আলোকচিত্রঃ ইরানের সেন্সরশিপ প্রধানের সাথে সেন্সরকৃত ইরানি লেখক দৌলতাবাদি

ইরানের প্রসিদ্ধ এবং সবচেয়ে বেশি সেন্সরকৃত ঔপন্যাসিক হলেন ৭৩ বছর বয়সী মাহমুদ দৌলতাবাদি। টুইটারে তাঁর নিজের একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। ছবিটি দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থিত ইরানিরা বেশ উৎফুল্ল। ছবিটিতে তাকে উদাস ভঙ্গিতে ইরানের সংস্কৃতি এবং ইসলামিক পরিচালনা মন্ত্রণালয়ের সেন্সরশিপ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান– আলি জান্নাতির পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। সঙ্গীতজ্ঞ মোহাম্মাদ রেজা লতফির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে ছবিটি তোলা হয়েছে।

বিবিসির ফার্সী ভাষার সংবাদ পরিবেশক আলি হামেদানি নিচের পোস্টটিতে ছবিটির বর্ননা দিয়েছেনঃ  

“রুহানির পক্ষের লোক আলি জান্নাতি এবং আমাদের নিজেদের কর্নেল মাহমুদ দৌলতাবাদিকে আপনারা অবশ্যই দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের টাই পরা কর্নেল উদাস হয়ে তার সিগারেট টানছেন।” 

@জিইসফানদিয়ারিঃ “তার ভাবভঙ্গি বেশ গম্ভীরঃ)। ছবিটি দেখে আজ সকাল থেকেই আমার বেশ মজা লাগছে।”

“@লিসেনটুআস জনাব দৌলতাবাদির চেহারা এবং অঙ্গভঙ্গি চমৎকার।”  

লতফি এবং দৌলতাবাদি উভয়ের কাজ সম্পর্কে দর্শকেরা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল বলে ছবিটি তাদের মনে একটি মর্মভেদী অনুভূতি সৃষ্টি করেছে। ইরানের সংস্কৃতি এবং ইসলামিক পরিচালনা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছবি তোলা নিষিদ্ধ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছুটা কম প্রকাশিত হওয়া আরেকটি ছবিতে দৌলতাবাদি এবং জান্নাতিকে আন্তরিক আলাপ করা অবস্থায় ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে।

“আরেক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দৌলতাবাদি এবং জান্নাতি।” 

লতফির জীবন এবং পেশাগত কাজ নিয়ে প্রশংসা সূচক বক্তৃতা প্রদানের জন্য শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে দৌলতাবাদিকে আমন্ত্রণ জানান হয়। কারন, দৌলতাবাদির লেখা ৩০০০ পাতার, ১০ খন্ডের জনপ্রিয় মহাকাব্য উপন্যাস কেলিদারের একটি মৌখিক ও গীতিনাট্য পরিবেশনা তৈরির জন্য দুই জন প্রায় ১০ বছর একসাথে কাজ করেছেন।   

ইসনা প্রতিবেদকের কাছে দৌলতাবাদি বলেছেন, “আমরা বহু বছর আগে এক সাথে কেলিদার নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এমনকি সংস্কৃতি এবং ইসলামিক পরিচালনা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাদের কাজ বন্টন করতে আবেদন জানানোর অনেক আগে থেকে আমরা একসাথে কাজ শুরু করি। যদিও আমাদের সেই আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।”  

লেখক মাহমুদ দৌলতাবাদি মোহাম্মদ রেজা লতফির সৎকার অনুষ্ঠানে কথা বলার সময় উপস্থিত সবাই তাদের হাত উঁচু করে সমর্থন জানাচ্ছেন। 

সমসাময়িক সময়ে দৌলতাবাদি একজন জনপ্রিয় ইরানি লেখক। তাঁর লেখা কর্নেল উপন্যাসটির জন্য তিনি ২০১৩ সালের জান মিচালসকি সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছেন। ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লব এবং এই বিপ্লবের ফলে শাহের সামরিক বাহিনীর একজন কর্নেল এবং তাঁর পরিবারের উপর কি ধরনের সহিংস প্রভাব পড়েছিল, সে প্রেক্ষাপটে তিনি কর্নেল উপন্যাসটি লিখেছেন। বইটি ইংরেজী এবং জার্মান ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় ইরানের ভেতরে এই বইটি প্রকাশ করার অনুমতি দেয়নি।

ভিন্নমতাবলম্বী এবং নির্বাসিত সুরকার শাহিন নাজাফি সম্প্রতি দৌলতাবাদির সমালোচনা করেছেন। “আখুন্দ [ধর্মীয় নেতা] রুহানিকে রুদাই হলে আমন্ত্রণকারী শিল্পীকে উদ্দেশ্য করে পাঠানো শাহিন নাজাফির বার্তা” শিরোনামে প্রকাশ করা নিচের ভিডিওটিতে তাঁর সমালোচনা করা হয়েছে। নাজাফি দৌলতাবাদি এবং অন্যান্য শিল্পীদের সমালোচনা করেছেন, যারা প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি প্রশাসনের সাথে কথা বলতে এবং কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। তিনি আরও দাবি করেছেন যে রুহানি প্রশাসনের সাথে কাজ করতে একমত হয়ে তারা নিজেদের এবং শিল্পী হিসেবে তাদের কাজকে অপমানিত করেছেন। 

Exit mobile version