আঞ্চলিক নেতাদের “সম্মেলন” কে সামনে রেখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সক্রিয় কর্মীরা “জনতার পদযাত্রায়” ঐক্যবদ্ধ

People's Walk. Photo from Facebook page of ASEAN Peoples' Forum

জনতার পদযাত্রা কর্মসূচী। আশিয়ান জনগণ ফোরামের ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া ছবি।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সক্রিয়কর্মী এবং বিভিন্ন সুশীল সমাজ সংস্থার সদস্যরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জাতিগত এ্যাসোসিয়েশন (আশিয়ান) এর ২৬ তম সম্মেলন শুরু হওয়ার কিছু দিন আগে মালয়েশিয়াতে একত্রিত হয়েছেন। এই সমাবেশ একটি পদযাত্রা কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এই অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রভাবিত করে এমন বেশ কয়েকটি বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং প্রস্তাব আনার আহ্বান জানাতে ১ হাজার ৪ শত জনেরও বেশি লোক মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের এই পদযাত্রা কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতিকে সুসংহত করতে সম্প্রতি আশিয়ান একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আশিয়ান একটি জোটবদ্ধ সম্প্রদায় গঠনেরও স্বপ্ন দেখছে, যা বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী একটি অর্থনৈতিক গোষ্ঠীতে পরিণত হবে। আশিয়ান সচিবালয়ের নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি এ বছরের সম্মেলনের আয়োজক দেশ মালয়েশিয়া।

ঐক্য প্রচার যেখানে চমৎকার একটি লক্ষ্য, সেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সক্রিয় কর্মীরা প্রান্তিক বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের উপর আশিয়ান একাঙ্গীভবনের প্রভাব উল্লেখ করতে তাদের নেতাদের জোরালো সুপারিশ করেছেন। বৈশ্বিক এমন উদ্যোগ নিয়ে সাধারন নাগরিকদের চিন্তাভাবনা বিবেচনা করতেও তারা জোর দাবি জানিয়েছেন। কেননা এই উদ্যোগ এই অঞ্চলকে ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্বের (টিপিপি) মতোই প্রভাবিত করবে।

আশিয়ান জনগণ ফোরামের মাধ্যমে সমগ্র অঞ্চল জুড়ে থাকা সুশীল সমাজের সংস্থাগুলো একতাবদ্ধ হয়েছে। মিন্দানাও (দক্ষিণ ফিলিপাইন) শান্তি প্রক্রিয়া, রোহিঙ্গা (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশহীন জনগণ) নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্যর মতো ইস্যু সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের অবস্থান ঘোষণা করেছেন।

আশিয়ান জনগণ ফোরামের কয়েকজন প্রতিনিধি।

“সামরিক জান্তা” এবং রাজনৈতিক বন্দী মুক্ত একটি আশিয়ানের জন্য, “যেন মানুষ তাদের কণ্ঠ এবং পছন্দ অনুযায়ী সব ধরনের একনায়কতন্ত্র সরিয়ে ফেলতে এবং সমগ্র অঞ্চল জুড়ে গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য সংহতি জোরদার করতে সক্ষম হয়”, এ দাবি জানিয়ে একটি কর্মশালাতে বার বার অনুরোধ করা হয়। সেখানে থাইল্যান্ডের বর্তমান পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ করা হয়, যেখানে সেনাবাহিনী সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে জান্তা প্রতিষ্ঠাকরণের অভিযোগ উঠেছে।

থাইল্যান্ডের প্রধানমত্রী প্রয়ুথ চান-ওচা’র একটি ছবি ব্যানারে স্থান পেয়েছে। তিনি সেনাবাহিনীর সেই জেনারেল, যিনি ২০১৪ সালে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সক্রিয় কর্মীরা দেশটিতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার দাবি জানিয়েছেন। জুলিয়াস চু চুন কাইয়ের ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া ছবি।

এই ফোরামে বাক স্বাধীনতার সম্পূর্ণ সুরক্ষার দাবি নিয়ে আলোচনা করা হয়। মানবাধিকার গ্রুপগুলো এ অঞ্চলে প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা সীমিত করার উদ্দেশ্যে করা আইনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেঃ

এই অঞ্চলের সরকারগুলো দমনমূলক আইন প্রণয়নের সাথে সাথে রাষ্ট্র-অনুমোদিত আক্রমণ এবং ভীতিপ্রদর্শনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার সীমিত করতে নির্বিচারে বিধিনিষেধ আরোপ করছে। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার ভান করে প্রায়ই কঠোর আইন জারি করা হয়, অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ, ভিন্নমতাবলম্বীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়। মানবাধিকারের প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ও অ-রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘন ঘটনা উন্মোচনের জন্য যে মানবাধিকার রক্ষীরা সামনের সাড়িতে দাঁড়িয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদেরকে এ কাজের জন্য ক্রমাগতভাবে আক্রমণ, হুমকি এবং কারাবরণের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

আন্দোলনে #এফওইআশিয়ান!

লিজ মাজেস্টা (রাজকীয় অপমান-বিরোধী আইন) বা রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে অভিযুক্ত একজন থাই সাংবাদিক সোমিয়ত প্রুয়েকসাকাসেমসুকের সমর্থনে একজন সক্রিয়কর্মী একটি প্ল্যাকার্ড ধরে আছেন। তাকে অভিযুক্ত করার ঘটনাটি থাইল্যান্ডে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধতার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আশিয়ান জনগণ ফোরামের ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া ছবি।

ফোরাম এবং পদযাত্রা কর্মসূচী পালনের সময় #আশিয়ানজনগণ টুইটার হ্যাশট্যাগটি ব্যবহৃত হয়েছে। সমাবেশ চলাকালীন সময়ের কয়েকটি ছবি নিচে দেয়া হলঃ

আশিয়ানের প্রচারনায় #টিপিপিবন্ধ (মুনাফার জন্য মানব বাণিজ্য) কর।

লাওস থেকে নিখোঁজ হওয়া সক্রিয়কর্মী সোমবাথ সোমফোনির ঘটনাটি সমাবেশ চলাকালীন সমাধান করতে চেষ্টা করা হয়েছে। এই অঞ্চলের অন্যান্য নিখোঁজ সক্রিয়কর্মীদের ঘটনাগুলোও একটি কর্মশালাতে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আশিয়ান জনগণ ফোরামের ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া ছবি।

নির্বাকদের সবাক করুনঃ নিখোঁজ ব্যক্তিনিখোঁজ মানুষ

পদযাত্রা কর্মসূচীতে আটক মিয়ানমারের শিক্ষার্থীদের দুর্দশার কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। শিক্ষা সংস্কারের দাবিতে আয়োজিত র‍্যালীতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনের অপরাধে মিয়ানমারে এই শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়।

আশিয়ান জনগণ ফোরামের ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া ছবি।

কেউ কেউ ফিলিপিনো গৃহকর্মী ম্যারি জেন ভেলোসোকে ইন্দোনেশিয়াতে মৃত্যু দণ্ডাদেশ দেয়ার ঘটনাটির নিন্দা করেছেন। ইন্দোনেশিয়ার উচ্চ আদালত ভেলোসোকে এই দণ্ডাদেশ প্রদান করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে শুরুতে মাদক পাচারের অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু সক্রিয়কর্মীরা দাবি করেছেন, ভেলোসো যথাযথ আইনী প্রতিনিধিত্ব পাননি এবং তিনি মানব পাচারের শিকার হয়েছিলেন।

এছাড়াও পদযাত্রা কর্মসূচীতে উপস্থিত সক্রিয়কর্মীরা অভিবাসী শ্রমিক, বিশেষ করে কম্বোডিয়ার শ্রমিকদের কল্যাণে উন্নয়ন কাজে সমর্থন জানিয়েছেন।

জুলিয়াস চু চুন কাইয়ের ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া ছবি।

Exit mobile version