একজন সিরীয় উদ্বাস্তু ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ব্রাজিলে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠা করতে চান

O engenheiro mecânico Talal, que agora trabalha com culinária síria. Crédito: aquivo pessoal

তালাল আল টিনাউই, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার থেকে বার্বুচি। ছবিটি তার ব্যক্তিগত ফাইল থেকে নেয়া। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

পোস্টটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে মিগ্রামান্ডো ব্লগে। কনটেন্ট শেয়ারিং চুক্তির আওতায় গ্লোবাল ভয়েসেসে পুনরায় প্রকাশ করা হলো।

তালাল আল টিনাউই পেশায় একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু যুদ্ধ তাকে উদ্বুস্তু বানিয়েছে। ২০১৩ সালের শেষের দিকে তিনি ব্রাজিলে চলে আসেন। তখনই তিনি পেশা পরিবর্তন করেন। কারণ, ব্রাজিলে এসে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট দিয়ে কোনো কাজ বাগাতে পারছিলেন না। তাই জীবনধারনের জন্য বার্বুচিগিরির খাতায় নাম লেখান। স্থানীয় সিরিয়ান-লেবানিজদের কথা ভেবে আরবীয় খাবারদাবার রান্না করেন। এখন তার রান্নাশিল্পকে আরো অনেকদূর এগিয়ে নিতে অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রচারণা শুরু করেছেন।

২০১৪ সালের শেষের দিকে অর্থ সংগ্রহের জন্য তালাল তার প্রচারণা কার্যক্রম শুরু করেন। সেসময়ে তার বাসায় একদল বন্ধু ও স্বেচ্ছাসেবী এসেছিলেন। তারা আদুস নামের একটি এনজিও’র হয়ে সাও পাওলোতে উদ্বাস্তুদের নানা ধরনের সহযোগিতা দিতো। তার বানানো খাবার অতিথিদের বেশ পছন্দ হয়। তখন অতিথিরা তাকে রেস্টুরেন্ট খোলার পরামর্শ দেন।

অতিথিদের প্রশংসা আর পরামর্শে তালাল নিজের একটি রেস্টুরেন্টে খুলে ফেলে। নাম দেয়- তালাল সিরিয়ান কুইজিন। নিজস্ব জায়গা না থাকার কারণে বাসা থেকেই রেস্টুরেন্টটি পরিচালনা করে। অর্ডার পেলে সাও পাওলোর পার্টি ও বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে খাবার সরবরাহ করে থাকে। রমজানের সময়ে প্যারি মসজিদে অনুষ্ঠিত এবারের ইমিগ্র্যান্ট পার্টিতেও তালাল খাবার সরবরাহের কাজ পেয়েছিল। প্রায় ৪০০ জন লোকের খাবার সরবরাহ করেছিল সে। তালাল শুধু রেস্টুরেন্ট নিয়েই ব্যস্ত নন। তিনি অন্যান্য উদ্বাস্তুদের জন্য রান্না ক্লাসও নিয়ে থাকেন। মিগ্রামান্ডোর সাথে এক সাক্ষাৎকারে তালাল জানিয়েছেন, “ইমিগ্র্যান্ট পার্টির পর থেকে তার রান্নার কাজ আর বন্ধ হয়নি।”

সিরিয়া ও লেবানন থেকে ব্রাজিলে অভিবাসনের ইতিহাস বেশ আগের। উনিশ শ’ সালের শেষ দিকে এই অভিবাসন শুরু হয়। ১৯৩০ সালের মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে অভিবাসী মানুষের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় এক লাখে। তবে এদের বেশিরভাগই ছিলেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। বর্তমানে ৬ মিলিয়ন ব্রাজিলিয়ান আছেন, যাদের পূর্বপুরুষরা লেভান্ট অঞ্চল থেকে ব্রাজিলে গেছেন।

তালাল যেসব খাবার তৈরি করেন তারমধ্যে সবচে জনপ্রিয় মিট পাই এবং কিমা করা গরুর মাংস। যদিও ব্রাজিলিয়ানরা এগুলো অন্য সাধারণ স্ন্যাক খাবারের মতোই খান। তবে অন্যান্য খাবারের প্রতি যে আগ্রহ নেই তা নয়। তালাল জানিয়েছেন, “তার বানানো অন্যান্য খাবারের প্রতিও ভোক্তাদের আগ্রহ বাড়ছে।”

এদিকে খাবার নিয়ে সাধারণের আগ্রহ বাড়ায় তালাল ব্যবসা বড় করার চিন্তা করছেন। পাশাপাশি চাইছেন একটি রেস্টুরেন্ট দিতে। “যদি নিজের একটা রেস্টুরেন্ট থাকতো, তাহলে আমার খাবার আরো বেশি পরিচিত হতো। তাছাড়া আরো অনেক সুস্বাদু খাবারও রান্না করতে পারতাম।”

তালালের বানানো বিভিন্ন সিরিয়ান খাবার। ছবিটি তার ব্যক্তিগত ফাইল থেকে নেয়া। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

আদুসের স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় তালাল অনলাইনে অর্থ সংগ্রহের প্রচারণা শুরু করেছেন। ১৫ হাজার মার্কিন ডলার সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। এই টাকা উঠলে তা দিয়ে তিনি রেস্টুরেন্ট চালানোর জন্য ওভেন, ফ্রিজ, মিক্সার, ফুড প্রসেসরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনবেন।

ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৫০০ ডলারের মতো অর্থ জমা পড়েছে। অর্থ সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ পর্যন্ত। অন্যান্য ক্রাউডফান্ডিং প্রচারণার মতোই অর্থদাতাদের জন্য বিশেষ পুরস্কার রাখা হয়েছে। পুরস্কারের মধ্যে তহবিলের টাকায় প্রতিষ্ঠিত রেস্টুরেন্টের দুপুরের খাবার খাওয়ার সুযোগ ছাড়াও রয়েছে একবছর মেয়াদী ডিসকাউন্ট কার্ড। প্রচারণা কার্যক্রমটি ফেক্সিবল ধরনের, যার মানে হলো, প্রত্যাশিত পরিমাণ টাকা না উঠলেও অর্থদাতারা টাকা ফেরত পাবেন না। সেক্ষেত্রে তারা তালালের ফুড ডেলিভারি সার্ভিস থেকে পুরস্কার হিসেবে খাবার গ্রহণ করতে পারবেন।

তালাল রেস্টুরেন্ট চালু করার মাধ্যমে তার ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে চান। ছবি তুলেছেন রদ্রিগো বোর্হেস ডেলফিম। সৌজন্যে মিগ্রামান্ডো।

ব্যবসা পরিচালনা করতে যেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না পড়েন, সেজন্য আদুসের স্বেচ্ছাসেবীরা তালালকে সহযোগিতা করছেন। কারণ যেকোনো দেশে বিদেশীদের জন্য ছোট্ট পরিসরে ব্যবসা পরিচালনা কার্যক্রম যথেষ্ট জটিলতাপূর্ণ।

নিচের ভিডিওতে তালাল তার নিজের গল্প বলেছেন। আর যারা সিরিয়ান খাবারের ভক্ত তাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন, যাতে একটি রেস্টুরেন্ট খুলতে পারেন।

ব্রাজিলিয়ান কমিটি ফর রিফিউজির তথ্যমতে, বর্তমানে ৮১টি দেশের ৭ হাজার ৭০০ উদ্বাস্তু ব্রাজিলে আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে সিরিয়ানদের সংখ্যা সবচে বেশি, ২৩ শতাংশ। এরপরে আছে কলম্বিয়া, অ্যাঙ্গোলা এবং কঙ্গোর উদ্বাস্তু মানুষ। আবার গত পাঁচ বছরে ব্রাজিলে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২১৩১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০ সালে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১১৬৫ জন। গত বছরে এই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ২৫,৯৯৬ জনে। গত বছরে সবচে বেশি আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে।

Exit mobile version