তুরস্কঃ কুর্দি বিদ্রোহীদের সাথে সমঝোতার আশা ক্ষীণ

তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়িপ এরদোগান গত সপ্তাহে সরকার ও পিকেকে (কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি) এর মধ্যকার অতি-প্রয়োজনীয় সমঝোতা আলোচনা শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। অতীতে কুর্দিশ বিদ্রোহীরা সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছে, এবং সহিংসতার সাম্প্রতিক উদ্দীপনায় সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা দ্রুত বহুগুনে বেড়ে গেছে।

কিন্তু কুর্দিশদের সাথে তুর্কি সরকারের বার বার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার ইতিহাসের কারণে কুর্দিশরা এই খবরে যথেষ্ট আশান্বিত হতে পারছে না।

শিকাগোতে একজন কুর্দির মতে, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য এই সমঝোতার প্রতিশ্রুতি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী এরদোগানের একটি নতুন কৌশল মাত্র। যেমনটি ওসমান আতিস উল্লেখ করেছেন, তুর্কি সরকার ও  গুলেন আন্দোলন দু’টোই কুর্দিশদের আত্তীকরণে বিশ্বাস করে।

@ওসমান_আতিসঃ ব্যাপারটি হচ্ছে যে তুর্কি সরকার ও গুলেন আন্দোলন বিশ্বাস করে যে কুর্দিরা আজ অথবা কাল একত্রিত হবে। [উল্লেখ্যঃ গুলেন আন্দোলন কুর্দিশ প্রশ্নকে অসাম্প্রদায়িক করে। এছাড়া স্কুল প্রতিষ্ঠাকালে তারা একটি তুর্কি ইতিহাস আখ্যান এমনভাবে প্রচার করে, যেখানে কুর্দিশ জনগণ ও তাদের সংগ্রামের কথা প্রায় উপেক্ষা করা হয়েছে ]

ছবিতে ইতালির রোমে কুর্দিরা তুর্কি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ব্যানার ও পতাকা ধরে আছে। ছবিটি তুলেছেন স্টেফানো মনটেসি, কপিরাইট ডেমটিক্স ।

রাজনৈতিক বন্দীরা 

তুরস্কে কুর্দী রাজনৈতিক বন্দীর সংখ্যা কত তা প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। পাশাপাশি সংসদীয় মর্যাদা তুলে নেবার ভয় দেখিয়ে কুর্দী রাজনীতিবিদদের সব সময়ই হুমকির মধ্যে রাখা হয়।

দ্যা পিস এ্যান্ড ডেমোক্রেসি (বিডিপি) পার্টির সহ-সভাপতি সেলাহাতিন ডেমিরটাস হুরিয়েত দৈনিক পত্রিকায় দেয়া তার এক সাম্প্রতিক বক্তব্যে বলেছেন যে “এই ধরনের একটি ব্যাপার [সংসদীয় মর্যাদা তুলে নেবার ভয়] সমঝোতা প্রক্রিয়ার সম্ভাবনাকে হত্যা করবে।” তিনি আরও বলেনঃ

ছয়জন বিডিপি প্রতিনিধি এখনও আসামীর কাঠগড়ায়। কিন্তু তাঁদের মুক্তির জন্য সরকার একটি আঙ্গুলও তোলেনি। এর পাশাপাশি সামনে আমাদের আরও নয়জন প্রতিনিধিকে বিচারকদের সামনে ছুঁড়ে ফেলা হবে। সমঝোতার প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সাথে প্রতারণা করতে যাচ্ছেন। কিন্তু এমনটি ঘটতে যাচ্ছে না।

সমঝোতার প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার ব্যাপারে কুর্দিশ বিদ্রোহীদের কিছু বৈধ স্বার্থের বিষয় রয়েছে যেটি জাস্টিস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি(একেপি)’র জন্য আরো সময় ব্যয় করবে।

উত্তরটি পরিষ্কার নয়। তবে ১১ ই অক্টোবর, রবিবার একেপি সম্মেলনে উত্তরটি সুস্পষ্ট হবে, যেখানে রিসেপ তায়িপ এরদোগান ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের যোগদান, তুরস্ককে অত্যন্ত চাপের মধ্যে রাখা অর্থনৈতিক সমস্যা, কুর্দিশ বিদ্রোহীদের সহিংসতা বৃদ্ধি এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি নতুন নীতি সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত বক্তৃতা করবেন।

তুর্কী প্রধানমন্ত্রীর সমঝোতা পরিকল্পনার কিছু স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উত্তর তাঁর প্রতিনিধি-সভাটির বক্তব্য থেকে পাওয়া যেতে পারে। একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে নিম্নলিখিত বক্তব্য দিয়েছেনঃ

আমি এতটা নিশ্চিত নই যে তিনি [রিসেপ তায়িপ এরদোগান] হয়তো একটি নতুন প্রক্রিয়া শুরু করতে চান অথবা কিছু সময় নিতে চান তার দলের সম্মেলনের জন্য। যদি তিনি একটি নতুন প্রক্রিয়া সূচনা করতে চান, তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী আইন দ্বারা অনুমোদিত ও সাংবিধানিক যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হবে তার একটি খসড়া-চিত্র সরকারের থাকা উচিৎ। কুর্দীশ প্রতিরূপ অংশের কাছে শপথ গ্রহণ এবং পরে সে শপথ ভঙ্গ করা মোটেও শান্তি ও সমাধানের পথ খোঁজার ভাষা নয়। এটা সরকারের বাচালতা প্রকাশ করে। তাদের এই উভয়সঙ্কট অতিক্রম করা উচিত।

খুব বেশি আগের কথা নয়, পিস এ্যান্ড ডেমোক্রেসি (বিডিপি) পার্টির সহ-সভাপতি গুলতান কিসানাক বলেছিলেনঃ

কুর্দীদের দিক থেকে বর্তমানে যে সহিংসতা চলছে, তা রাষ্ট্রের কার্যধারাকে সংজ্ঞায়িত করছে। চলুন সমঝোতা ও সংলাপের পথে ফিরে যাই এবং যুদ্ধ বন্ধ করি। আমাদের শান্তি ও শান্তির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করার নীতির প্রতি বেশী গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া জনগণ যেখানে আহত ও নিহত হচ্ছে সেখানে সংবিধান নিয়ে কাজ করতে থাকাটা কপটতা হবে।

যেখানে তুর্কী সরকার কুর্দীশ রাজনীতিকদের জেলে পাঠায় এবং সংসদীয় বাধ্যবাধকতার কথা তুলে হুমকি দেয় সেখানে বিদ্রোহীদের সাথে সমঝোতা হবে এটা মনে করা সরকারের পক্ষে অযৌক্তিক। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হতে দেওয়ার পরিবর্তে কুর্দীশ-স্বপক্ষের রাজনীতির উপর প্রায়ই খবরদারি করা হয় অথবা বিচারের সম্মুখীন করা হয়।

বাস্তবিক অর্থে শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমত সমর্থনের কারনে যদি রাজনীতিবিদ এবং বিক্ষোভকারীদের জেলে বন্দী করা হতে থাকে, তবে বিদ্রোহীদের সাথে সত্যিকার অর্থে সমঝোতার আশা একেবারেই ক্ষীণ।

Exit mobile version