আজকে কাবুলের ভারত দূতাবাসের সামনে এক বিশাল আত্মঘাতি বোমা হামলায় প্রায় ৪০ জন নিহত আর শত শত লোক আহত হয়েছে। অনেক বিদেশী আর স্থানীয় লোকেরা বিষ্মিত যে কেন ভারতীয় দূতাবাসের সামনের লোকজনকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। এই দুতাবাস একটি শান্তিপূর্ণ আর নিরাপদ রাস্তায় অবস্থিত যেখানে বই আর বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান রয়েছে। স্থানীয় ব্লগাররা এই হামলার খুব কঠোর সমালোচনা করেছে যেহেতু এর সাথে কিছু জটিল ভুরাজনৈতিক বিষয় জড়িত আছে।
সাঞ্জার বলেছেন যে তালিবান এই হামলার দায় স্বীকার করেছে, আর ঘটনা পরবর্তী কিছু স্পশকাতর ছবিও দিয়েছে। এই ব্লগার গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছে যে সব সময় শুধু তালেবান বোমা হামলায় শত শত সাধারন মানুষকে মারে না, আমেরিকা আর ন্যাটো ও অনেক কম সময়ের ব্যবধানে এমন আক্রমণ করে:
আমি অবশ্য তর্কের অন্যদিকেও ছিলাম। ৯/১১ এর পর আমি একেবারেই দু:খিত ছিলাম না। আমি মনে করেছিলাম এটা একটা ঘটনা যেটার সম্পর্কিত ক্ষতি আমার অভিজ্ঞতার তুলনায় কিছুই না। আমার জীবদ্দশায় আমার পরিচিত প্রায় ২০ লাখ লোক মারা গেছে আর দেশের অর্ধেক লোক পালিয়েছে। আমি মনে করি আফগানিস্তানের জন্য ৯/১১ ভালো। পৃথিবী এত বিরক্ত হবে যে আর তালেবানকে সহ্য করা হবেনা আর তালেবান ছাড়া আফগানিস্তান অনেক ভালো একটা স্থান হবে। ৯/১১ তে যারা মারা গেছে তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক বা তাদের জন্য কোন সহানুভুতি আমার নেই, অন্য দিকে আমার দেশের যে ২০ লাখ লোক আমার জীবদ্দশায় মারা গেছে তাদের সাথে আমি গভীরভাবে সম্পর্কিত।
এই ঘটনায় আমার এখনের মত হলো; আমার ছোট ভাই যদি নিরাপদে বাড়ি আসে আর যেসব শিশু আহত বা নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে সে না থাকে, এটা একটা ভালো হামলা বিভৎস পারিপার্শিক ক্ষতিসহ। এটা একটা অবিবেচক পৃথিবী আর সবাই একটা উদ্দেশ্যে থাকে আর সামঞ্জস্যপূর্ণ ক্ষতি হয়ে থাকে। গতকালই আমেরিকানরা নাঙ্গারহার রাজ্যের একটা গ্রামের বিয়ের উৎসবে তালেবান সমাবেশ সন্দেহে হামলা করে ২৫ জনকে হত্যা করেছে; দুই দিন আগে আমেরিকানরা নুরিস্থানের একটা গ্রামে ভুল করে হামলায় ১৫ জনকে হত্যা করেছে।
আন্দ্রিয়া বলেছেন যে এই ধরনের তুলনা কোন সাহায্য করেনা:
মৃত্যু আর কষ্টের তুলনা সাহায্য করেনা, আর এটা অবশ্যই আমার বিষয় না। কিন্তু এইসব ভয়ঙ্কর ঘটনা আমাকে ভাবায় যে আফগানিস্তানের শান্তির ব্যাপারে আমাদের আরো সৃজনশীলভাবে চিন্তা করা উচিত। এই বিষয়গুলি কঠিন আর আঙ্গুল তুলে ‘ঠিক বা ভুল’ অথবা ‘খারাপ বনাম ভাল’ ঘোষণা করা সহজ। আফগানিস্তানে বিষয়টা পরিষ্কার না। শান্তির ব্যাপারে কথা বলার সময় আমার প্রিয় লেখক থমাস মেরটন অনুরোধ করেছেন ব্যক্তিকে তার নিজের খারাপের আর ধ্বংসের দিকের ঝোকটা খুঁজে দেখতে আর সেই প্রক্রিয়ায় যে গোলমাল হয় তা চিনে নেয়া দরকার আমাদের চারপাশের খারাপ খুঁজে দোষ দেয়ার আগে।
আমার আফগান বন্ধু কোবরা এই খবর শুনে আমার কাছে ছুটে এসেছে, চোখ ভর্তি পানি নিয়ে আর বলেছে, ”এটা আমার আফগানিস্তান না। না, এটা ভালো না।” আমার মনে হয় সে তার আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছে। আমি তার জন্য এই খোঁজ চালাতে চাই, ছোট ছোট ভাবে আমি যেভাবে পারি।”
নিতিন পাই, অন্য একধারায় কথা বলছেন আর মনে করেন যে এটা ভারতীয় কর্মকতাদের উপর একটা ইচ্ছাকৃত হামলা, যার লক্ষ্য হচ্ছে দেশটায় ভারতের বাড়তে থাকা উপস্থিতি কমানো:
আফগানিস্তানের গ্রামে নির্মাণ শ্রমিকদের উপর হামলা এক জিনিষ। কাবুলের ভারতীয় দূতাবাসের কুটনীতিকদের উপর হামলা আরেক জিনিষ। তালিবানরা ভারতীয়দের দিকেও কেন হামলা করল এটা একটা চিন্তার বিষয়। বিশেষ করে তারা যখন আফগানিস্তানে আমেরিকা, ন্যাটো বাহিনী আর কিছু ক্ষেত্রে পাকিস্তানের উপজাতি এলাকায় পাকিস্তান আর এনডাব্লিউএফপি এর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। দুতাবাস হয়তো হামলার একটা সুযোগ করে দিয়েছে, আর হামলাটা আপাত সফল হলেও কিন্তু এর কৌশলগত ব্যবহার এখনো সন্দেহের মধ্যেই আছে।
কারন ভারতের এই হামলায় পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাদের পুনর্নিমাণ কাজ কমিয়ে দেয়ার সম্ভাবনাও কম। যদি এই হামলার উদ্দেশ্য ভারতকে ক্ষেপিয়ে আফগানিস্তানে আরো জড়িত করা চেষ্টা হয়ে থাকে তাহলে তারও সম্ভাবনা কম। ভারতের সাড়া হতে পারে যে তারা আরো কঠোরভাবে তাদের লক্ষ্যের দিকে এগুবে।
এর ফলে অন্য সম্ভাবনের দার খুলে যায়: এটা কি পাকিস্থানপন্থীদের কাজ?
বারনেট রুবিন এটাকে একটু দুরচিন্তা মনে করে আর হুঁশিয়ার করে দেয়:
আমার তালিবানদের মধ্যে ক্ষুদ্র যোগাযোগ আর আফগান সুত্র থেকে যে সমস্ত তালিবানদের নথি পেয়েছি তা পড়ে আমি দেখেছি যে আফগানিস্তানে বিদেশী সেনাদের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, কারজাই সরকার বা ভারতের উপর না।
আমি রেডিওতে শুনলাম যে তালেবান হামলার দায় স্বীকার করেছে ( রয়টার্স ও রিপোর্ট করেছে)। দেখা যাক কোন ‘তালিবান'। এরা কি ভূতপুর্ব কোয়েটার তালেবান নেতৃত্ব থেকে এসেছে নাকি উত্তর ওয়াজিরিস্থানের হাক্কানি গোত্র থেকে এসেছে? ( লক্ষ্য করবেন যে তালিবানদের আদেশ আর নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র পাকিস্তানে)
আমি আমার গলা এখানে বাড়িয়ে দিলাম: আমার বিশ্বাস হয় না যে কান্দাহারি তালিবানরা ভারতীয় দুতাবাসের উপর এমন একটা হামলা করবে।এই ধরনের হামলার ধারণা হয়তো নিচের কিছু বা সব ঘটনার সংমিশ্রনে হয়েছে: হাক্কানি গোত্র (পাকিস্তানী সমর্থনের প্রচার হিসাবে), পাকিস্তানী তালেবান, আল কায়দা, আর পাকিস্তানী নিরাপত্তা সংস্থা, বা প্রাইভেট সংস্থা তাদের তদারকিতে যারা আছে।
এখন খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে বলার জন্য যে হামলাটা আসলে কেন হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা দোয়া করি যারা হামলার শিকার হয়েছে তাদের জন্যে এবং যারা কাবুলে এখনও জীবিত আছে তাদের নিরাপত্তার জন্য।