একটি কলম কিনি, এক জীবন বাঁচাই। সিরিয়ার একজন পিতা এক তহবিল সংগ্রহে উৎসাহ যুগিয়েছে

9cfcc2c90ddc66c8a6e1bae0acf9245e

বৈরুতের রাস্তায় আব্দুল হালিম আত্তার এবং তার কন্যা রীম। ছবি ইন্ডিয়েগোগো-এর।

স্যোশাল মিডিয়াকে প্রায়শই “ জীবন বদলে দেওয়ার এক শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়” এবং “কলম কিনি” (#বাইপেন) বাক্যটি এই ধরণের এক ঘটনায় গত সপ্তাহ ধরে টুইটার এবং ফেসবুকে আলোচিত এক হ্যাশটাগে পরিণত হয়। এই প্রচারণা ছিল এক সিরীয় পিতাকে সাহায্য করার জন্য এক সম্মিলিত প্রয়াস। সম্প্রতি এক ছবিতে আত্তারকে বৈরুতে রাস্তায় কয়েকটি কলম বিক্রি করতে দেখা যায়।

আব্দুল হালিম আত্তার এর বাস ছিল দামেস্কের ইয়ারমুক-এর শরণার্থী শিবিরে, বর্তমানে সে বৈরুতে বাস করা এক ফিলিস্তিনি সিরীয় শরণার্থী। সে হচ্ছে সেই সমস্ত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের মধ্যে একজন যারা সিরিয়া থেকে পালিয়ে লেবাননে আশ্রয় নিয়েছে। তার রীম এবং আব্দেলেইলাহ নামক দুই কন্যা রয়েছে, যাদের মা নেই।

সিরীয় এক পিতা তার ঘুমন্ত কন্যাকে কাঁধে নিয়ে রাস্তা কলম বিক্রি করছে।

এই কাহিনীর শুরু ২৫ আগস্ট তারিখের করা এক টুইট থেকে, যখন গিসুর সিমোনারসেন (@গিসিসিম) নামক আইসল্যান্ডের এক একটিভিস্ট কলম বিক্রয়রত অবস্থায় আব্দুল হালিমের ছবি পোষ্ট করে, যে কলম বিক্রি করে তার দুই শিশুর জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে। এই ছবি প্রচণ্ড সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা তৈরি করে, এদিকে এই পোস্টটি হাজার হাজার বার পুনরায় টুইট করা হয় এবং প্রিয় এক টুইটে তালিকায় উঠে আসে। আব্দুল হালিমকে উৎসর্গ করে শীঘ্রই সিমোনারসেন একটি টুইটার একাউন্ট খোলে যার নাম “কলম কিনি” (@বাই_পেন), এবং অনলাইন থেকে প্রাপ্ত অর্থ আত্তারকে প্রদান করার জন্য নিজে তাকে খুঁজে বের করে।

১. কলম কিনি নামক প্রকল্পের জন্য বিছানায় ঘুমোতে যাওয়ার বেশ কয়েকটি কাজ সারার আছে। আত্তার এর সাথে যোগাযোগের জন্য বৈরুতে আমাকে বিশ্বস্থ এক সংযোগ খুঁজে বের করতে হবে।
২. আর একবার যদি তাকে খুঁজে বের করতে পারি, তাহলে যাতে তার জন্য এক তহবিল গড়া যায় সবচেয়ে সেরা উপায়ে সেই প্রচেষ্টা করব, আর এর জন্য এমন এক একাউন্ট করা হবে যেখান থেকে সে নিজে টাকা উঠাতে পারব, যদি না তার জন্য উঠানো টাকা যাকে দেওয়া হবে আত্তার সেই ব্যক্তিকে খুঁজে না পায়,
৩. অথবা তার হাতে দেওয়া সম্ভব না হয়। আশা করি এই সকল পরিকল্পনা কাজ করবে এবং আপনাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।

শীঘ্রই সাংবাদিক এবং ব্লগাররা এই কাহিনী সম্বন্ধে জানতে পারে এবং ক্রমশ আরো অনেকের কাছে কলম কিনি নামক আন্দোলনের খবর পৌঁছে যায়। লেবাননফররিফিউজি (@লেব৪রিফিউজি) নামক এনজিওর প্রতিনিধি ক্যারোল মালুফ (@ক্যারোলমালুফ) সংগৃহীত অর্থ আব্দুল হালিমের হাতে দিয়ে দেওয়ার তার সাথে সাক্ষাতের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

শরণার্থী পিতা এবং তার কন্যার কলম বিক্রি করার ছবি কলম কিনি (#বাইপেন) নামক আন্দোলনে পরিণত হয় এবং এই আন্দোলনে হাজার ডলার সংগৃহীত হয়েছে।

প্রাথমিক ভাবে এই প্রচারণায় ১৫ দিনে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫,০০০ মার্কিন ডলার। তবে মাত্র পাঁচ দিনে ৬,৩৭৫ জন ব্যক্তির অনুদানে এই উদ্যোগ ১৬৮,৮৮৪ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিকেরা এই ঘটনায় অর্থ দান করেছে, এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের অন্য অনেক দেশ থেকে অর্থ সাহায্য এসেছে।

প্রাপ্ত সংবাদ অনুসারে আব্দুল হালিম জানিয়েছে যে এই অর্থ সে কেবল তার সন্তানদের শিক্ষা এবং লালন পালনের জন্য ব্যয় করবে।

যারা কলম কিনি নামক প্রকল্পে অবদান রাখতে চান, তাদের জন্য হাতে এখনো আট দিন রয়ে গেছে।

“নতুন এক জীবন শুরু করার জন্য আব্দুল হালিম এবং রীমকে সাহায্য করুন” নামক তহবিল সংগ্রহের প্রচারণা। ছবি ইন্ডিয়েগোগো-এর।

Exit mobile version