টুইটারে নির্ভয়ে কথা বলেছেন বন্দী সৌদি রাজকুমারীরা

Childhood photo of King with princesses

রাজার সাথে রাজকুমারী সাহার, মাহা, হালা এবং জাওয়হারের শৈশবের ছবি। চ্যানেল ৪ নিউজে ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে।  

এটি কোন রূপকথার গল্প নয়, যেখানে রাজকুমারীদের একটি উঁচু দালানে বন্দী করে রাখা হয়েছে। বরং, এটি আজকের সৌদি আরব, চারজন রাজকুমারী, সাহার, মাহা, হালা এবং জাওয়াহেরের গল্প। তারা বলেছেন, ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে জেদ্দার একটি রাজকীয় দালানে প্রায় ১৩ বছর ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। 

তাদের মা রাজকুমারী আলানুদ আল ফায়েজ, সৌদি আরবের রাজা আব্দুল্লাহ’র সাবেক স্ত্রী। তিনি লন্ডনের নিরাপত্তায় থেকে তাঁর নীরবতা ভেঙ্গেছেন। এই চারজন রাজকুমারী নিজেরাই চ্যানেল ফোর নিউজ টেলিভিশনের কর্মীর সাথে ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন। তারা আরও বলেছেন, নারী অধিকার নিয়ে কথা বলার কারণে তাদেরকে বন্দী করে রাখা হয়েছে।

চ্যানেল ৪ নিউজের কাছে রাজকুমারী সারা তাঁর নিজের এই ছবিটি পাঠিয়েছেন। 

রাজকুমারী সাহার চ্যানেল ফোরকে পাঠানো ইমেইলে বলেছেন, “লোকেরা বুঝতে পারবে না যে আমরা কতোটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছি। তারা এখনো আমাদেরকে ‘খুব বেশি প্রশ্রয় পাওয়া’ সৌদি রাজকুমারী হিসেবে দেখে। কিন্তু আমরা কখনোই তেমনটি ছিলাম না। আমরা প্রতিদিনই যন্ত্রণা ভোগ করেছি।”

মা (@আলানুদআলফায়েজ) এবং তাঁর দুইজন মেয়ে (@জাওয়াহের১৭৭৬ এবং #আর্ট_মোকাওয়ামাও) টুইটারে যোগ দিয়েছেন। এখানে তারা তাদের বন্দী কর্তাদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বন্দিত্বের কথা বলেছেন। তারা সৌদি আরব এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে সর্বস্তরে বিদ্যমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা প্রকাশ করেছেন।  

সাম্প্রদায়িক উপদলীয় সমর্থক ক্রীতদাস মানসিকতার যারা, যারা মনে করে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আমাদেরকে নিশ্চুপে ভয় দেখিয়ে কোন কিছু করতে বাধ্য করবে, তাদেরকে বলছি, পুনরায় ভাবুন

তাদেরকে যেখানে বন্দী করে রাখা হয়েছে, সেখানকার অবনত অবস্থা জানিয়ে রাজকুমারী সাহার গত ৯ মার্চ, ২০১৪ তারিখে এই ছবিটি টুইট করেছেনঃ 

আমাদের তথাকথিত “সোনায় মোড়ান খাঁচার” এক ঝলক। এটি গৎবাঁধা একটি শব্দ, যেটি কাল্পনিক জগৎকে রুপদান করে। আমরা সর্বনাশের মাঝে বসবাস করছি।  

টুইটারে বিভিন্ন প্রশ্ন আর মন্তব্যের গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কেননা লোকজন এমন  একটি খবর শুনে বেশ হতবাক হয়েছে। চ্যানেল ফোর থেকে রাজকুমারীদের গুরুতর ও কঠিন অবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরে তাদের যেসব সমর্থকেরা তাদেরকে বার্তা পাঠিয়েছেন এবং টুইট করেছেন, তাদেরকে রাজকুমারীরা নিজেরাই উত্তর দিয়েছেন এবং পুনরায় টুইট করেছেন। 

@মাজেদা৭৬: আমি আপনাদের বলতে পারবো না যে জাওয়াহের এবং আমি আবেগের সাথে কতোটা শূন্য হয়ে গেছি…আমাদের মাকে খুব মনে পরে…কেঁদে সান্ত্বনা পাওয়া যায় না…আল্লাহ আপনার সহায় হোন মাজেদা। ইনশাল্লাহ 

উদ্বিগ্ন মা মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ সহায়ক প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়ে তাঁর মেয়েদের মুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, রাজকুমারী হালার জন্য তিনি বেশি চিন্তিত। কেননা সে প্রচণ্ডভাবে রক্তশূন্যতায় ভুগছে।

হাউজ অব সৌদ এখনো এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি।

এই কোটিপতি রাজার (মনে করা হয় তাঁর বয়স প্রায় ৮৯ বছর) সাথে মাঝে মাঝেই বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ দেখা করতে আসেন। রাজকুমারীরা তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতাকে একটি উদাহরন হিসেবে ব্যবহার করে পশ্চিমা বিশ্বের নেতৃবৃন্দকে খোঁচা মেরেছেন। কেননা, পশ্চিমা বিশ্বের নেতৃবৃন্দ মুখে অনেক কথা বললেও, সৌদি আরবের নারী এবং শিশুদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য তারা কিছুই করেন না। 

চ্যানেল ফোর তাদের ওয়েবসাইটে ১০ মার্চ, ২০১৪ তারিখে তাদের রিপোর্টের একটি ভিডিও আপলোড করেছে। 

Exit mobile version