ইথিওপিয়ার ব্লগারদের গোপন আদালত রির্পোটার হিসেব আত্মপ্রকাশ

ইথিওপিয়ার ব্লগাররা গোপন কোর্ট রির্পোটার হিসেবে শতাধিক রাজনৈতিক বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী, আন্দোলনকারী জনতা এবং সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা বির্তকীত একটি মামলার রির্পোট প্রকাশ করে যাচ্ছে তাদের ব্লগে।

২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত সাধারন নির্বাচনের পর থেকেই বিরোধী দলের প্রধান নেতাদের গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, দেশদ্রোহীতা থেকে শুরু করে আরো অনেক গুরুঅপরাধের দায় চাপানো হয়।

অসংখ্য স্থগিতকরন, ছুটিছাটা সহ সাক্ষীদের বিশেষ বক্তব্য সহ, এই মামলা প্রায় এক বছর ধরে চলছে। মূল ধারার সাংবাদিকরা মূলত: বিষয়টার প্রধান ধারার অগ্রগতির দিকে নজর দিয়েছে – মামলা শুনানী, শহর রক্ষাকারী সংস্থার শুনানী এবং প্রধান আইনগত বক্তব্য।

কিন্তু এই ফাঁকা জায়গাগুলো ভরে দিয়েছে ইথিওপিয়ার রাজনীতি সচেতন সুলেখক ব্লগারেরা যারা কোর্টে দর্শকের একটি জায়গা পেতে সক্ষম হয়েছেন।

Seminawork গত কয়েক সপ্তাহের মামলাগুলোর প্যাঁচ, বাক এসমস্ত নিয়ে পরপর বেশ কয়েকটা পোস্ট করেছেন। তার পোস্টগুলো ছিল মোটদাগের এবং এসেছেও দ্রুত। ‘কোর্ট কালকের জন্য স্থগিত থাকবে‘, তারপর পরই ‘পরিত্যক্ত হবার ঘোষনা‘, তার পর পরই ‘চাঞ্চল্যকর সংবাদ: আদালতে বিরোধীদের তাদের মামলা বিরুদ্ধে কথা বলা মানা‘, সবশেষে ‘মৃত্যু হাতছানি দিচ্ছে আমাদের জননায়কদের‘।

শেষ পোস্টে ছিল:

কিনিজিৎ [প্রধান বিরোধী জোটের নাম] নেতাদের, অরাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য এবং স্বাধীন সাংবাদিকদের দেশদ্রোহীতা এবং গণহত্যা বিচারের দায়িত্বে থাকা আদালত আজ নিয়ম করে দিয়েছে যে সমস্ত কিনিজিৎ কাউন্সিল সদস্যরা, যাদের মধ্যে রয়েছে হাইলু সোয়ায়েল, বারহেনু নেগা এবং বিরটুকান মিডেস্কা, দেশদ্রোহীতার দায়ের বিরুদ্ধে মামলা লড়বে।

আদালত দাবী করেছে যে কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের কারন-ফলাফল সুত্র ধরেই জুন ৮ এবং নভেম্বরের উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। আদালত এও দাবী করেছে যে তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার যথেষ্ট প্রমান রয়েছে।

নেতারা আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে মামলার প্রতিরোধ করবেন না। যদি তারা আগের এই সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন তার মানে দাঁড়াচ্ছে তাদের দেশদ্রোহীতার অপরাধে শীঘ্রি সাজা হতে যাচ্ছে। ইথোপীয়ার আইনে দেশদ্রোহীতার সাজা হিসেবে মৃত্যুদন্ড বা কঠিন কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।

The Other Side তাৎক্ষনিক নাটুকে সময়ের ঘটনা বর্ণনা করেছেন যখন আইনগত সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছিল:

তার শেষ শব্দ উচ্চারনের সাথে সাথে, এমনকি তার সাজা ঘোষনা শেষ হয়েছে এমনটা বোঝার আগেই – বিচারক আদিল চট করে ঘুরে ছুটে বেরিয়ে যান পিছনের দরজা দিয়ে, সেই সাথে অন্য দুজন বিচারকও তাকে অনুসরন করেন।

এটা পরিষ্কার ছিল যে কেউই, দোষীরা তো নইই, এরকম ফলাফল আশা করেনি। পরিবারের সদ্যসের কাছে সংবাদ পৌছলে রাগ, ক্লান্তি আর দু:খের এক মিশ্রন লক্ষ্য করা যায়। “আইজুয়াচিহু! আইজুয়াচিহু!” [সাহস! সাহস!] শব্দের রোল ওঠে রুমের দুধার থেকে, বন্দীরা স্থীর সাহস দিয়ে তাদের পরিবারকে উৎসাহ দিতে থাকেন। আদালত আবার কালকে বসবে।

সরকার বিরোধী দলের নেতাদের এই বলে দায়ী করেছেন যে দুই দফা সাধারন মানুষের মধ্যে অস্থিরতার মাধ্যমে তারা দেশকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ২০০৫ এর জুন এবং নভেম্বরে দু'শরও বেশী লোক মারা যায়, যখন সরকার-বিরোধী প্রতিবাদীরা অস্ত্র সজ্জিত পুলিশ এবং সৈন্যদের সাথে দেশের রাজধানী আদ্দিস আবাবা এবং অন্যান্য শহরে গোলযোগ সৃষ্টি হয়। বিরোধীদের মদদকারী, যাদের মধ্যে রয়েছে ইথিওপিয়ার প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক ব্লগার, এই দায় অস্বীকার করেছে এবং এই দীর্ঘ আইনি মামলাকে রাজনৈতিক প্রহসন বলে আখ্যায়িত করেছেন।

Carpe Diem Ethiopia অনেক সরকার বিরোধী ব্লগারদের হয়ে কথা বলেছেন তার পোস্ট An Ethiop Office Rant – এ

ইথিওপিয়ার গণতন্ত্র একজায়গাতেই স্থির হয়ে আছে: আন্দাজ করা যায়, দেশদ্রোহীতা এবং গণহত্যার চেষ্টা মামলা বার বার ব্যাহত হওয়া এবং হাইর্কোট বিচারকদের সিদ্ধান্তে আসার অনিচ্ছা (এবং/বা অক্ষমতা) আসলে সরকারী চাপের মুখে হয়েছে। মানবতা অধীকার চর্চা বিষয়ক ২০০৬ সালের ইউএস কাউন্টি রির্পোট অনুযায়ী একটা লম্বা লিস্ট তৈরী করা যায়।

ইথোপিয়ার ব্লগমন্ডলে অন্যান্য অনেক জায়গায় বেশ কয়েকজন কামিলাত নামের এক মহিলার ঘটনার উপর আলোকপাত করেছেন, যাকে একজন দুষ্টলোক এসিড নিক্ষেপ করেছে। Meskel Square বলেছেন এই ঘটনা আসলে ইথিওপিয়ার নারীদের বিপদটাকে তুলে ধরে। Seminawork এর নতুন সামগ্রিক ব্লগ Ethio-Zagol Post Diaries, ‘কামিলাতের জন্য প্রতিবাদ‘ নামের পোস্টে মহিলা হাসপাতালের সামনে সংগঠিত একটা প্রতিবাদ সমাবেশের বর্ণনা দিয়েছেন। Weblog Ethiopia মানুষের ভিতরের শয়তানের বিরুদ্ধে তার রাগ প্রকাশ করেছেন। The Concoction নামরে মহিলা ব্লগার এতটাই বিরক্ত হয়েছেন যে তিনি মহিলাদের উপর অপরাধের বিরুদ্ধে VAW – Do Something! নামে একটি পুরো ব্লগই খুলে ফেলেছেন।

Things We Should Have Written Down প্রকাশ করেছে ‘একটি দূর্ঘটনা‘ নামে গত দুই সপ্তাহের সবচেয়ে হৃদয়গ্রাহী পোস্ট যেখানে তিনি একটি দূঘর্টনার বর্ণনা করেছেন:

আমরা পাঁচজনই হাসি, গল্পগুজবে মত্ত ছিলাম আর মোড় ঘুরতেই দেখলাম একটা ট্রাক রাস্তার মাঝখানে পাশ করে উল্টে পড়ে আছে। গ্যাসোলিনের ঝাঁঝালো গন্ধে আমার নাক এবং গলার ভিতরটা ধরে এলো। ট্রাকের পাশে হাতে গোনা কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিল, আর একজন তার মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে ঘাসের উপর বসে ছিল। আমরা থেমে গেলাম এবং আমি দেখলাম খাড়া হয়ে থাকা এক প্যাসেঞ্জার ক্যাবের ভিতর থেকে একটি হাত বের হয়ে আছে। কে যেন ফিসফিস করে বলল, “এইমাত্র ঘটল ঘটনাটা”।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .