খনি এবং খামারে কাজ করা ফিলিপাইনের এই সকল শিশুদের ছবি সকলকে কাঁদায়

child labor sacadaফিলিপাইনে শিশুদের শ্রম শোষণ ক্রমশ খারাপের দিকে গড়াচ্ছে, ২০১১ সালে ফিলিপাইনের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর সংবাদ প্রদান করে যে দেশটিতে ৫৫ লক্ষ শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছে যাদের মধ্যে ২৯ লক্ষ শিশু খনি এবং কারখানার মত ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। এই সংস্থা তাদের এই প্রতিবেদনে আরো যোগ করেছে যে ৯০০,০০০ জন শিশুর কাজ করার কারণে স্কুলের যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

উদ্বেগজনক এই পরিসংখ্যান ফিলিপাইনের শিশুরা যে দারিদ্র্যের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সেই বিষয়টি তুলে ধরে, যে দেশটিতে গরীবদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোন সমাজ সেবা নেই এবং তাদের কল্যান সাধনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণের অভাব রয়েছে।

ফিলিপাইন শিশু অধিকার সনদের এক স্বাক্ষরকারী এবং অন্যান্য সনদের সে স্বাক্ষর করেছে যে সবের লক্ষ্য শিশুদের কল্যাণকে তুলে ধরা। বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ে, শিশুবান্ধব সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশটিতে এক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু আইন এবং বিভিন্ন কর্মসূচি বিভিন্ন ভাবে শিশু শ্রম শোষণের বিষয়টি রোধে সক্ষম হচ্ছে না, অনেক শিশু দারিদ্র্য এবং বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।

গত মাসে ফিলিপাইনের একুমেনসিয়াল শ্রম শিক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এইলের বা একুমেনসিয়াল ফর লেবার এডুকেশন রিসার্চ ) এক প্রাথমিক সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে যা দেশটির বিভিন্ন অংশে খনি এবং খামারে শিশু শ্রম ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। খামার এলাকায় বাস করা সম্প্রদায়ের মাঝে ২২.৫ শতাংশ গৃহস্থালীর শিশুরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। খনি এলাকার শহরগুলো ১৪ শতাংশ পরিবারের শিশুরা শ্রমিক হিসেবে খনিতে কাজ করে।

পামওয়েল এর খামারে কাজ করা শিশুরা প্রায়শ ফলের যত্ন নেওয়া, চাষ করা, সেগুলো বহন করে নিয়ে আসা, সেগুলোকে বোঝাই করা এবং গাছ থেকে টেনে আলাদা করার কাজ করে থাকে। আর যে সমস্ত শিশু আখের খেতে কাজ করে তাদের আগাছা বাছাই, চাষ এবং জমিতে পানি দেওয়ার কাজ করতে হয়।

খনিতে সাধারণত শিশুরা পানি নিয়ে আসার কাজ করে, তারা পাথর বয়ে নিয়ে যাওয়ার থলে বহন করে, মাটির নীচের সুড়ঙ্গ ধ্বসে পড়া ঠেকানোর জন্য যে সকল পুরু কাঠ ব্যবহার করা হয়, তা এই শিশুরাই বয়ে আনে, অথবা নিয়মিত শ্রমিকদের কিছু অর্পিত কাজের দায়িত্ব এরা গ্রহণ করে। যখনই নিয়মিত শ্রমিকরা কাজে আসতে পারে না তখন শিশুরা সংরক্ষিত শ্রমিক হিসেবে কাজ করে এবং এই সমস্যার “উপশমকারী’ হিসেবে বিবেচিত হয়। খনিতে কাজ করা মেয়েরে পাত্র ঘুরিয়ে স্বর্ণ খুঁজে বের করে আনার কাজ করে অথবা খনি শ্রমিকদের কাপড় ধুয়ে দেওয়া অথবা তাদের রান্না করে দেওয়ার মত কাজ করে।

এইলের পর্যবেক্ষন করেছে যে শিশুদের প্রচণ্ড বাজে আবহাওয়া, অনেক বেশী সময় এবং নিম্নমানের যন্ত্রপাতি এবং সামগ্রী দিয়ে তাদের প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে হয়।

খামারগুলোয়, কাজের সময় বাড়ির সামনে থেকে শিশুদের ট্রাকে তোলা হয় এবং পিতামাতার সংস্পর্শ ছাড়াই নিকটবর্তী প্রদেশে তাদের থাকার জন্য অস্থায়ী ভাবে বানানো তাবুতে সময় দুই সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত একটানা থাকতে হয়। যেহেতু বেশিরভাগ খামারে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, যার ফলে এই সকল খামারে কাজ করা শিশুরা সরাসরি এসকল উপাদানের কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মুখে থাকে।

অন্যদিকে যে সমস্ত শিশুরা খনিতে কাজ করে তাদের বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতে হয় এবং কোন ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের কাজ করানো হয়। এই সমস্ত শ্রম সামাজিক বিপদ ডেকে আনছে, যেমন সুড়ঙ্গের ভেতরে ঘন্টার পর ঘন্টা শিশুদের জাগিয়ে রাখার জন্য অবৈধ মাদকের ব্যবহার দেশটির খনিগুলোর ভেতরের এক নিয়মিত চিত্র।

পিতাং-এক প্লাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে লেখা “ আমিও এক শিশু শ্রমিক”। ছবি ঝোনা ইগনিলান স্টোকের ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি এইলের আয়োজিত এক সভায়, মিন্দানাও-এর এক প্রাক্তন শিশু শ্রমিক পিতা, তার খামারে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে :

আমার বয়স যখন দশ বছর তখন থেকে আমার বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আমি আশাহত হয়ে পড়ি যে আমি হয়ত আর কোনদিন স্কুলে যেতে পারব না, এবং মনে মনে ভাবি তার বদলে আমি এক গায়িকা হব। সাধারণত আমি মনের কষ্ট ও যন্ত্রণা এবং খামারের কাজের ক্লান্তি দূর করার জন্য গান গাইতাম। বিদ্যালয় ছেড়ে আসার পর চার বছর পার হয়ে গেছে। আমি ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি আর তারপর কাজের জন্য আমাকে বিদ্যালয় ছাড়তে হয়েছে।

সৌভাগ্যক্রমে এইলের নামের দল সেখানে রয়েছে যারা দেশটিতে সকল প্রকার বাজে ধরনের শিশু শ্রম বন্ধের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অন্যতম এক কর্মসূচি হচ্ছে বালিক-এস্কুয়েলা (বিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়া), যার লক্ষ্য হচ্ছে শিশু শ্রমিকদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই প্রকল্পে এইলের-এর অন্যতম এক অংশীদার

শিশু শ্রমিকেরা বিদ্যালয়ে ফিরে এসেছে। ছবি বালিক-এস্কুয়েলার ফেসবুকের পাতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

*সকল ছবি এইলের-এর, অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।
Exit mobile version