“আমি শার্লি”, এই হিসেবে জর্জ ক্লুনিকে প্রচ্ছদে তুলে ধরায় ইরানের এক পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে

Mardom-e Emrooz cover, "Clooney: I am Charlie too."

মারদোম-ই-ইমরোজ পত্রিকার প্রচ্ছদ, “ক্লুনিঃ আমিও এক শার্লি”

প্যারিসের শার্লি হেবদো নামক রম্য পত্রিকা অফিসে সংঘঠিত গুলিবর্ষণের ঘটনার উপর করা সংবাদপত্রের প্রতিবেদন ইরানের সংবাদপত্র জুড়ে এক জোরালো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

১৩ জানুয়ারির সংস্করণের প্রচ্ছদে যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেতা জর্জ ক্লুনির ছবি প্রকাশ করার কারণে সংস্কারপন্থী সংবাদপত্র মারদোম-ই-ইমরোজের প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়, উল্লেখ্য যে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার গ্রহণের সময় প্রদত্ত বক্তৃতায় ক্লুনি উচ্চারণ করে যে “আমি হচ্ছি শার্লি”। প্রচার মাধ্যম বিষয়ক এক আদালত প্রকাশনা বন্ধের এই আদেশ জারি করে, এদিকে ইরানে সংবাদপত্র প্রকাশের অনুমতি প্রদানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্কৃতি এবং ইসলামিক নির্দেশনা মন্ত্রণালয় উক্ত সংবাদপত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে।

২০ জানুয়ারি তারিখে কট্টরপন্থী সংবাদপত্র ওয়াতান-ই-ইমরোজ-এর “শার্লির মৃত্যু” শিরোনামে এক প্রচ্ছদ প্রকাশের পর এই ঘটনা ঘটে।

ওয়াতান-ই-ইমরোজ প্রকাশিত “শার্লির মৃত্যু” শিরোনামের প্রচ্ছদ।

ফ্রান্সের ব্যাঙ্গাত্মক রম্য পত্রিকা শার্লি হেবদোর অফিস এবং এর দুইদিন পর এক ইহুদি সুপারমার্কেটে পরিচালিত হামলায় মোট ১৭ জন ব্যক্তি নিহত হয়। ইরানের কর্মকর্তারা এই হামলার নিন্দা জানায়, পাশাপাশি উক্ত ম্যাগাজিনের কার্টুন মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানছে বলে অভিহিত করে।

শাহরাম রাফিজাদেহ, ইরানের সংবাদপত্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং রেডিও ফারদার ইরানের প্রচার মাধ্যম বিষয়ক প্রাবন্ধিক, তিনি গ্লোবাল ভয়েসেস প্রদান করা এক সাক্ষাৎকারে ব্যাখ্যা করেছেন কি ভাবে প্যারিসের ওই বেদনাদায়ক ঘটনা নিয়ে আলোচনা ইরানের প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া শুরু হয়:

শার্লি হেবদোর ঘটনার দুটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। প্রথমত শার্লি হেবদোর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আক্রমণ। বেশীর ভাগ সংবাদপত্র এবং কাহিনীতে এই বিষয়টিকে যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা দেওয়া হয়েছে। রক্ষণশীল [সংবাদপত্র] কায়হান এমনকি আহমাদ খাতামির কাহিনী প্রকাশ করে, যিনি তেহরানে জুম্মার নামাজের খুতবায় নেতৃত্বে প্রদান করেন, তিনি শার্লি হেবদোর এই হামলার নিন্দা জানিয়েছিলেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মারদোম-ই-ইমরোজ পত্রিকা তার প্রচ্ছদে জর্জ ক্লুনির ছবি ছাপে যেখানে সে উচ্চারণ করছে “আমিও এক শার্লি হেবদো”। তবে যখন ফ্রান্সের এই পত্রিকা এই ঘটনার পরপর রাসুল মুহাম্মদকে (সঃ) কে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করে, তখন ইরানের কট্টরপন্থী রক্ষণশীলরা দেশটির সংস্কারপন্থী এবং যারা [ইরানের রাষ্ট্রপতি হাসান] রোহানির সমর্থকদের উক্ত পত্রিকাকে সমর্থন করার জন্য আক্রমণ করে, তাদেরকে শার্লি হেবদোর মত চিন্তা করা এবং প্যারিসের উক্ত ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আয়োজিত সংহতি মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য ইরানের দূত হিসেবে জাভাদ জারিফকে [ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী] পাঠানোয় তাদেরকে অভিযুক্ত করে। কায়হানের প্রথম পাতায় মারদোম-ই-ইমরোজ পত্রিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এর এক প্রতিক্রিয়া। কায়হান বৃহস্পতিবার মারদোমের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে আর শনিবারের মধ্যে তারা পত্রিকাটির প্রকাশনা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।

কট্টরপন্থী সংবাদপত্র কায়হান, যার ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্তদের সাথে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার দপ্তরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, উক্ত পত্রিকা তার এক প্রথম পাতায় লেখে “আনুষ্ঠানিক এক নাচের আসরে স্বাগতম, লেখকরা যেটিকে অন্ধভাবে পরিচালনা করছে”। আর এর নীচে এক কার্টুন রয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে নাইজেরিয়ার একটিভিস্ট প্যারিসের সংহতি মিছিলে যোগ দেওয়া বিশ্বের নেতাদের বোকো হারাম-এর হাতে নিহত ২০০০ নাইজেরীয় নাগরিকের স্মরণে তাদের সাথে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

জর্জ ক্লুনিকে নিয়ে করা মারদোম-ই-ইমরোজ প্রথম পৃষ্ঠার জবাবে তৈরী করা কায়হান-এর প্রথম পাতা।

Exit mobile version