বড় দিনের প্রাক্কালে ডোমিনিকা,সেন্ট লুসিয়া,সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রানাডা সহ পূর্ব ক্যারিবীয় অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দ্বীপ ক্রান্তীয় ঝড়ে আক্রান্ত হয়, যার ফলে কয়েক ঘন্টার বৃষ্টি,ভয়াবহ বন্যা এবং ডজন খানেকের বেশী নাগরিকের মৃত্যু ঘটে।
অনেক আটকে পড়ে এবং বন্দী হয়ে যায় কারণ তারা বড়দিনের উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
সেন্ট লুসিয়া, যা এখনো ২০১০ সালে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় টমাসের আতঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছে, তা আরো একবার প্রবল বন্যা এবং দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিম অংশের বেশ কয়েকটি সেতু ধ্বংসের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে, যার ফলে কয়েকটি সম্প্রদায় অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তা উদ্ধার প্রচেষ্টার সময় মৃত্যুবরণ করে।
সেন্ট লুসিয়া এইমিং ফর প্রগ্রেস নামক অনলাইন গ্রুপে, বেশ কিছু নাগরিক বিশেষ প্রবাসের বেশ কয়েকজন নাগরিক, যাদের সাহায্য প্রয়োজন তাদের ত্রাণসামগ্রীর আয়োজন করেছে। ঝড়ের পূর্বে জাতীয় জরুরী দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংগঠন এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের জনস্বার্থে প্রদান করা তথ্য (অথবা এই বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য প্রদান না করার) নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
ওয়েনে ভিটালিস সেন্ট লুসিয়ার জরুরী দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রচণ্ড সমালোচনা করেছে :
মার্টিনিকের আবহাওয়া অফিস, রাডার ঠিকমত কাজ না করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সেন্ট লুসিয়ার আবহাওয়া অফিস রাডারের ত্রুটির কথা অস্বীকার করেছে… কিন্তু কয়েকজন লুসিয়ান নাগরিক অদক্ষতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এই অবস্থায় ঈশ্বরও আমাদের সাহায্য করতে অক্ষম! জাতীয় জরুরী দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জাতিকে যা বলেছে তার জন্য তাদেরকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে, নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং বিপর্যয়ে জাতির সাড়া প্রদানের ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধনে বিশৃঙ্খলতা/ সাড়া প্রদান না করার বিষয়টি আর উল্লেখ না করাই ভালো।
আনানিয়ায়া ভেরনুয়েইল বিস্মিত এই তথ্যে যে, ঘূর্ণিঝড়ের যে স্বাভাবিক সময় (জুন থেকে নভেম্বর), তার বাইরে অসময়ে এই ঝড় তৈরী হয়েছে, যা হয়ত এই সাড়া প্রদানের বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারে:
আমার মতে এই ব্যবস্থা ঘূর্ণিঝড়ের যে স্বাভাবিক সময় তার জন্য, আর তার ফলে এই সময় যে ঘূর্ণিঝড় হবে সেটি বিবেচনায় আনা হয়নি। এই বাস্তবতায় আমরা সকলে বিপদে পড়েছি। কিন্তু এটা ছিল একটা মধ্যবর্তী নিম্নচাপ যা এক অস্বাভাবিক এক বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে যা কিনা শুরু হবার আগে বিবেচনায় আনা সম্ভব হয়নি।
মিনার্ভা ওয়ার্ড ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে জবাব দিয়েছে এটা আশা করা খুব অন্যায় যে বড়দিনের সময় জরুরী বিভাগের কাছ থেকে সেবা পাওয়া যাবে:
এখন আমি আবিষ্কার করতে শুরু করলাম যে সত্যি এটা নিষ্ঠুর এবং আশা করা অন্যায় যে নেমো বা জরুরী দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং আবহাওয়া অফিস বড়দিনের প্রাক্কালে কাজ করতে থাকবে! আপনার কি জানেন না যে বড়দিনের সপ্তাহটিতে সরকারের সকল বিভাগ বন্ধ থাকে। আপনারা কি সত্যি আশা করছেন যে এ সময় সরকারের কর্মচারীরা কাজ করবে?? এ সময়ে নাগরিকরা কেনাকাটা করার জন্য বাইরে যায়, আর আপনারা এই অবস্থায় অর্থহীন এক বড় মাপের নিম্নচাপের জন্য তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করছেন। আসলে আপনারা অনেক বেশী আশা করেন!! আর যদি গোটা দেশটা সমুদ্রের জোয়ারে ভেসে যায়, তারপরেও আপনরা জেনে রাখুন এটা বড়দিন, আর আপনারা কি জানেন না সেন্ট লুসিয়ায় কি ভাবে সবকিছু চলে।
ফ্রেড ওয়ালকট অনুভব করছে যে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে প্রতিবেশী দ্বীপগুলোর সতর্কতা সঙ্কেত প্রদানের সময় কি ঘটেছিল তা জানতে পারলে সুবিবেচনার পরিচয় প্রদান করা হবে:
অন্য সব দ্বীপপুঞ্জ কি ভাবে এর মূল্য প্রদান করেছে? তারা কি যথেষ্ট পরিমাণ সতর্কতা বার্তা লাভ করেছিল? তারা কি প্রস্তুত ছিল? যদি তারা যথেষ্ট পরিমাণে সতর্কবার্তা গ্রহণ করে থাকে, তাহলে এর যদি কোন একটা প্রভাবও পড়ে থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে কি হবে? এটা নেমো অথবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের জনগণকে সতর্ক করতে ব্যর্থ হবার মত দায়িত্বহীনতার জন্য কোন ক্ষমা প্রার্থনার প্রচেষ্টা নয়। যথেষ্ট সঙ্কেত দেওয়ার ফলে বন্যা প্রবণ এলাকার লোকেরা উঁচু এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিতে উদ্বুদ্ধ হবে, বন্যার পানি প্রবাহের স্তর জানার জন্য কোম্পানি তাদের সংবেদনশীল যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে দিতে পারে এবং আদ্রতা প্রতিরোধী উপাদান দিয়ে কিছু এলাকা ঢেকে দিতে পারে। ইত্যাদি, ইত্যাদি। প্রাক দুর্যোগ উপশম প্রক্রিয়া গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন দ্বীপে সকল উপযোগী সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিপর্যয় প্রস্তুতির এক পরিকল্পনা থাকবে এবং তারা নিয়মিত বিপর্যয় সংক্রান্ত প্রস্তুতির অনুশীলন চালিয়ে যাবে।
এদিকে ডোমিনিকা, যে দেশটির নিজেকে ৩৬৫টি নদীর দেশ হিসেবে দাবী করে, সেখানে বন্যা হয়েছে, তবে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী রুজভেল্ট স্কেরিট হিসেব করে দেখিয়েছেন যে পুনর্বাসনের জন্য ব্যায় হবে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ইসিএস ডলার [পূর্ব ক্যারিবীয় ডলার]।
ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সেন্ট ভিনসেন্টে প্রাথমিক ভাবে আট জনের নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে (যাদের মধ্যে শিশুও আছে),এদিকে এখনো কয়েকজন নাগরিক নিখোঁজ রয়েছে বলে সংবাদে জানা গেছে। দ্বীপের প্রচার মাধ্যমের সংবাদ অনুসারে ঘূর্ণিঝড়ে, বিশেষ করে দ্বীপের উত্তর লিওয়ার্ড এলাকা ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, ই.টি. জোশুয়া বিমানবন্দর এবং মিল্টন কাটো মেমোরিয়াল হাসপাতাল পানি বন্দী হয়ে পরেছে। গ্রানাডা ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গেছে।
উপরের ছবিগুলো তামিকো সাবরিনা, জনসন জুজবে জেমস , লিনাস কাজুবান , নাটালিয়া ভাজান , এবং ইয়ুকানকা ডানিয়েলের l অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে