হাসতে বিদায় নেই।” আর ফাঁসির ঠিক আগে জেল রক্ষীর সাথে তার একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপ হয়। পায়ের নিচের বোর্ড সরার আওয়াজ শোনা যায় যখন সূত্র (বৌদ্ধ মন্ত্র) পাঠ করা হচ্ছে তখন। আমার ভাবনা হল…হুম। চারিদিকে এত জঘন্য অপরাধের মধ্যেও এক পলকের জন্যে আমি মৃত্যুদন্ড প্রথা তুলে দেয়ার কথা চিন্তা করেছিলাম।

বেশ কিছু ব্লগার নিপ্পন সাংস্কৃতিক সম্প্রচারের পক্ষপাতিত্ব মূলক এই প্রচারের বিরুদ্ধে বলেছেন। ব্লগার মোরিরি বলেছেন:

আমি বলবো না যে আমি মৃত্যুদন্ডের পক্ষে, কিন্তু আমি তা তুলে দেয়ার বিপক্ষে, আর সেই প্রেক্ষিতে নিপ্পন সাংস্কৃতিক সম্প্রচারের এই প্রচার আমার কাছে একপেশে মনে হয়েছে। এখানে আসামির মৃতুদন্ডাদেশ পাওয়া আর তা কার্যকর হওয়া আর শুধু তার কথা শোনা গেছে, আর তাই আমার কাছে এটা একপেশে মনে হয়েছে। এটা স্পষ্ট ওই আসামির পক্ষের একটা সম্প্রচার, আর এটা স্বাভাবিক যে এটার ফলে মানুষ ‘মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের ফাঁসি কার্যকর ব্যাপারে দু:খিত হবে'। কিন্তু আমরা যদি এটা মেনে নেই যে এই ফাঁসির আসামি আসলেই অপরাধী, তাহলে যথাযথ ব্যাখ্যা নিশ্চয় আছে যে কেন তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হল। তাহলে এটা একটা ঠিক সম্প্রচার হবে।

ব্লগার তাকাও ইয়োশিকি তর্ক করেছেন যে মৃত্যুদন্ডের দায় শিরি – টোরি খেলার মাধ্যমে জাপানী নাগরিকের উপর বর্তাচ্ছে:

আসুন শিরি-টোরি খেলি (জাপানি শব্দ খেলা)। কে মৃত্যুদন্ডের সময় পায়ের নিচের তক্তা সরাবে? কারন বিচার মন্ত্রীর কাছ থেকে একটা কাগজ এসেছে। কিন্তু বিচার মন্ত্রী তার সিল এই কাগজে কেন দিয়েছেন? কারন সে বিচার মন্ত্রী হয়েছে। আমি তখন ভাবলাম সে বিচারমন্ত্রীর দায়িত্ব কেন নিল? কারন নাগরিকরা তাকে বেছে নিয়েছে। আর এখানে এই শিরি-টোরির খেলা শেষ হয়। অন্য কথায় যেহেতু লজিক যেহেতু প্রথম অবস্থানে ফিরে গেছে যেখানে নাগরিকরা পার নীচের তক্তা সরাচ্ছে, তাই এটা সরানোর ব্যাপারটা নাগরিকদের কাছে সম্প্রচার করা যেতে পারে। মানুষ এই সম্প্রচারের ব্যাপারে তাদের মতামত মুক্তভাবে জানাতে পারে, আর স্বাভাবিকভাবে তারা যাকে খুশি বিচারমন্ত্রী করতে পারে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .