সম্ভবত ইয়েমেন সম্পর্কে আপনার না শোনা ৭ টি ভালো খবর

ইয়েমেন থেকে যত দুঃখের এবং সহিংসতার খবর আসছিল তার মধ্যে সবই গুপ্তহত্যা, বোমা বিস্ফোরণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলা এবং অপহরণের খবর। এসব খবরের মধ্য থেকে আমরা এমন কিছু খবর বের করে এনেছি যা হয়তোবা আপনারা পাননিঃ

১. ইয়েমেনের কয়েক জন বিপ্লবী তরুণ দুই বছর জেলে কাটানোর পর তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অবশেষে তাঁদেরকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। যদিও কয়েক জন তরুণ এখন পর্যন্ত কারাগারে আছে।  

সানার কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে মুক্তিপ্রাপ্ত ইয়েমেনের যুব বিপ্লবের সদস্যরা

২. সাংবাদিক আব্দুলিল্লাহ হায়দার শায়ে প্রায় তিন বছর ধরে কারাগারে ছিলেন। আল-মাজাল্লাহের প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে মার্কিন বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ সম্পর্কে জনসমক্ষে প্রকাশ করায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে হামলায় ৪১ জন লোক মারা গেছেন। সম্প্রতি তাকেও মুক্তি দেয়া হয়েছে। তিনি আলকারামাহ মানবাধিকার রক্ষকদের পুরষ্কারে পুরষ্কৃত হয়েছেন। কিন্তু তিনি জেনেভাতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থেকে পুরস্কার নিতে পারছেন না। কারন তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে এবং দেশ ছেড়ে যেতে অনুমতি দেয়া হয়নি।

সাংবাদিক ইয়না ক্রেইগ এবং তদন্তকারী সাংবাদিক ও “ড্রোন যুদ্ধ” বইটির লেখকজেরেমি স্কেহিল তার পক্ষ থেকে পুরষ্কারটি গ্রহণ করেন। 

ইয়েমেনের সাংবাদিক @আব্দুলইলাকে @আলকারামাএইচআর পুরষ্কারে ভূষিত করে শ্রদ্ধা জানাতে জেনেভাতে @ইয়নাক্রেইগের সাথে।  

৩. টেডেক্সসানা গত বছর সফলভাবে শুরু হওয়ার পর, এবছর “সক্রিয় বিষয়বস্তু” মূলমন্ত্র নিয়ে আরেকটি ঘটনা ঘটিয়েছে। টেডেক্সসানার মতো এটিও ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে সফলভাবে যাত্রা শুরু করেছে। অনেক প্রচেষ্টা এবং ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে এটি শুরু করা হয়েছে। এটিকে ক্রিয়েটিভ ফ্ল্যাশ মবের সাথে ঘোষণা দিয়ে শুরু করা হয়েছে। আলোচনার জন্য নির্বাচিত বক্তাবৃন্দকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং আরো নানা ধরণের বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

৪. “কারামার কোন সীমানা নেই” নামক ইয়েমেনের চলচ্চিত্রটিতে ১৮ মার্চ, ২০১১ তারিখের ইয়েমেনের বিপ্লবের এই রক্তাক্ত ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। ইয়েমেনি/ স্কটিশ চলচ্চিত্র পরিচালক সারা ইশাক এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন। তিনি অস্কার পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। আরবিতে কারামাহ বলতে বোঝায় মর্যাদা।

চলচ্চিত্রটি এখানে পাওয়া যাবেঃ 

সারা ইশাক “দ্যা মালবেরী হাউজ” নামে একটি প্রামাণ্যচিত্রও পরিচালনা করেছেন। এই চলচ্চিত্রটিও সারা বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শন করা হয়েছে।

৫. ডেনমার্কের নাগরিক সাংবাদিক জুডিথ স্পিগেল এবং তার স্বামী বৌডেয়িজিন বেরেন্ডসেনকে অপহরণ করা হয়েছিল। ছয় মাস বন্দি রাখার পর অবশেষে তাঁদেরকে অক্ষত অবস্থায় মুক্তি দেয়া হয়েছে। তাদের কোনরকম ক্ষতি করা হয়নি এবং তাদের অপহরণকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তাঁদেরকে খুব ভালোভাবেই আপ্যায়ণ করা হয়েছে। মুক্তির পর জুডিথ তার প্রথম ফেসবুক পোস্টেই বলেছেনঃ 

হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা এখন মুক্ত! আমরা খুব ভালো আছি। আমরা খুব শীঘ্রই আপনাদের সাথে যোগাযোগ করবো। কিন্তু শুধুমাত্র এখনকার জন্যঃ আপনাদের সব ধরণের সমর্থনের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনারা বিশ্বাস করবেন না যে এটা কতোটা অদ্ভূত ছিল। এটি এখনো আমাদের এবং আমাদের পরিবারের জন্য খুবই অদ্ভূত একটি অভিজ্ঞতা। আমরা আপনাদেরকে ভালোবাসি এবং আমরা এখনো ইয়েমেনকে ভালোবাসি।  

ডাচ সাংবাদিক জেদিথ স্পিগেল এবং তাঁর সহযোগী বউডেয়িজিন বেরেন্ডসেন 

জুডিথের অপহরণের সময় তাঁর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ইয়মেনি শিল্পী মুরাদ সাবেরের দেওয়াল অংকন। 

৬. কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে মার্কিন ড্রোন হামলা চলেছে। বিশেষকরে ইয়েমেনে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে বরযাত্রী যাওয়ার সময় তাদের ওপর ড্রোন আক্রমণের ফলে ১৭ জন সাধারন লোক নিহত হয়েছে। তাই ইয়েমেনের সংসদ ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখ রোজ রবিবারে ড্রোন হামলাকে নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাস করেছে। হ্যাঁ, এটি একটি খুশীর সংবাদ বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আইন প্রণেতাদের ক্ষমতা খুব সীমিত করে রাখা হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত এটিকে কেবল মাত্র একটি প্রতীকী আইন বলেই মনে হবে। বিশেষকরে, যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিজেই ড্রোনগুলোকে অনুমোদন দিয়েছেন এবং যখন ড্রোন হামলা বন্ধ করার জন্য শীঘ্রই কোন পদক্ষেপ নেয়া না হচ্ছে, তখন আইনটিকে কেবলমাত্র একটি প্রতীকী আইন বলেই মনে হচ্ছে।  

বলা হয়েছে এমন একজনও মন্ত্রী পাওয়া যায় নি, যিনি আজকের এই ড্রোনের বিরুদ্ধে সংসদে ভোট প্রদান করেছেন। #ইয়েমেন  

এই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, #ইয়েমেনের সংসদের ড্রোন নিষিদ্ধকরণের আইন পাস করা একটি প্রতীকী অভিব্যক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। 

৭. অবশেষে দক্ষিণের ইস্যু সমাধানের একটি পথ পাওয়া গেছে। ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে কিছু মাত্রায় স্বৈরশাসনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উত্তর এবং দক্ষিণ ইয়েমেনের মধ্যকার ঐক্য নস্যাৎ করতে ১৯৯০ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট আব্দু রাবু মানসুর হাদি একটি কমিটি গঠন করেছেন। দক্ষিণ অঞ্চলকে দু’টি ভাগ করা এবং উত্তরাঞ্চলকে চারটি ভাগে ভাগ করা অথবা উত্তর ও দক্ষিণকে দুইটি বৃহৎ স্বতন্ত্র স্বত্বায় ভাগ করা, এই দু’টি বিকল্প পথের মধ্য থেকে এই কমিটি  যেকোন একটি পথ বেছে নিবে।   

শেষ খবরের টুকরোটি ভালো না খারাপ তা এতো শীঘ্রই নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। কিন্তু এটিকে আমরা এই পোস্টের একটি গঠনমূলক চেষ্টার কাতারেই রাখছি। আমরা আশা করছি, ইয়েমেন থেকে আগামী বছরে আরো ভালো ভালো খবর শোনা যাবো!     

Exit mobile version