ইরানঃ বিক্ষোভের দিন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেট–এ বিঘ্ন

ইন্টারনেটের গতি ধীর হয়ে আসা এবং তার উপর নজর রাখা এখন ইরানের নিত্যদিনের ব্যাপার, কিন্তু সাম্প্রতিক সময় গুলোতে ইরানের ভেতর থেকে খবর আসছে যে ওয়েব ইমেইল এবং নিরাপদ ইন্টারনেট (এইচটিটিপি:) –এ এখন প্রবেশ করা যাচ্ছে না এবং ইন্টারনেটের গতি এখন এত ধীর যে এন্টি ফিল্টারিং সফটওয়্যার ওয়েব পাতা গুলো খুলতে সমর্থ হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২-থেকে আংশিক ভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করার কাজ শুরু হয়।

যখন এই বিষয়ে ইরানী কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ, তখন বেশ কয়েকজন ব্লগার ধারণা করেছে যে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে তারিখে বিক্ষোভের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার কারণে এভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা (ইরানের বর্ষপুঞ্জি অনুসারে ২৫ বাহমান)। ২০১১ সালে ইরানের বিরোধীরা মিশর এবং তিউনিশিয়ার গণ জাগরণের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ইরানে যে বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছিল, মঙ্গলবার-এ তার বর্ষপূর্তিতে এক বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে। সেই বিক্ষোভে শারীরিক ভাবে দমন করার বিষয়টি খুব নির্মম ভাবে সংঘঠিত করা হয় এবং এর ফলে তেহরানে দুজন নাগরিকের মৃত্যু ঘটে।

ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি ইন্টারনেট ক্যাফে। ছবি মিঃ এল ইন ইরানের। কপিরাইট ডেমোটিক্সের। (২৪/০২/১১)

ব্লগ আজাদি-এস্তেকলাল-এদালাত (স্বাধীনতা, মুক্ত, ন্যায়বিচার) লিখেছে [ফরাসী ভাষায়]:

যখন সবুজ আন্দোলন [গ্রীন মুভমেন্ট] জনতাকে পুনরায় প্রতিবাদের আহ্বান জানায়, তখন খামেনি প্রশাসন ভয় পেয়ে যায়। বেশ কয়েকটি সংবাদে জানা গেছে যে তেহরান থেকে আরদেবিল পর্যন্ত দেশটির বেশীর ভাগ অংশের নাগরিক জিমেইল, ইয়াহু মেইল, গুগল অথবা গুগল প্লাসে প্রবেশ করতে পারছে না। এই সমস্ত সাইটে প্রবেশ বন্ধ করে রাখার বিষয়টিকে ফেব্রুয়ারির চুড়ান্ত দিনে সবুজ আন্দোলন-এর কর্মীরা যাতে নাগরিকদের বিক্ষোভের বিষয়ে তথ্য প্রদান করতে না পারে, তাঁর জন্য শাসকদের এই প্রচেষ্টা। শাসকদের এই সব কর্মকাণ্ড অর্থহীন, কারণ সবুজ আন্দোলনের কর্মীরা ইতোমধ্যে তাদের বন্ধু এবং আত্মীয়দের এই বিষয়ে সবকিছু জানিয়ে দিয়েছে এবং তথ্য প্রদান করার জন্য এক সৃষ্টিশীল উপায় উদ্ভাবন করেছে, যেমন টাকা দেওয়ার বিলে স্লোগান লেখা।

দারা ১৩৯০ বলছে [ ফারসী ভাষায়]:

কোন সন্দেহ নেই যে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিক্ষোভ প্রদর্শন হচ্ছে অন্যতম কারণ যার ফলে সরকার ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। রাস্তায় যে কোন ধরনের বিক্ষোভে তারা শঙ্কিত হয়ে ওঠে। আমরা জানি না ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে নাগরিকরা কি ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করবে তা বোঝা মুশকিল কিন্তু শাসকেরা এই দিনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে রেখেছে।

এমবরজান নামের আরেকজন ব্লগার লিখেছে [ ফারসী ভাষায়]:

বৃহস্পতিবার থেকে জিমেইল, ফেসবুক এবং এইচটিটিপি সাইটগুলোতে প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে অন্তন ইস্পাহানে। আমি শুনতে পেয়েছি, সব বড় বড় শহরগুলোতে ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা ঘটেছে। ছোট ছোট শহর এবং গ্রামে বিষয়টি স্বাভাবিক ছিল।

ইয়াদাস্ত হা (যার অর্থ হচ্ছে নোট বা উল্লেখ করা) পরিহাসের সাথে বলেছে [ফারসী ভাষায়] যে যদি তা অত্যাবশ্যকীয় হয়, তাহলে আমরা ইমেইলের বদলে কবুতর ব্যবহার করব।

বানী ম্যান একই সাথে সংবাদ প্রদান করেছেন যে [ফারসী ভাষায়], বিক্ষোভের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই শাসকরা জিমেইল এবং ফেসবুক-এ প্রবেশের সুযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে। ব্লগার ফরবেস-এর একটি সংবাদ উল্লেখ করেছে, যাতে বলা হচ্ছে যখন ইরান সরকার অনলাইনে অভিযান চালাচ্ছে, তখন ছদ্মনাম ব্যবহারকারী অনলাইন সম্প্রদায়ের জন্য তৈরি করা সফটওয়্যার টর, চিহ্নিত করা যায় না, এমন সঙ্কেত সম্বলিত যোগাযোগ ব্যবস্থা যাচাই করে দেখছে।

Exit mobile version