দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রমিকরা রাস্তায় বিক্ষোভে যোগদান করে এবারের শ্রম দিবস পালন করলেন

Filipino workers march in Manila to campaign for higher wages. Photo from Facebook page of Buhay Manggagawa

ফিলিপাইন্সের রাজধানী শহর ম্যানিলায় উচ্চ মজুরীর জন্য ফিলিপিনো শ্রমিকদের র‍্যালি। বুহায় মাঙ্গাগয়ার ফেসবুক পেইজ থেকে পাওয়া ছবি।

সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে কয়েক হাজার শ্রমিক গত শুক্রবার শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন: কম্বোডিয়ার শ্রমিকরা তাদের মাসিক ন্যূনতম মজুরি ১২৮ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৭৭ মার্কিন ডলার করতে তাদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ফিলিপাইনের প্রতিবাদকারীরা শ্রম রপ্তানি নীতি নিয়ে কথা বলেছেন। এদিকে মালয়েশিয়ায় দশ হাজারেরও বেশি মানুষ একটি নতুন ভোগ্যপণ্য কর বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। এবং সিঙ্গাপুরের শ্রমিক ইউনিয়নগুলো মজুরি বৈষম্যের বিষয় তাদের অভিযোগ উত্থাপিত করেছেন।

‘জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম মজুরি'র দাবি জানিয়েছেন কম্বোডিয়ার শ্রমিকরা

১৭৭ মার্কিন ডলার মজুরি, যা জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম মজুরি বলছেন শ্রমিকরা। এই মজুরির দাবিতে বিভিন্ন শ্রমিক গ্রুপ দ্বারা আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তাঁরা অংশ নিয়েছেন। সমাবেশে যোগদান করা অনেকেই ছিলেন পোশাক খাতে কাজ করা নারী শ্রমিক। এছাড়াও তাঁরা শ্রমিক ইউনিয়ন বিরোধী “দমনমূলক” খসড়া আইনেরও বিরোধিতা করেছেন। এই কার্যক্রমের জন্য নম পেন (কম্বোডিয়ার রাজধানী) শহর কর্তৃপক্ষ অনুমতি না দেওয়া সত্ত্বেও বিক্ষোভটি শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হয়।

একজন কর্মী এইচ এন্ড এম, ওয়ালমার্ট, লিভাইস, গ্যাপ পুমা, সি এন্ড এ, এডিডাস এবং জারা’র মতো প্রধান প্রধান পোশাক ব্র্যান্ডের লোগোগুলো বিশেষভাবে তুলে ধরা একটি স্টিকার পড়ে আছেন। ব্র্যান্ডগুলো কম্বোডিয়ার বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে তাদের পোশাকগুলো তৈরি করিয়ে থাকে। লিকাঢো নামক একটি মানবাধিকার গ্রুপের ফেইসবুক পেজ থেকে ছবিটি নেয়া হয়েছে।

জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি চাহিদার সমর্থনে অনুষ্ঠিত র্যাোলিতে অংশ নেয়া নারী কর্মীরা। লিকাঢো নামক একটি মানবাধিকার গ্রুপের ফেইসবুক পেজ থেকে ছবিটি নেয়া হয়েছে।

ফিলিপিনো কর্মীদের লক্ষ্য শ্রম রপ্তানি নীতি

জাতীয় পর্যায়ে নূন্যতম মজুরির প্রচারাভিযানে ম্যানিলাতে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে ফিলিপিনো কর্মীরা পদযাত্রা কর্মসূচী পালন করেছেন। লোকজনকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে উদ্বুদ্ধ করার পরিবর্তে স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার মাধ্যমে দেশে কাজের সুযোগ সৃষ্টির প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতেও সরকারের কাছে তাঁরা আহবান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে ১২ মিলিয়নেরও বেশি সংখ্যক ফিলিপিনো দেশের বাইরে কর্মরত রয়েছেন। এসব কর্মীদের অনেকেই নানারকম বঞ্চনার শিকার এবং ম্যারি জেন ভেলোসোর মতো কেউ কেউ মানব পাচারের শিকার হোন। মাদক পাচারের দায়ে সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়াতে তাকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। বিদেশে কর্মরত অনেক কর্মী কেমন কষ্টের সম্মুখীন হন তা তাঁর এই ঘটনা থেকে জানা যায়; আর গ্রামীণ এলাকাগুলোতে বিদ্যমান দারিদ্রতাকেও ঘটনাটি তুলে ধরেছে। যার ফলে আরও ভালো সুযোগের খোঁজে লোকজন দেশান্তরি হতে বাধ্য হয়।

ফিলিপাইনে শ্রমিকদের দেশান্তরে গমনের ইস্যু সম্পর্কে একটি গবেষণা মূলক প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা একটি ইনফোগ্রাফিক। কার্লোস ম্যানিনগেটের ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া ছবি।

সক্রিয় কর্মীরা ফিলিপাইনের শ্রমিক রপ্তানি নীতির নিন্দা করেছেন। মাইকেল এ্যান্ড্রাডার ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া ছবি।

উচ্চ কর এবং মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক দমনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

মালয়েশিয়াতে সাধারণ কর্মীরা অর্থনৈতিক সমস্যা ও প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও সরকার উচ্চ দ্রব্য এবং পরিষেবা কর (জিএসটি) ধার্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেখানে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ১০,০০০ জনেরও অধিক মানুষ একটি সমাবেশে যোগদান (যদিও আয়োজকদের দাবি, সমাবেশের প্রকৃত সংখ্যা হবে ২০,০০০ জন) করেছেন। জিএসটি কর গত ১ এপ্রিল থেকে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রতিবাদকারীরা বলছেন, জিএসটি করে মুদ্রাস্ফীতিজনিত প্রভাব রয়েছে, যা দেশের দরিদ্র মানুষের অবস্থা আরও নাজুক করে তুলতে পারে।

কিন্তু সমাবেশটি দেশে রাজনৈতিক দমনের ক্ষেত্রে অন্য রকম খারাপ সূচক হয়ে উঠেছে। কারণ পুলিশ বেআইনী সমাবেশ এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অজুহাতে সেখানে ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সেই গ্রেপ্তারের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি রুখতে পাহরাদার সেন্টার জানতে চেয়েছে: “পাবলিক জবাবদিহিতা এবং পাবলিক টাকা সংক্রান্ত প্রশ্ন কিভাবে রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে গণ্য করা হয়?”

চার্লস সান্টিয়াগো নামের একজন সংসদ সদস্য প্রতিবাদটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন:

অপরিহার্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান খরচ এবং জিএসটি-লিঙ্ক বাজার মূল্য বৃদ্ধি মধ্যবিত্ত এবং শ্রমিক শ্রেণির মানুষকে আরও বিপদের মুখে ঠেলে দিবে।

দরিদ্র দুর্ভোগ উপশম করতে এই জরুরি বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই মানুষগুলো গত শুক্রবার রাস্তায় নেমে আসে, যাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সরকার নিতে পারে।

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পণ্য ও সেবা ট্যাক্স বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ছবিঃ কপিরাইট @ডেমোটিক্স (৫/১/২০১৫) (5/1/2015)

সিঙ্গাপুরে মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথন

মজুরি বৈষম্য, মিডিয়া সীমাবদ্ধতা এবং দেশে আরও বিদেশী কর্মীদের প্রবেশে উত্সাহিত করার ক্ষেত্রে সরকারি নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য পাবলিক পার্কে প্রায় ৪০০ শত জন সিঙ্গাপুরবাসি শ্রমিক দিবস সমাবেশে যোগ দেন। এছাড়াও আয়োজকরা সিঙ্গাপুরের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। দেশটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে একটি ভিডিও তৈরীর জন্য বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগের সম্মুখীন হওয়া এক কিশোরের প্রতি সংহতি জানিয়ে শ্রমিক নেতারা অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি টানেন।

হং লিম পার্কে @জিওএইচগিলবারট এর বার্ষিক মে দিবস প্রতিবাদে সমাবেশের প্রতীক হিসেবে কলা ব্যবহৃত হয়েছে।

Exit mobile version