তিউনিসের একটি প্রাথমিক আদালত একটি আইনী অভিযোগের জবাবে লেসবিয়ান, সমকামী, উভকামী, হিজড়া এবং অস্বভাবী যৌনাচারী (এলজিবিটিকিউ) সম্প্রদায় পৃষ্ঠপোষণকারী অনলাইন রেডিও স্টেশন শামস রাদ নিষিদ্ধ করতে অস্বীকার করেছে।
তিউনিসিয়াতে সমলিঙ্গ সম্পর্কগুলি অবৈধ হওয়া স্বত্ত্বেও এই সিদ্ধান্তটি এসেছে।
ইমামদের (মসজিদে নামাজ পড়ানো নেতাদের) প্রতিনিধিত্বকারী একটি ইউনিয়নের দাখিল করা একটি মামলায় গোষ্ঠীটি “সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ” এর প্রতি হুমকি সৃষ্টির অজুহাতে আদালতকে তিউনিসীয় ইন্টারনেট সংস্থাকে শামস রাদে প্রবেশাধিকার অবরুদ্ধ করার অনুরোধ জানাতে বলে।
আদালত তার ১৪ ফেব্রুয়ারির প্রতিক্রিয়ায় রায় দেয় রেডিও স্টেশনটি অন্যের অধিকার বা তাদের স্বজনদের সুনাম ক্ষুন্ন করেনি এবং ইউনিয়নটি্র এই দাবির কোন ভিত্তি নেই।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শামস রাদ যখন চালু হলে এর প্রতিষ্ঠাতারা বিপুল পরিমাণে অনলাইন হয়রানি এবং সহিংসতার হুমকি পেয়েছিলেন। বেশিরভাগ আরব অঞ্চলের দেশগুলির মতো তিউনিসিয়াতেও সমকামীতা তিন বছর কারাদণ্ডের শাস্তিযোগ্য একটি অপরাধ।
স্বাধীন মত প্রকাশের আরেকটি বিচারিক বিজয় হলো পাকিস্তানের উচ্চ আদালত পাকিস্তান সরকার পরিচালিত মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধগুলিকে অবৈধ আখ্যায়িত করে এগুলিকে পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ (পুণর্গঠন) আইনের বিপরীত বলেছে।
এই রায়টি সেই প্রশ্নটি উত্থাপন করেছে যা প্রতিবেশী দেশগুলি হয়তো কোনদিন অনুসরণ করতে পারে। বাংলাদেশে ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে দেশব্যাপী শুরু হওয়া স্কুল পরীক্ষায় নকল রোধের প্রচেষ্টায় কর্তৃপক্ষ মোবাইল ইন্টারনেট সাময়িকভাবে বন্ধ করে ব্রডব্যান্ডের গতি কমিয়ে দিয়েছিল। পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি মোবাইল ফোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে এটি তখন তার গতিপথ পরিবর্তন করে।
ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখে আকুয়ালিটি (সংবাদ).এসকে প্রতিবেদক জান কুচিয়াক এবং তার বান্ধবী মার্টিনা কুসনিরোভাকে রাজধানী ব্রাতিস্লাভা থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে তাদের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই মামলাটি নিয়ে কর্মরত একজন পুলিশ কমন্ডার বলেছেন এই হত্যাকাণ্ডটি “খুব সম্ভবতঃ ঐ সাংবাদিকের অনুসন্ধানমূলক কাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত।” কুচিয়াক ন্দ্রাংঘেতা মাফিয়াদের একটি তদন্তের বিষয়ে সংগঠিত অপরাধ ও দুর্নীতি প্রতিবেদন প্রকল্পের সাথে কাজ করছিলেন। সংস্থাটি এটিকে “বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং ভয়ঙ্কর অপরাধী গোষ্ঠী” বলে বর্ণনা করেছে। গোষ্ঠীটি অবশ্য কুচিয়াককে কাজ করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া প্রথম স্লোভাক সাংবাদিক হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ফেসবুকে এবং হোয়াটসঅ্যাপে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও হিন্দু দেবতাকে নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করার অভিযোগে ভারতের উত্তর প্রদেশে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে “ধর্ম ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমান করে যে কোন ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে “ইচ্ছাকৃত এবং বিদ্বেষমূলক কাজ” করার অভিযোগ আনা হবে।
হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে প্রতিবেশীদের বিদ্যুৎ চলে যাওয়া সম্পর্কে সতর্ক করার পর ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে ভেনিজুয়েলার গোয়েন্দা সংস্থা (এসইবিআইএন) ইউনিয়নপন্থী এবং ভেনিজুয়েলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য এলিও পালাসিওসকে গ্রেপ্তার করেছে। পালাসিওস বলেছেন বিদ্যুৎ চলে যাওয়াগুলি সম্ভবতঃ অবহেলা এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ অভাবের একটি ফলাফল। বিদ্যুৎ চলে যাওয়া সম্পর্কিত তার এই ব্যাখ্যা সরকার ঘোষিত বিরোধী দলগুলির অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের ফলাফলের সঙ্গে বিরোধাত্মক।
তুরস্কের একটি সংসদীয় কমিশন একটি খসড়া আইন অনুমোদন করেছে যা অনলাইন সম্প্রচারকারীদেরকে কেন্দ্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম নিয়ন্ত্রক আরটিইউকে এর লাইসেন্স এবং নিয়ন্ত্রণাধীন করবে। খসড়া আইনটি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণকে ব্যক্তিগত সামাজিক গণমাধ্যম অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত বিস্তৃত করতে পারে যা বাক স্বাধীনতা প্রচারকদের মধ্যে রাজনৈতিক সেন্সরশিপের উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সাংবাদিকদের সুরক্ষা কমিটি দৃঢ়ভাবে খসড়া আইনটির নিন্দা করেছে।
সাও পাওলো সিটিহলের অফিসিয়াল পাতায় নেভিগেট করা ফেসবুক ব্যবহারকারীরা তাদের মুখ বন্ধ না রাখলে অবরোধ মোকাবেলা করতে বাধ্য হচ্ছে। তথ্যে প্রবেশাধিকার অনুরোধের মাধ্যমে সংবাদ সংস্থা আর৭ থেকে পাওয়া সরকারী নথি অনুসারে পাতাটির সঞ্চালকেরা কিছু কিছু পদকে নিষিদ্ধ এবং বর্তমান মেয়র জোয়াও দোরিয়ার সমালোচনাকারীদের অবরোধ করছে। পাতাটি এই শহরের বাসিন্দা এবং এর প্রশাসনের মধ্যে সংলাপের একটি জনপ্রিয় মঞ্চ।
গ্লোবাল ভয়েসেসের জন্যে গল্পটি তুলে ধরতে গিয়ে তাইসা সাঞ্জারলা লিখেছেন “সরকারি আধিকারিকদের তাদের অফিসিয়াল পাতাগুলিতে মন্তব্য করার জন্যে ব্যবহারকারীদেরকে ব্লক করার মানে হলো নাগরিক বিতর্কের স্থানটিতে প্রকৃতপক্ষেই ব্যবহারকারীদের কণ্ঠস্বরকে সেন্সর করা।”
কিউবার কর্তৃপক্ষ এল এস্তরনুদো (“হাঁচি”) ওয়েবসাইটটি অবরোধ করে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের হাতে সেন্সর হওয়া প্রচার মাধ্যমের দীর্ঘ হতে থাকা তালিকাটিকে আরো বড় করেছে। এই সাইটটি সামাজিক সমস্যা ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি তুলে ধরে এবং এর উদ্দেশ্য হলো “অন্য কিউবা”র গল্প বলা যা সরকারি বিবৃতির অংশ নয়। এর প্রতিক্রিয়ায় সম্পাদকরা “সেন্সর” এর উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠিতে লিখেছেন অবরোধ করা সত্ত্বেও তারা তাদের সম্পাদকীয় লাইন পরিবর্তন করবেন না।
যিশু খ্রীষ্টের উপর তার মুখের ছবি সুপার ইম্পোজ করে ইন্টারনেটে সেটা প্রচার করার একজন স্পেনীয় নাগরিককে জরিমানা করা হয়েছে। অভিশংসক (প্রসিকিউটর) এর মতে এতে স্থানীয় ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতি “উপেক্ষা এবং ঠাট্টা” প্রদর্শিত হওয়ার কারণে ২৪ বছর বয়েসী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটির ফলে অনলাইনে বিরক্তির একটি ঢেউ বয়ে যায় যেখানে অনেকে ব্যবহারকারী যিশু খ্রীষ্টের মুখের উপর তাদের নিজেদের মুখের ছবি সুপার ইম্পোজ করেছে। সমর্থকরা তার জরিমানা পরিশোধের জন্যে অর্থ যোগাড় করেছে, যা ঐ ব্যক্তির ১০দিনের মজুরীর সমান।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি নতুন প্রতিবেদনে বেশিরভাগ সংখ্যালঘু উইঘুর এবং অন্যান্য মুসলমান জনসংখ্যা অধ্যুষিত পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং অঞ্চলে চীনের পূর্বাভাসমূলক পুলিশী নজরদারী অবকাঠামোর মাত্রা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সিসিটিভির মুখ সনাক্তকরণ প্রযুক্তি, মোবাইল ফোন নজরদারি সফ্টওয়্যার, জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থা এবং সরেজমিন নজরদারির সমন্বয় করে সহিংস কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসবাদকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা চীনের “কঠোর আঘাত প্রচারণা”র অংশ হিসেবে পুলিশ এখন নিয়মিতভাবে নাগরিকদের কার্যকলাপ, আন্দোলন, আর্থিক লেনদেন এবং একগাদা অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত উপাত্ত জড়ো করে নির্দেশনা যাচাই করে।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দি ভার্জ নতুন অনুসন্ধান প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে যে নিউ অরলিয়ান্স পুলিশ বিভাগ স্থানীয় নগর কাউন্সিলরদের না জানিয়ে আমেরিকা দক্ষিণের শহরগুলির বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্যদের সনাক্তকরণ এবং কার্যকলাপ অনুসরণ করার জন্যে সিলিকন ভ্যালির প্রতিষ্ঠান পলান্টির তৈরি পূর্বাভাস প্রদানকারী পুলিশিং সফ্টওয়্যার ব্যবহার করছে।
প্রযুক্তি সংবাদ সাইটটির মতে, সফটওয়্যারটি “দলের অন্যান্য সদস্যদের লোকেদের সম্পর্ক খুঁজে বের করে, অপরাধমূলক ইতিহাস তুলে ধরে, সামাজিক মিডিয়া বিশ্লেষণ করে ঐ ব্যক্তির সহিংস বা সহিংসতার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা ব্যক্ত করে।” সংস্থা এবং কোম্পানিটির মধ্যেকার একটি “মানবহিতৈষী” সম্পর্কের অংশ হিসাবে সফ্টওয়্যারটি পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল বলে অসামরিক সরকারি কর্মকর্তাদের খুঁটিনাটি এই তথ্যে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
আফেফ আব্রুজি, এলেরি রবার্টস বিডল, মারিয়ান দিয়াজ, রোহিত জ্যোতিষ, লরা ভিদাল এবং সারাহ মায়ার্স ওয়েস্ট এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন।