দূর্নীতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং চিক-ভি ২০১৪ সালে ক্যারিবীয় অঞ্চলে শিরোনাম দখল করে রেখেছিল

"Death to Chikungunya #Trinidad" - photo by georgiap, used under a CC BY-NC-SA 2.0 license.

ত্রিনিদাদে চিকুনগানইয়ায় মৃত্যু-ছবি জর্জিয়াপি-এর, সিসি বাই-এনসি-এসএ লাইসেন্সের অধীনে ব্যবহার করা হয়েছে।

দূর্নীতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং চিকুনগানইয়া, বছর জুড়ে ক্যারিবীয় অঞ্চলে কি ঘটছে এই তিনটি বিষয় তা স্পষ্ট করে দেয়। নিঃসন্দেহে এছাড়াও এই অঞ্চলের অন্য অনেক আকর্ষণীয় কাহিনীও রয়েছে–যেমন পুরুষ সমকামীদের অধিকার, এই আঞ্চলের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদের বিদায় এবং এখানকার সংস্কৃতি, শিল্প এবং সাহিত্য সম্বন্ধে কিছু ভাল সংবাদ-কিন্তু এই তিনটি বিষয় গত বছর এই অঞ্চলের সকল সংবাদ জুড়ে ছিল, আর আসুন এই প্রবন্ধের মাধ্যমে দ্রুত এই অঞ্চলের উপর এক নজর চোখ বুলাই…

চিক-ভি

গত বছরের একেবারে শুরুতে, ঠিক জানুয়ারী মাসে, গ্লোবাল ভয়েসেস চিকুনগানিয়া নামের মশক পরিবাহিত এক ভাইরাসের কথা উল্লেখ করে, যা জ্বর এবং শরীরের বিভিন্ন গাঁটে ব্যাথার কারণ। অক্টোবরের মধ্যে বিশেষ করে জ্যামাইকায় এটা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে, সে সময় এই রোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ প্রকাশিত হয় এবং এই রোগের আক্রমণে কয়েকজনের মৃত্যু ঘটে। পরিস্থিতি ক্রমশ আরো জটিল হয় যার কারণ হচ্ছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কার্যত এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে নৈপুণ্য দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

একই সাথে এ বছর জ্যামাইকার ব্লগস্ফেয়ার সমকামিতা ভীতি এবং পুরুষ সমকামীদের অধিকার,পুলিশের নির্মমতা, যৌনতা, প্রকাশ্যে যৌন হয়রানি এবং যৌন নির্যাতন ইত্যাদি বিষয়ক নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় অনুষ্ঠিত হয়।

২০১৪ সালে ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোর জলবায়ু পরিবর্তন মিছিল; ছবি ডেইলান কুয়েসনেলের, আইএমুভমেন্ট-এর সৌজন্যে প্রাপ্ত, অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন

এই বছর যখন পরিবেশের মত বিষয় সামনে চলে আসে, তখন ক্যারিবীয়রা এই বিষয়ে তাদের নীতি এবং রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা করেছে। এমনকি নেট নাগরিকরা পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকা গড়ার সরকারের সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতির প্রতি তাদের হাত উত্তোলন করেছেত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো এবং গ্রানাডার তরুণ একটিভিস্টরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক মিছিলে অংশ নিয়েছে এবং নাগরিকদের শিক্ষিত করতে মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনকে সংগঠিত করছে, আর যে পরিবেশ বিপর্যয়কে মানবের সবচেয়ে বড় শত্রু বলে অভিহিত করা হচ্ছে, এইসব তরুণরা তার বিরুদ্ধে এক কার্যকরী পরিবর্তন ঘটাতে সাহায্য করছে।

দূর্নীতি
ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোর পরিবেশ, আর দেশটির সুশাসনের প্রয়োজন, উভয়ে এক সাংঘর্ষিক রূপ ধারণ করেছে, যা দেশটির সবচেয়ে আলোচিত কাহিনী-পরিবেশবিদ একটিভিস্ট ডঃ ওয়াইনে কুবালালসিংহ দ্বিতীয় অনশন ধর্মঘটের মধ্যে দিয়ে ধরা পড়ে। এক মহাসড়কের প্রসারণের প্রতিবাদে কুবালালসিংহ এই ধর্মঘট শুরু করেন। তিনি এবং তার দল ভিন্ন পথে উক্ত মহাসড়ক নির্মাণের জন্য আন্দোলন করছেন, দলটি উল্লেখ করছে যে এই সড়ক নির্মাণ হলে এখানে দীর্ঘ সময় ধরে বাস করা গ্রামীণ সম্প্রদায় বাস্তুহারা হয়ে পড়বে এবং পরিবেশগত দিক দিয়ে দেখলে এক সংবেদনশীল খাঁড়ি এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। যথার্থরূপে গ্রহণ করা এই প্রকল্প মাঝে এক ফাঁক আবিস্কারের কারণে কুবলালসিংহের ভিন্নমত সরকারী দপ্তরে স্বচ্ছতার বিষয়ে নাগরিকদের ক্রমশ বাড়তে থাকে অসন্তোষের এক প্রতীক হয়ে ওঠে, আবার নাগরিক সেবার জন্য যে সব জনপ্রতিনিধির সংসদে পাঠানো হয়, সেখানে গিয়ে তারা যে ভাবে নাগরিকর কণ্ঠস্বর উপেক্ষা করে, এটি তারও এক প্রতীক।

২০১২ সালে অনশন ধর্মঘটের সময় পরিবেশবাদী ডঃ ওয়াইনে কুবলালসিংহ। ছবি জলিইয়ানানে সিনানান-এর, অনুমতিক্রমে ব্যবহৃত।

তখন থেকে কুবলালসিংহ তিন মাস না খেয়ে টিকে ছিলেন এবং তার এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সত্ত্বেও, এই বিষয়ে অচলাবস্থা বিদ্যমান রয়ে গেছে। এই অচলবস্থার সাথে বছর জুড়ে ছিল রাজনৈতিক ভাবে গ্রহণ করা অন্যান্য ভুল পদক্ষেপ- যার মধ্যে রয়েছে সবার অজান্তে পাশ করা সংবিধান সংস্কার আইন –যা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকারকে আরো আনুকূল্য প্রদান করতে এবং দ্বি দলীয় স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সক্ষম, আর এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি বিষয়টিকে আরও যথাযথ ভাবে জনতার ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যম হিসেবে দেখছে, সে ভাবছে ধারাবাহিকতা নেই এমন সংবিধান সংস্কার আইন নিয়ে কথা বলার বদলে তাকে এক কৌতুক অভিনেতাকে শাস্তি প্রদান করতে হবে, এবং এই অঞ্চলে এক ব্যর্থ ক্রীড়া কর্মসূচি নিয়ে ওঠা দূর্নীতির অভিযোগের সংবাদ রয়েছে যে কর্মসূচি অধিকার বঞ্চিত তরুণ এবং অবৈধ সমান্তরাল অর্থনীতির পটভূমিতে বাড়তে থাকা ভয়াবহ অপরাধ বিরুদ্ধে গ্রহণ করা এক কার্যক্রম- আর সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে এই সাদৃশ্যপূর্ণ দুই দ্বীপের ক্ষেত্রে এ বছরটি বেশ হতাশাজনক ভাবে কেটেছে।

বড়দিনের সময়ে সকল কিছু মাথায় চলে আসে, বিশেষ করে যখন এবার ছুটিতে খেলনা গাড়ি চালানোর পেছনে সরকার বেশ মুক্ত হস্তে খরচ করার বিষয়টি দারুণভাবে সমালোচিত হয়, এমন কি যখন বিশ্ব বাজারের দ্রুত তেলের দাম কমতে থাকার কারণে দেশটি এক অনিশ্চিত এক অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। তবে অনেকে ধারণা করছে রাজনৈতিক অসৎ কর্মকাণ্ড আরো খারাপের দিকে গড়াবে, বিশেষ করে যখন এই বছর সাংবিধানিক কারণে সরকারকে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন শুরু করতে হবে।

জ্যাব মোলাসিয়ের নতুন এক আদিবাসী সঙ্গীত থিয়েটার কর্মের প্রচারণামূলক ছবি, – এই সপ্তাহে ত্রিনিদাদ এবং টোবাগোয় এর প্রথম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ছবি মারিয়া নুনেস-এর, কালাবাস ফাউন্ডেশন ফর দি আর্টসের-সৌজন্যে প্রাপ্ত, অনুমতিক্রমে ব্যবহৃত।

ভাল সংবাদ … এবং বিদায়

এর মাঝেও এই অঞ্চল, এই বলে নিজের সান্তনা খুঁজে নিতে পারে যে এ বছর এখানকার জন্য কিছু ভাল সংবাদ ছিল। গ্রানাডায়, তরুণরা আবার পাঠে উৎসাহী হয়েছে যার জন্য এক ছোট্ট লাইব্রেরিকে ধন্যবাদ, যা এক বিশাল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ক্যারিবীয় সাহিত্য বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, এবং সঙ্গীত ও নাট্যকলার ক্ষেত্রে ক্যারিবীয় শিল্পীরা এক যাদুকরী কাজ সৃষ্টি করছে। আর যখন এই বছর জন প্রিয় ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানানোর পালা আসে যাদের আমরা হারিয়েছি, চিন্তাবীদ, শিক্ষাবিদ, অগ্রপথিক, শিল্পী এবং পরিবর্তন আনয়ন কারী তাদের সংখ্যা স্বৈরাচারীদের চেয়ে অনেক বেশী ছাড়িয়ে গেছে- যা দেখাচ্ছে ২০১৪ সালে এই অঞ্চল সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা মোকাবেলা করা সত্ত্বেও, যৌথ ভাবে কিছু সঠিক কাজ করেছে।

আর এই তো এসে গেছে ২০১৫ সাল!

Exit mobile version