শ্রীলঙ্কা: উদ্বৃত্ত কৃষি মোকাবেলা

শ্রীলঙ্কার সরকার এক নতুন ধরণের সমস্যার মুখোমুখি, উৎপাদিত উদ্বৃত্ত ধানের মোকাবেলা। শ্রীলংকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রী বাজিল রাজাপাকসে উদ্বৃত্ত চাল ও সব্জী রপ্তানির পরামর্শ দিয়েছেন। চালের বিনিময়ে তেল ক্রয়ের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে কি অবস্থা? এই উদ্বৃত্ত উৎপাদনে কৃষকরা কি উৎফুল্ল? কৃষকদের দুরবস্থা সম্পর্কে খুব কম তথ্যই গণমাধ্যমে আছে। ব্লগার ও কৃষক, রাজারাটারালা, চালের রপ্তানী শ্রীলংকার ধান চাষীদের জন্য অপমান হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ব্লগার মন্তব্য করেছেন:

আজ, ১৮ এপ্রিল ২০১২, কিছুক্ষণ আগে প্রকাশ করা হয়েছে যে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব কে. এ. সাকালাসুরিয়া রপ্তানীর জন্য চারটি অঞ্চল ঘোষণা করেছেন। আরও ঘোষণা করা হয়েছে যে, পরবর্তী ইয়ালা ঋতুতে এই ধান প্রতি কেজি ৪০ রুপিতে ক্রয় করা হবে।

এই ঘোষণা কেন অপমানজনক? ধানের খামার, বিভিন্ন মাটি ও উৎপাদন অবস্থায় ফলন এবং ধানের বিভিন্ন জাত সম্পর্কে তার কোন ধারণা নাই।

আমি ধানের ৬টি জাত লাগিয়েছি এবং দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে আমি বিক্রয় করেছি, এই ধান থেকে ১৪টি জাত উৎপন্ন হয়েছে। [..] নিম্ন ফলনের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি ৪০রুপি যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ নয়।[..]

আমি প্রকৃতপক্ষে ধারণা করছি যে, যদি কৃষকরা রপ্তানীযোগ্য ধান একই মূল্যে উৎপাদন করে, মিল মালিকরা আবারো লাভবান হবে, যেহেতু তিনি বাজার বিন্যস্তকারী এবং এই মূল্যে মিল মালিকরা ধান ক্রয়ের জন্য সরকারের সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে।

শ্রীলংকার ধান ক্ষেত। ছবি ফ্লিকার থেকে নিশান এমএল এর মাধ্যমে। এনসি-এনডি এর ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স এর আওতায় ব্যবহৃত।

অন্য একটি পোষ্টে এই ব্লগার শ্রীলংকার ধান চাষীদের দুরবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন, যারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না:

বর্তমানে ৭০% ধানক্ষেত পাঁচ একরের নীচে যেখানে ধান চাষ করা লাভজনক হচ্ছে না। সুতরাং, স্মরণ রাখুন, যে চাল আমরা খাচ্ছি, তা কৃষকদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে উৎপাদিত। কোন রকম অর্জন ছাড়াই, দৈনিক ২০০রুপি মজুরী পর্যাপ্ত নয়। ভবিষ্যতে খামারগুলোর কি অবস্থা হবে?

রাজারাটারালা অন্য একটি পোষ্টে উল্লেখ করেছেন, মিল মালিকরা কিভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্যবসা থেকে অধিক লাভবান হচ্ছে। ব্লগার পরামর্শ দিয়েছেন:

সেহেতু শ্রীলংকার অতিরিক্ত ধান অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবহৃত হতে হবে, সরকারকে অবশ্যই ক্রয় এবং কমপক্ষে ৬ মাসের জন্য সারা দেশের বৃহৎ সাইলোতে সংরক্ষণ করতে হবে এবং রপ্তানীযোগ্য চালের জন্য একটি বৃহৎ মিল তৈরীর পরিকল্পনা থাকতে হবে, যা মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশেষ মান সম্পন্ন হবে, যা আন্তর্জাতিক মানের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে, যা এই মিলগুলোর আছে। স্থানীয় বাজারে বিক্রয়ের মাধ্যমে মিল মালিকরা অধিক মুনাফা অর্জন করে, প্রকৃতপক্ষে রপ্তানীর বাজার তার জন্য অধিক প্রতিযোগিতা সম্পন্ন!

সর্বশেষে ব্লগার ব্যাখ্যা করেছেন, কিভাবে অর্থনৈতিক উদ্বৃত্ত মোকাবেলা করতে হয় এবং বলেছেন, তিনি রপ্তানীর বিরোধী নন:

সরকারের একটি নীতিমালা থাকবে যার ভিত্তিতে প্রত্যেক স্তর সম্পর্কে বিবেচনা, প্রণোদনা এবং ক্ষতিপূরণ করবে।[..] মিল মালিক, পাইকারী বিক্রেতা ও ফড়িয়া থেকে উৎপাদনকারীদের মধ্যে মূল্য নির্ধারক স্থানান্তরের জন্য সারা বিশ্বের অর্থনীতিবিদ কোন উত্তর ছাড়াই সমাধানের চেষ্টা করছে, কৃষিকে বিবেচনা ছাড়াই বাজারের চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে বিবেচনার চেষ্টা করা হচ্ছে, এই বিবেচনায় উৎপাদন কম হলে কৃষকের পক্ষে যায়।

Exit mobile version