ইরানের নারী অধিকার কর্মী মাহাদিয়ে গোলরোর কারামুক্তি

Mahdieh Golroo. Image edited by Kevin Rothrock.

মাহাদিয়ে গোলরো, ছবি কেভিন রুথরকের

ইরানের এক নারী অধিকার কর্মী মাহদিয়ে গোলারোকে গত ২৭ জানুয়ারি তারিখে ৭০০ মিলিয়ন টোমানের (২০০,০০০ মার্কিন ডলার) জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। গোলরো ৯৩ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন, তাকে ইরানের সংসদের সামনে গ্রেফতার করা হয়, যেখানে ইস্পাহানে নারীদের উপর এসিড হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার দায়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তাকে ইরানের কুখ্যাত ইভিন কারাগারে ৪৫ দিন কারাগারে একাকী রাখা হয়, যে কারাগার রাজবন্দীদের আটক এবং নির্যাতনের জন্য বিখ্যাত।

ইরানের নারী একটিভিস্ট মাহাদিয়ে গোলরো ইস্পাহানে নারীদের উপর পরপর সংঘঠিত এসিড হামলার প্রতিবাদে ৯৩ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন।

গত অক্টোবর, ইরানের ইস্পাহানে নারীদের উপর ধারাবাহিক এসিড হামলা চালানো হয় যা দেশটির গণ বিক্ষোভের সৃষ্টি করে। কর্তৃপক্ষ দাবী করে যে সেখানে এ রকম চারটি এসিড হামলার ঘটানা ঘটেছে, কিন্তু স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের হিসেবে এর দ্বিগুণ হামলার ঘটনা ঘটেছে। যখন পুলিশ এই হামলা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়, তখন সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ স্যোশাল মিডিয়ায় আন্দোলন শুরু হয়।

গত মাসের শুরুতে গ্লোবাল ভয়েসেস অ্যাডভোকেসি কারাবন্দী একদল মিডিয়া কর্মী এবং একটিভিস্টের নামের এক তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতে গোলরোর নাম ছিল। ইরানের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা একজন একটিভিস্টকে কারাগারে আটকে রাখার মত ভণ্ডামির উপর জোর দেয় যে কিনা এমন এক ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে স্বয়ং সরকার নিজে যে ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছে।

দুই মাস ধরে মিজ গোলরোকে নিঃসঙ্গ এক কারাগারে রাখা হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কি সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।

গিসাউ নিয়া ইরানের মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রচারণার উপ পরিচালক, তিনি এক বিবৃতিতে গ্লোবাল ভয়েসেস-এর কাছে গোলরোর গ্রেফতারের বিশেষত্ব তুলে ধরেন, এতে তিনি বলেন যে নারীরা যাতে জনসম্মুখে আসতে না পারে তার এক প্রচেষ্টা হিসেবে কর্তৃপক্ষ গোলরোকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে।

এদিকে বলা যেতে পারে বর্তমানে মাহদিয়ে গোলরোরকে জামিনে মুক্ত করা হচ্ছে যা মানবাধিকার বিষয়ে স্বাগত জানানোর মত এক উন্নয়ন। তবে এর আইনি প্রক্রিয়া শেষ হতে এখনো অনেক দেরী এবং ইরানের নারীদের কণ্ঠস্বরকে নিশ্চুপ করার ইরানী কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা এক বৃহত্তর অংশ হচ্ছে তার এই বিচার। যদিও ইরানের কর্মকর্তারা জোর গলায় অস্বীকার করে বলছে গ্রেফতার হওয়ার আগে যে এসিড হামলার বিষয়ে গোলরো যে ভাবে নিন্দা জানাচ্ছিল, তা এক অপরাধীর মত কাজ, যদিও খালি কোন স্থানে এসিড ছোঁড়ার মত ঘটনা ঘটেনি। তার বদলে এই সকল নিষ্ঠুর কর্ম এই ধরনের নিয়মতান্ত্রিক নীতিমালা, আড়ম্বরপূর্ণ ভাষা এবং সংসদীয় রীতিনীতির মাঝে ঘটছে, ইরানের কর্মকর্তারা নারীদের প্রকাশ্যে আসা বন্ধের উদ্দেশ্যে যেগুলো তৈরী করেছে। গোলরো এবং মাত্র গত সপ্তাহ আগে যে সমস্ত নারী একটিভিস্টদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা খুব সাধারণভাবে এই সকল উন্নয়নের বিষয় প্রশ্ন করার মত সাহস রাখে, যা ইরানের কর্মকর্তাদের সেই সমস্ত ব্যক্তিদের দমন করার এক সরল প্রচেষ্টা যারা এই নারী বিরোধী ধারাকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষেত্রে ভীত নয়।

Exit mobile version