গণ মানুষের কবি আহমেদ ফুয়াদ নেগামের মৃত্যুতে মিশরে শোক পালন

আহমেদ ফুয়াদ নেগামঃ বিপ্লবের ৮৪ বছর। @আইটেফ টুইটারে এই ব্যানারটি শেয়ার করেছেন। 

মিশরের বিপ্লবী কবি আহমেদ ফুয়াদ নেগাম গতকাল মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। সারা আরব বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটবাসীরা তাঁর মৃত্যুতে শোক পালন করছে। 

নেগামকে মিশরের “গণ মানুষের কবি” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তাঁর কবিতাগুলো প্রায়শই মিশরীয় বিপ্লবের প্রাণকেন্দ্র, তাহরির স্কয়ারে ধ্বনিত হয়েছে। তিনি তাঁর জীবনের ১৮ বছর জেলে কাটিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের টেলিভিশন ঠিকানা নিয়ে উপহাস করার দায়ে তাকে এই ১৮ বছরের মধ্যে ১১ বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছে।

তাঁর কবিতা “সাহসী পুরুষেরা সাহসী” তাহরির স্কয়ারে বার বার ধ্বনিত হয়েছে। কবিতাটি হচ্ছেঃ

সাহসী পুরুষেরা সাহসী

ভীরুরা কাপুরুষ

সাহসীদের কাতারে এসো

চত্বরে একত্রিত হও 

নাগাম মিশরের কথ্য ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছেন। দরিদ্র এবং শ্রমজীবী মানুষের জন্য লেখা তাঁর রাজনৈতিক গানের কথাগুলো শেখ ইমামের লেখনীতে অমরত্ব লাভ করেছে।

নেগাম একটি টুইটার একাউন্টের মাধ্যমে ইন্টারনেটবাসীদের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত একাউন্টটিতে তিনি তাঁর বৈপ্লবিক চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটিয়ে গেছেন। 

মিশরীয় কালানুক্রমিক ঘটনাপঞ্জীতে জেইনোবিয়া ব্লগ লিখেছেনঃ 

শাসনতন্ত্রের কবি হতে নেগাম তাঁর সারা জীবন ধরে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। দরিদ্র এবং অত্যাচারিতদের হয়ে দৃঢ়কন্ঠে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আমি মনে করি শুধুমাত্র এ কারনেই আমাদের সময়ের যেকোন কবির চেয়ে তিনিই বেশী স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।  

তিনি আরো বলেছেনঃ 

আহমেদ ফুয়াদ নেগাম পরপারে চলে গেছেন। কিন্তু তাঁর কবিতা ও গান শুধুমাত্র মিশরের নয় বরং সারা পৃথিবী জুড়ে যতো বিদ্রোহী আছে তাদের প্রেরণা হয়ে থাকবে।  

টুইটারে #أحمد_فؤاد_نجم [আরবি] অথবা আহমেদ ফুয়াদ নেগাম নামের হ্যাশট্যাগে অনেকেই সহমর্মিতা ঢেলে দিয়েছেন।

মিশরীয় মাহমুদ হামজা লিখেছেনঃ 

মিশর একটি মূল্যবান সম্পদ হারিয়েছে। পবিত্রতম এবং সর্বাপেক্ষা সত্যবাদী এই মানুষটিকে, চলমান বিদ্রোহের কবিঃ আহমেদ ফুয়াদ নেগামকে আল্লাহ্‌ দয়া করুন। 

মিশরীয় টেলিভিশনের উপস্থাপক শেরিফ আমের টুইট [আরবি] করেছেনঃ 

আহমেদ ফুয়াদ নেগাম প্রেসিডেন্টের বিরোধী ছিলেন। নেগামের অনুপস্থিতিতে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের ব্যাপক সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। কয়েক লক্ষ লোকের সামনে, কয়েক হাজার লোক তাঁর কবিতা দিয়ে বার বার স্লোগান দিবে। যারা রয়ে গেল এবং যারা চলে গেছে, তাদের সবাইকে আল্লাহ্‌ দয়া করুন।  

সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আব্দুল্লাহ আল নেয়ামি আরো লিখেছেনঃ 

অনেকেই আহমেদ ফুয়াদ নেগামকে অস্থিরতার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। আমি মনে করি, হাজার হাজার স্থির কবির চেয়েও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি আরো অকপট। 

ফিলিস্তিনের আজমি বিশারা উল্লেখ করেছেনঃ 

তিনি নিপীড়িত এবং যারা অবিচারের শিকার, তিনি তাদের কবি। তিনি নিজেও প্রান্তিকীকরণের শিকার। জনগণ যখন বুঝতে পারলো তারা অবিচারের শিকার, তখনই তিনি জনগণের কবি হয়ে উঠলেন। আহমেদ ফুয়াদ নেগাম তাঁর জীবদ্দশাতেই তা নিজ চোখে দেখে গিয়েছেন।   

ফিলিস্তিনের কবি মুরিদ বারঘতি বলেছেন, নেগাম তাঁর কবিতার মাধ্যমে স্বৈরশাসকদের জ্বালাতন করেই যাবেন। এমনকি তাঁর মৃত্যুর পরেওঃ 

আহমেদ ফুয়াদ নেগামঃ আপনি সেখান থেকেও তাদেরকে জ্বালাতন করেই যাবেন। আমার বন্ধু, আপনাকে বিদায়। 

কায়রোতে তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার লোক অংশগ্রহণ করেছিল। মিশরীয় ব্লগার জেইনোবিয়া, নেগামের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের একটি গল্প এখানে সংকলন করেছেন।

আরো কিছু পড়ার জন্যঃ

আল জাজিরাঃ আহমেদ ফুয়াদ নেগামঃ একটি বিপ্লব লিখেছেন

নেগামের কয়েকটি কবিতার ইংরেজী অনুবাদ এখানে পাওয়া যাবে।  

Exit mobile version