এবি১৪: “প্রযুক্তি আমাদের সকল সমস্যার সমাধান করে দিবে, এমন চিন্তা বন্ধ করতে হবে”

এই কলামটি স্প্যানিশ ভাষায় এল দিয়ারিওতে প্রকাশিত হয়েছে। এলেরি রবার্টস বিডেল এই প্রবন্ধটি অনুবাদ করেছেন। 

Empty seats for those who were absent from #AB14. Photo by Hisham Almiraat via Flickr (CC BY-NC-SA 2.0)

আরব ব্লগারদের সম্মেলন #এবি১৪ তে যারা অনুপস্থিত ছিলেন তাঁদের জন্য রাখা শূন্য আসন। ছবিঃ ফ্লিকার থেকে হাশিম আল মিরাত (CC BY-NC-SA 2.0)

“পশ্চিমা সমাজে যারা বসবাস করে, তারা তাদের সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সমালোচনা করতে পারার গুরুত্ব বুঝতে পারে না। এই অধিকারটি আমরা আমাদের দেশে পাই না।”

বিষয়টি এমন যে ইয়েমেন পোর্টালের প্রতিষ্ঠাতা ওয়ালিদ আল-সাকাফ আরব ব্লগারদের সমাবেশ #এবি১৪ তে সেন্সরশিপ এবং ডিজিটাল নজরদারির বিষয়ে একটি প্যানেল গঠন করেছেন। এই সমাবেশটি জর্ডানের রাজধানী আম্মানে গত ২০ থেকে ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। 

আরব ব্লগারদের পূর্বের বৈঠকে অংশ নেওয়া আলা আব্দুল আল ফাত্তাহ এবং বাসেল সাফাদির মুক্তি চেয়ে তৈরি ব্যানার।  

প্রতিটি আরব দেশ থেকে যখন ব্লগার এবং সক্রিয় কর্মীরা একসাথে তিউনিসিয়াতে আসা শুরু করল, তখন গত ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে এই আয়োজনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নাটকীয় পরিবর্তন শুরু হয়। সমাবেশটির ব্যানারে যেমনটি লেখা ছিলঃ

“মুক্ত তিউনিসিয়াতে আপনাদের স্বাগতম।” সেই সময় থেকে সেন্সরশিপ এবং দমননীতি চলছে। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সমাবেশে এ অঞ্চলের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আশা জাগিয়ে তুলেছে। এমন আশা, যা প্রচন্ডভাবে অনুভব করা যায়। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সমাবেশটি কিছু কিছু ক্ষেত্রে চরম ক্রান্তিকালের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করে দিয়েছে এবং অন্যদের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে। অনলাইনের রাজ্যে সাদা চোখে আমরা যেসব সংগ্রাম চলতে দেখেছি, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সমাবেশেই সেগুলোর উদ্ভব হয়েছে।

আল-সাকাফ অপরাধ স্বীকার করে বলেছেন, “আমাদের এমন চিন্তা-ভাবনা বাদ দিতে হবে যে প্রযুক্তি আমাদের সকল সমস্যা দূর করে দিবে।” তিনি আরও বলেন, বিবেচনা না করে হাতিয়ার হিসেবে এখানে সেন্সরশিপ ব্যবহার করা হবে। তাই তাদের সম্বন্ধে আমাদের সমস্ত মনকে আবিষ্ট করা বন্ধ করতে হবে এবং আমাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করা শুরু করতে হবে।”

এই সমাবেশটি সেন্সরশিপ এবং দমননীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য কৌশলগত অনুসরণের উপর বেশী গুরুত্ব আরোপ করেছে। তাঁর পাশাপাশি এটি একটি পরিবেশে সাধারণ অঙ্গীকার রক্ষা করে চলার উপর জোর দিয়েছে। এখানে এমন একটি পরিবেশের কথা বলা হয়েছে, যা প্রতিনিয়ত আরও বেশী খণ্ডিত বলে অনুভূত হবে। একটি নির্ধারিত স্থানে আলোকচিত্র প্রকল্পে প্রতিজন অংশগ্রহণকারীর থেকে একটি করে বার্তা লক্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 

“আমরা সরকারকে পর্যবেক্ষণ করি, অন্য কিছু নই,” আম্মানে অনুষ্ঠিত আরব ব্লগারদের বৈঠকে অংশগ্রহণকারী মরক্কোর ব্লগার জিনেব বেলকাদেমের প্রেরিত বার্তা। ছবিঃ আমের সুইডেন। অনুমতিক্রমে ব্যবহৃত।  

এ বছর গত সমাবেশের দু’জন অংশগ্রহণকারীর অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি স্পষ্টত বোধগম্য হয়েছেঃ তারা হলেন মিশরীয় ব্লগার আলা আব্দেল ফাত্তাহ এবং সিরিয়ান ওয়েব ডেভেলপার বাসেল সাফাদি। এ অঞ্চলে যে সকল সাংবাদিক এবং সক্রিয় কর্মীকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, তাদের প্রতি এই সমাবেশটি উৎসর্গ করা হয়। এক বিবৃতিতে সিরিয়ার সেন্টার ফর ভায়োলেশন ডকুমেন্টেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রাজান জাইতোনেহের জন্য মুক্তি চাওয়া হয়। সেন্টার ফর ভায়োলেশন ডকুমেন্টেশন গ্রুপটি মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে দলিল দেখিয়ে প্রমাণ করে থাকে। রাজান জাইতোনেহকে গত ডিসেম্বর মাসে দামাস্কাস থেকে অপহরণ করা হয়।

একটি গোষ্ঠী হিসেবে সক্রিয় কর্মীদের সাথে একতাবদ্ধ হয়ে একই সারিতে দাঁড়ানো আমাদের একটি দায়িত্ব। বিশেষ করে, সেসব সক্রিয় কর্মীদের সাথে, যারা মুক্তিকে সংগঠিত ও চালু করতে সাহায্য করে এবং মানবতার সেবায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করে। জাতিসংঘ এবং দ্বিতীয় জেনেভা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনাতে অন্তর্ভূক্ত সকল দেশের প্রতি এবি১৪ সমাবেশে আমরা দাবি জানিয়েছি, তারা যেন সিরিয়াতে মত প্রকাশের জন্য শাস্তি প্রাপ্তদের এবং অপহৃতদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘটনার সত্যতা পরীক্ষা করা যায়, এমন কার্য-পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেন। 

শুধুমাত্র তারা দু’জনই অনুপস্থিত ছিলেন, এমনটা নয়। এনাব বালাদি প্রকল্পের একজন সিরিয় সদস্যও এ সমাবেশে অনুপস্থিত ছিলেন। প্রকল্পটি একটি স্থানীয় স্বাধীন প্রচার মাধ্যম বিষয়ক প্রকল্প। এটি ২০১১ সালের মার্চ মাসে বিদ্রোহের শুরুতে তৈরি করা হয়েছিল। প্রকল্পের এই সিরিয় সদস্যকে আম্মান বিমান বন্দরে কয়েক ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়। দু’জন ইরাকি অংশগ্রহণকারীকে একই সাথে প্রবেশ করার জন্য ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানান হয়। এ অঞ্চলের নাগরিকদের এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণের উপর বাঁধা-নিষেধ এখনও বলবৎ (শেষ সমাবেশে ফিলিস্তিনের অংশগ্রহণকারীদের কে তিউনিসিয়াতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি) রাখা হয়েছে। এমন আচরণ আঞ্চলিক একতার মোহ এবং এই বাস্তবতার মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছে।

আবির কপতি লিখেছেন, “যেখানে পশ্চিমা পাসপোর্টধারী লোকেরা ব্যবহারিকভাবে কোন ভিসা ছাড়াই মুক্তভাবে সাড়া দেশ ঘুরে বেড়াতে পারে, সেখানে একটি আরব শাসনতন্ত্র অন্যান্য আরব দেশগুলোর নাগরিকদের সাথে কেমন আচরণ করে, তার বর্ননা করতে যেয়ে শুধুমাত্র লজ্জা প্রকাশ করা ছাড়া আমার আর কিছু বলার নেই।” তিনি আরও বলেছেনঃ “কোন সীমানা বা কর্তৃত্বাধীন শাসনতন্ত্রের দ্বারা বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব।”

Exit mobile version