খৎনা: এইডসের বিরুদ্ধে এক প্রতিষেধক!

সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বৈজ্ঞানিক গবেষনায় দেখা গেছে খৎনা করা পুরুষদের এইচআইভিতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নাটকীয় ভাবে অনেক কম। এইচআইভি ভাইরাস মরণ ঘাতী ব্যাধি এইডসের কারন। অনেক আফ্রিকান দেশের সরকার এখন এইডসের বিরুদ্ধে অন্যান্য প্রতিরোধ পদ্ধতির পাশাপাশি পুরুষদের খৎনা করার জন্য উৎসাহ প্রদান করছে।

তিউনিশিয়ার ব্লগার জিয়েদ একজন ডাক্তার ও জন স্বাস্থ্য কর্মী। তিনি তার জিজু ফ্রম জেরবা নামক ব্লগে এই বিতর্কিত বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন তার সাম্প্রতিক লেখায় যার নাম “খৎনা, এইডসের বিরুদ্ধে এক প্রতিষেধক?” (ফরাসী ভাষায়)

প্রথমে এল প্রতিষেধক টিকা, এরপর গর্ভ নিরোধক বড়ি, এরপর কনডম, এখন সময় এসেছে খৎনা করার। হ্যা, সাম্প্রতিক সময়ের কিছু গবেষণা দেখাচ্ছে কয়েক দশক ধরে অন্যরা যা দাবি করে ( দাবির সত্যতা রয়েছে) খৎনাকারীদের এইডস ভাইরাস ছড়ানো হার কমে আসে, শতকরা ৬০ ভাগ—অবিশ্বাস্য , না ? এবং আমরা যারা সবসময় বিস্মিত হতাম কেন উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যে এত কম হারে এইডস ছাড়াচ্ছে? যদিও এই মহা মারি সম্বন্ধে এ অঞ্চলের লোকদের ধারণা অনেক কম। কিন্তু কেন এত কম এইডস হচ্ছে তার উত্তর আমাদের কাছে আগেই রয়েছে: খৎনা।

এটা পরিষ্কার যে এই বাস্তবতা নিজে একাকি কিছু করতে পারে না। কিন্তু এর পাশাপাশি যা আছে তার মাধ্যমে আমরা একটা অবিশ্বাস্য কিছু ঘটার আশা করতে পারি- রুয়ান্ডা ইতিমধ্যে এক বিশাল আকারে খৎনা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। একই সময়ে আরো অনেক দেশ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছে এবং তারাও একই ধরনের কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনা করছে। অবশ্য খৎনা প্রথার বিরোধীরা সংখ্যা কম নয় । এখন এই বিতর্ক বিজ্ঞানী , ধার্মিক এবং অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করছে। অনেকে এখনও মনে করেন এই মহামারী আকারের ঘাতক ব্যাধিকে রুখতে কনডমই একমাত্র ও সত্যিকারের প্রতিরোধক ব্যবস্থা। অন্যরা মনে করেন খৎনা এক বর্বর প্রথা যা মিলনের আনন্দকে কমিয়ে দেয়। আবার আরেক দল মনে করেন কারো অনুমতি ছাড়া কারো চামড়া কাটা অনৈতিক ব্যাপার।

সবাইকে একমত করা আসলেই কঠিন ।

খৎনা ও ইসলাম:

পাঠক করিম২কে  প্রশ্ন করেছেন জিয়েদ কি বলার চেষ্টা করছেন যে “ইসলামের সুফলকে ধন্যবাদ, এতে শরীর এবং আত্মা পবিত্র হবে?”

মুসলিমরা সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশী পরিমানে খৎনা করে থাকে। কিন্তু অনেক পাঠক মনে করেন না এটি ইসলাম প্রচার করার চেষ্টা।

একজন বেনামী পাঠক লিখেছেন:

কে ইসলাম নিয়ে কথা বলছে? ইহুদিরাও খৎনা করে থাকে। তাদের মধ্যে এর চর্চা রয়েছে। এই ধরনের একপেশে ভাবনা গুলো বাদ দিন।

আরেকজন পাঠক উইকিপিডিয়ার রচনা থেকে খৎনার বিষয়টি তুলে ধরেন। প্রাচীন মিশরে খৎনার চর্চা ছিল এবং এখনও বিশেষ খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে খৎনা প্রথা চালু রয়েছে।

কোন রুপার বুলেট নয়

অবশ্যই খৎনা নিয়ে প্রচারনার বিপদ হচ্ছে বিষয়টিকে এইডস প্রতিরোধক হিসেবে দেখানো। এতে অনেক মানুষ বিপদজনক ভাবে বা ভয়াবহ ভাবে বিষয়টিকে ভুল বুঝতে পারে। এতে তারা মনে করতে পারে খৎনা করার পর তাদের আর এইডস প্রতিরোধে কনডম ব্যবহার করার দরকার নেই।

পাঠক তারেক ঠিক এই বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন।

আমি মনে করি যদি জনগণ মনে করে যে খৎনা এইডস ছড়ানো প্রতিরোধ করেন তা হলে তা বিপদ জনক হবে। খৎনা এইডস ছড়ানোর ঝুঁকি কে খানিকটা কমিয়ে দেয় মাত্র।

জিয়েদ বুঝতে পারে হয়ত সে আসলে এরকম ধারণাটি দিতে চেয়েছে। সে ইসাবেল নামের এক পাঠিকার মেইল পেয়ে সে তার লেখার আংশিক সংশোধন করেছেন।

আমারও ঠিক একই অনুভূতি ছিল যখন আমি এইচআইভি ছাড়ানো সম্বন্ধে এই জেবরায় এই একই আওয়াজ শুনি যে খৎনা করা মানুষদের এ ব্যাপারে কোন ভয় পাবার কিছু নেই এবং তাদের কনডম ব্যবহার করার কোন প্রয়োজন নেই । কারন এক সাম্প্রতিক গবেষণায় বিষয়টি আবিষ্কার হয়েছে, যে খৎনা করা মানুষদের এই রোগ ছড়ানোর ভয় নেই। এটি পুরোপুরি ভ্রান্ত ধারণা। এক সাম্প্রতিক গবেষণায় পরীক্ষা করে দেখা গেছে এইডস ছড়ানোর বিপদ কম শুধু খৎনা করা মানুষদের জন্যে কিন্তু তার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর জন্য বিপদ ঠিকই থাকে। কারন এই ভাইরাস বিশেষ ক্ষেত্রে শুষ্কতায় খুব সংবেদনশীল।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .