বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে মিশরীয়দের না

1782181_699165710125690_4804191449253461677_n

“বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা নয়। দাসত্ব নয়। ছবিটি “বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা নয়” এর ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া।  

মিশরে বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক সেবা প্রদান অথবা বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া বন্ধ করতে একটি প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে। প্রচারাভিযানটির সক্রিয়কর্মীদের প্রতি মিশরীয় জনগণ তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। 

১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী বেশিরভাগ মিশরীয় তরুনদের বাধ্যতামূলকভাবে সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে হয়। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং শারীরিক সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে কাজের দীর্ঘতা কম বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ কিছু স্বাস্থ্যগত অবস্থা বা বিশেষ পারিবারিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে কখনও এর কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটতে দেখা যায়।

এই প্রচারাভিযানটি “বাধ্যতামূলক সামরিক বাহিনীতে যোগদানে না” শিরোনামের একটি ফেসবুক পাতা থেকে শুরু হয়। কয়েকজন মিশরীয় সক্রিয় কর্মী পাতাটি তৈরি করেন। পাতাটিতে কয়েক হাজার লোক লাইক দিয়েছেন এবং মিশরীয়দেরকে পাতাটিতে ব্লগ, টুইট এবং তাদের বিভিন্ন ছবি শেয়ার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। গত সপ্তাহে শুরু হওয়া প্রচারাভিযানটিতে আপনার সমর্থন রয়েছে এমন চিহ্নবাহী কিছু ছবি শেয়ার করারও আহ্বান জানানো হয়। 

আন্তর্জাতিক বিবেক বিরোধিতা দিবস দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে সক্রিয় কর্মীরা এই উদ্যোগটি নিয়েছেন। প্রতি বছর ১৫ মে তারিখে এই দিবসটি পালন করা হয়। সামরিক বাহিনী বা সামরিক কার্যকলাপে যোগ দেওয়া বর্জন করতে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়। কখনো কখনো জেহোভার সাক্ষীদের মতো ধর্মীয় কিছু বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে এটি পালন করা হয়। সামরিক শাসন এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে নিজেদের শান্তিপূর্ণ মনোভাব তুলে ধরতে অন্যান্যরা সামরিক বাহিনী বর্জন করে থাকেন। বৈশ্বিক শান্তিকামী গ্রুপ ওয়ার রেসিস্টারস ইন্টারন্যাশনালের মতে, ১৫ মে দিনটিকে সক্রিয় কর্মীদের বিবেক বিরোধিতা মনোভাবের বিস্তার ঘটানোর সুযোগ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। আর বিবেক বিরোধি মনোভাবকে অহিংস প্রতিরোধের একটি রূপ এবং সামরিক শক্তির উপর নির্ভরশীলতাকে চ্যালেঞ্জ করার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছেঃ 

বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ না করায় অথবা যুদ্ধে বিবেক বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করতে সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে কয়েকশ লোককে কারাবরণ করতে হয়েছে। 

“আমি বাধ্যতামূলক যোগদানের বিপক্ষে। কারণ, সবারই অস্ত্র বহন করাকে না বলার অধিকার আছে”। ছবিটি “বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা নয়” এর ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া। 

সক্রিয় কর্মী আহমেদ হাসান গ্লোবাল ভয়েসেসের কাছে দেওয়া ভূতপূর্ব এক সাক্ষাৎকারে উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে রাজী না হওয়ার কথা বলেছেন। এখানে তিনি একটি ছবি শেয়ার করেছেন। 

“আমি কোন অস্ত্র বহন করতে চাই না। আমি সেই ধরণের কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চাই না, যা হত্যার কাজে লিপ্ত থাকে”।  ছবিটি বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা নয় এর ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া। 

“আমি বাধ্যতামূলক যোগদানের বিপক্ষে। কারণ, মানুষ মুক্ত। আপনার সহিংসতায় বাধিত হয় না”।  ছবিটি “বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা নয়” এর ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া। 

“বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিপক্ষে, কারণ, বন্দুক বহন করা হচ্ছে মানবতার পরাজয়”। ছবিটি “বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা নয়” ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া।  

সক্রিয় কর্মী মার্ক নাবিলকে কায়রোর সামরিক তথ্য সংগ্রহ ও পর্যেষণা বিভাগ জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তাঁর ব্লগে তিনি সেই সাক্ষ্য প্রদানের একটি দলিল প্রকাশ করেছেন। নাবিল আসিউতের সামরিক বাহিনীতে নিয়োগের জন্য প্রবেশন এলাকাতে মেডিকেল চেকআপ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়েছিলেন। সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম এবং মিশরের রাজনীতিতে এগুলোর ভূমিকা শীর্ষক একটি প্রশ্নপত্র তাকে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে প্রশ্নপত্রটিতে তাঁর অভিমত চাওয়া হয়। সামরিক বাহিনীর বর্তমান নীতির সাথে অসম্মতি প্রকাশ করেছিলেন বলে তখন তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। 

কায়রোর মিলিটারি ইন্টিলিজেন্স হেডকোয়ার্টার সামনে সক্রিয় কর্মী মার্ক নাবিল সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিরুদ্ধে তাঁর মনোভাব জানিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। ছবিটি তাঁর ব্লগ থেকে নেওয়া হয়েছে।  

যারা তাদের সময়ে থাকাকালীন অবস্থায় সেনাবাহিনীতে যাওয়া বর্জন করেছেন, অথচ এখন জোরপূর্বক সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পক্ষে কথা বলেন, টুইটার ব্যবহারকারী সিমারি তাদের নিয়ে ব্যাঙ্গ করেছেনঃ 

যদি সেনাবাহিনীতে অংশ নেওয়া ভালোই হবে, তবে যখন মেডিকেল পরীক্ষার সনদে অনুপযুক্ত প্রমাণিত হওয়ার জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয় তখন একে অপরকে সাধুবাদ জানান কেন ? যদি বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনী নিয়োগ ভালো হবে এবং সেনাবাহিনী যদি দেশপ্রেমিক হবে, তবে আপনারা স্বেচ্ছাশ্রম হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন না কেন ? 

পরিশেষে, ব্লগার চে মটোস একটি ব্লগ পোস্টে লিখেছেনঃ 

ماذا لو كان هذا الشاب من الكارهين لأسلوب و طريقة إدرارة المؤسسة التى سوف يكون أحد رجالها حال إلتحاقه بـ الجيش و هى المؤسسة العسكرية ؟! ماذا لو كان هذا الشاب من الرافضين لـ تدخل هذه المؤسسة فى الحياة المدنية و السياسة المصرية ؟!

এই যুবক যদি [সামরিক] প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হওয়ার উপায়গুলোকে ঘৃণা করে, তবে সে একদিন যখন সামরিক বাহিনীতে যোগ দিবে তখন কি হবে? বেসামরিক জীবন এবং মিশরীয় রাজনীতিতে এই প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে এই যুবক যদি সোচ্চার হয়, তাহলে কি হবে ?

Exit mobile version