গত ৪ঠা নভেম্বর থেকে সাংহাই শহরের বাসিন্দা মানবাধিকার কর্মী ফেং ঝেংহু জাপানের নারিতা বিমান বন্দরের হলঘরে বাস করছে এবং দেশে ফেরার অপেক্ষা করছে। যখন তাকে তার নিজ দেশে প্রবেশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তখন থেকে তার এই অপেক্ষার পালা শুরু। সাংহাই-এর অভিবাসন বিভাগ তাকে আটবার চীনে প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়।
ফেং একজন অর্থনীতিবীদ ও মানবাধিকার কর্মী। ১৯৮৯ সালে সংঘটিত তিয়ানয়ানমেনে সংঘটিত গণহত্যার পর, তিনি এই দমন নীতির খোলাখুলি সমালোচনা করেন এবং এর ফলে এক বছর ধরে তিনি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এক অভ্যন্তরীণ তদন্তের মুখোমুখি হন। ১৯৯১ সালে তিনি পড়াশুনার জন্য জাপানে যান এবং ১৯৯৮ সালে ব্যবসা করার জন্য তিনি চীনে ফিরে আসেন। কিন্তু সাংহাই-এর পুলিশ তাকে ব্যবসার অনুমতি প্রদান করে নি, তার বদলে ৩ বছরের জন্য জেলে ঢুকিয়ে দেয়। ২০০০ সালে জাপান-সাংহাই যৌথ বিনিয়োগের উপর প্রকাশিত এক অবৈধ ই-বুক প্রকাশের দায়ে তার এই সাজা হয়।
এখন পর্যন্ত চীনা সরকার সরকারি ভাবে স্পষ্ট করে নি, কেন তারা ফেংকে স্বদেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
ফেং জাপানে ফিরে যেতে অস্বীকার করেন এবং ফিনান্সিয়াল টাইমসের সাংবাদিককে জানান যে, “একজন চীনা নাগরিককে এভাবে জোর করে বের করে দেওয়া এবং জাপান নিয়ে যাওয়া, আমার এবং চীনের জন্য অপমানজনক বিষয়”। তিনি এ ছাড়াও জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক অফিসের ‘রাজনৈতিক শরণার্থীর মর্যাদা লাভের জন্য দরখাস্ত করার প্রস্তাব’ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। তিনি জানান, তিনি স্বদেশে ফিরে যেতে চান।
এখন আমার জাপানী ভিসা (যা ২০১০ সালের জুন মাসে বাতিল হয়ে যাবে) আমার জন্য চীনে ফিরে যাবার পথে এক বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং সাংহাই-এর কর্তৃপক্ষ আমাকে নিজ দেশে প্রবেশ না করতে দেবার জন্য একে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। সাংহাই-এর কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থের বিষয়ে হুমকি প্রদান করেছে এবং তারা বিমান পরিবহণ সংস্থাকে ভয় দেখিয়েছে, যেন তারা এই অবৈধ অপহরণের (ভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেবার জন্য) কাজে অংশগ্রহণ করে।
গত ২রা নভেম্বর এনএইচ০৯২১ ফ্লাইট ধরে আমি দেশে ফিরে গিয়েছিলাম। আমি ইমিগ্রেশন পার না হয়ে শাংহাই পুতুং এয়ারপোর্টের ভেতরের এক হোটেলে আশ্রয় নেই। দ্বিতীয় দিন (৩রা নভেম্বর) প্রায় ডজনখানেক সাংহাই পুলিশ আমাকে জোরপূর্বক এনএইচ০৯২২ ফ্লাইটে তুলে দেয় এবং এভাবে দেশের এক নাগরিককে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। আমি তাদের এই অপহরণের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। বিমানে ঢোকানোর সময় আমি তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করি এবং এভাবে দুই ঘণ্টা যাবত এই বিশেষ অপহরণের বিরুদ্ধে লড়াই করি। সবশেষে সাংহাই-এর এনার (জাপানী বিমান সংস্থা অল নিপ্নন এয়ারওয়েজ) ম্যানেজার অপহরণকারীদের হুমকির মুখে এই অপহরণ কাজে সাহায্য করতে বাধ্য হয়। চারজন ছদ্মবেশী তরুণ পুলিশ প্লেনের শেষ প্রান্তে এক সীটের কাছে আমাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। এনার একজন কর্মীও আমাকে ধাক্কা মেরে বিমানের শেষ প্রান্তের সেই সীটে আমাকে বসাতে তাদের সাহায্য করে। সে সময় আমি এতটাই ক্লান্ত ছিলাম যে, তাদের এই অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে বাঁধা দেবার আর কোন ক্ষমতা ছিল না। অন্য যাত্রীরাও এই দৃশ্য দেখে এবং এ কারণে বিমান যাত্রায় এক ঘন্টার দেরি হয়। এবারই প্রথম আমাকে জোর করে জাপানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, টোকিওর কাছে নারিতা বিমান বন্দরের ভেতরে আটকে রাখা হয়।
৪ঠি নভেম্বর, আমাকে জাপানী বিমানবন্দরে পাঠানো হয়। আজ ৭ই নভেম্বর। আমি ৪ দিন ৩ রাত ধরে এখনও জাপানে প্রবেশ করি নি। এখনো ইমিগ্রেশন চেক ইন হল বা অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্যাদি নেওয়া হয় যে কক্ষে, সেখান বাস করছি। আমি শঙ্কিত অবস্থায় রাত কাটাচ্ছি। এখানে না খেয়ে আমাকে দিন কাটাতে হচ্ছে। কক্ষের বাইরে প্রবেশ পথে দোকান এবং বিশেষ খাবার বিক্রি করার যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু অভিবাসন তথ্য প্রদান এলাকায় কোন কিছু নেই। গত তিন দিন আমি কেবল রাইস রোল (চালের তৈরি গোলাকার খাবার) খেতে পেয়েছি। আমি অভিবাসন বিভাগের এক কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছি, যাতে তারা আমার উপর মানবিক নীতি প্রয়োগ করে। তাকে অনুরোধ করেছি তাদের কর্মীরা যেন আমাকে কিছু রাইস রোল কিনতে সাহায্য করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিতে। তিনি তা করতে অস্বীকার করেন। এমনকি আমার বোন আমার জন্য যে খাবার নিয়ে এসেছিল সেটি পর্যন্ত তারা আমাকে সরবরাহ করতে অস্বীকার করে। এটা স্পষ্ট যে তারা আমাকে না খাইয়ে রেখে অত্যাচার করার চেষ্টা করে, যাতে আমি জাপানে প্রবেশ করতে বাধ্য হই। তবে আমি আমার প্রতিবাদ চালিয়ে যাব। জাপানী আমলাতন্ত্র অমানবিক, নি:স্পৃহ এবং নিষ্ঠুর আচরণ করছে। তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্র, জাপানী প্রধানমন্ত্রীর এক আদর্শ কল্পনা। যদি একই ঘটনা চীনে ঘটত, তাহলে চীনের লোকের বিদেশীর সাথে এ রকম আচরণ করত না। চীনের জনতা আভ্যন্তরীণ সমস্যায় নিজেদের লোকদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে, কিন্তু তারা কখনই বিদেশীদের সাথে এ রকম আচরণ করবে না। তারা বিদেশী অতিথিদের প্রতি খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে…।
১৪ নভেম্বর-জাপান ও চীনে ওবামার ভ্রমণকে স্বাগতম:
美国总统奥巴马昨天访问日本。我又自制了一件英文广告衫,前面的请愿文字:“Chinese citizen has been refused to return to China for eight times.”,背后的文字:“Chinese Human Right 中国人権,回国 帰国 Return to China”…
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা জাপান সফরে আসেন। আমি ইংরেজীতে লেখা একটি টি শার্ট-তৈরি করেছি। এর সামনে লেখা রয়েছে: চীনের এক নাগরিক আট বার চীনে প্রবেশ করার অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে এবং এর পেছনে লেখা রয়েছে চীনের মানবাধিকার চীনে ফিরে আসতে চায়…।
ওবামা ১৫ই নভেম্বর ২০০৯- চীন সফরে যাবেন এবং চীনে তার প্রথম সফর হবে সাংহাইতে। যদি ওবামা জানতে পারে যে চীনের এক নাগরিককে আটবার নিজ দেশে প্রবেশ করাতে বাধা প্রদান করা হয়েছে, তখন যদি তার সাংহাই-এর সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়, তাহলে কি তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করবেন: কেন তোমরা এক বিদেশীকে এ রকম উষ্ণ সংবর্ধনা প্রদান করছ, যেখানে তোমরা স্বদেশী এক নাগরিককে দেশে ফিরে আসতে বাধা দিচ্ছ?
অনেকে বলছে যে আমি নিজে চীনের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই করছি, কিন্তু আমি জানি চীনের অনেক লোক আমার পিছে রয়েছে। যখন আমি ক্ষুধার্ত এবং মরিয়া হয়ে লড়ছি, চীন, হংকং এবং বিদেশ থেকে অনেকে আমার জন্য খাবার পাঠিয়েছে। যখন আমার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে, তখন চীন থেকে অনেক ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞ আমাকে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করেছে এবং তারা একটা টুইটার একাউন্ট তৈরিতে আমাকে সাহায্য করেছে। এখন আমি আমার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আমার পরিস্থিতি সম্বন্ধে তাজা খবর জানাতে পারব।
আমার উত্তর: “প্রথমত আমি জাতি সংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংগঠনের প্রতি আমার শ্রদ্ধা প্রকাশ করছি। কিন্তু আমি উদ্বাস্তু হিসেবে কোন দরখাস্ত প্রদান করতে ইচ্ছুক নই, কারণ আমার নিজের দেশ রয়েছে। চীন আমার মাতৃভূমি। আমি একজন চীনা নাগরিক এবং চীনের বুদ্ধিজীবী। চীনের প্রতি আমি দায়িত্বশীল থাকতে চাই। এখন আমার দেশে ফিরে যাওয়া উচিত এবং এটা একটা মানুষের মৌলিক অধিকার। চীনা কর্তৃপক্ষের বিদেশ থেকে ফিরতে চাওয়া নাগরিককে নিজ দেশে প্রবেশে বাঁধা দেওয়া কেবল, জাতি সংঘের সংবিধানের বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের লঙ্ঘন নয়, এটি চীনা সংবিধানেরও লঙ্ঘন। আমার নির্বাসন সম্বন্ধে চীনের সরকারি কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিক কোন বিবৃতি দেয় নি। আমি জানি চীনে আমাকে অনেক যন্ত্রণা পোহাতে হবে, কিন্তু তারপরেও আমি সেখানে থাকতে চাই। যত কম চীনা উদ্বাস্তু তৈরি হবে, তত চীন উন্নত হবে”।