ব্রাজিল: ‘সত্যিকারের পুরুষেরা মহিলাদের গায়ে হাত তোলেন না’

এটা একটা ভীতিপ্রদ পরিসংখ্যান: ব্রাজিলীয় মহিলাদের পাঁচ জনের মধ্যে একজন গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হতে পারেন। দৈহিক, মানসিক ও আবেগজনিত উৎপীড়ন; আর তার সাথে বৈবাহিক ধর্ষণ এর অন্তর্ভুক্ত। আক্রমণকারী সাধারণত প্রেমিক, স্বামী, প্রাক্তন স্বামী বা পরিবারের কোন পুরুষ সদস্যের একজন।

এই সমস্যাকে মাথায় রেখে, এই বছরের শুরুতে একটা অনলাইন প্রচারাভিযান শুরু করা হয় যেটাতে ‘সত্যিকারের পুরুষদের’ গার্হস্থ্য হিংসার বিরুদ্ধে সংহতি প্রদর্শন করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহ্বান করা হয়েছিল।

২০১৩ সালের মার্চ মাসে বিশ্ব ব্যাংক “সত্যিকারের পুরুষেরা মহিলাদের গায়ে হাত তোলেন না” (Homem De Verdade Não Bate Em Mulher) নামে একটি প্রচারাভিযান শুরু করে যাতে মারিয়া দা পেনহা ফার্নান্ডেজ প্রতিষ্ঠানসহ [পর্তুগীজ] অন্যান্য ব্রাজিলীয় নারী অধিকার আন্দোলনকারী সমিতিগুলো যোগদান করেছিল।

ব্রাজিলীয় ক্রীড়াবিদ, অভিনেতা এবং সমাজের অন্যান্য সদস্যরা গার্হস্থ্য হিংসার বিরুদ্ধে ব্রাজিলীয়দের সরব হওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে বিশ্ব ব্যাংক ব্রাজিলের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এই অভিযানে যোগদান করেন। তারা নিজেদের সামনে এই প্রচারাভিযানের স্লোগান লেখা কাগজ ধরে ফেসবুক, টুইটারইনস্টাগ্রামে #souhomemdeverdade [পর্তুগিজ ভাষায় যার অর্থ ‘আমি একজন সত্যিকারের পুরুষ’] হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে, ছবি প্রকাশ করেন।

“সত্যিকারের পুরুষেরা মহিলাদের গায়ে হাত তোলেন না”. উৎস: ফেসবুকে বিশ্ব ব্যাংক-ব্রাজিল

২০১৩ সালের মার্চ মাসে, রিও গ্র্যান্ডে ডু সো-র অভিসংশক কার্যালয়ের একটা সরকারী অধিবেশনে দাখিল করা সংখ্যা অনুযায়ী “ব্রাজিলে প্রতি চার মিনিটে একজন মহিলা গার্হস্থ্য হিংসার কারণে প্রাণ হারান”:

Os números assustam. (…) Esta é a principal causa da morte de mulheres entre 16 a 44 anos. Desses crimes, 99% são causados por ciúme e possessividade; 77% dos conflitos ocorrem depois da separação.

সংখ্যাগুলো ভীতিপ্রদ। (…) ১৬ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মহিলাদের মৃত্যুর এটাই প্রধান কারণ। ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এই অপরাধের পেছনে ঈর্ষা কাতরতা আর অধিকার বোধ কাজ করে; ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রে বিচ্ছেদের পরে বিবাদ শুরু হয়।

“কোন মহিলাকে রক্ত বর্ণে ভাল দেখায় না”। ডেভিয়ান্টআর্ট- এর জন্য পাবলোবাসিল দ্বারা কৃত (সিসি বাই-এনসি-এনডি ৩.০)

২০১২ সালের হিংসার মানচিত্রের (Mapa da Violência de 2012) [পর্তুগীজ, পিডিএফ] রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৮০ থেকে ২০১০ এর মধ্যে ব্রাজিলে ৯১,৯৩০ জন মহিলা খুন হয়েছেন। গড়ে প্রতি ১০০,০০০ জন মহিলার মধ্যে ৪.৫ জন মহিলা খুন হন, আর মৃত্যুর হার এসপিরিটো সান্টো, অ্যালাগোয়াস, আর পারানা রাজ্যে সব থেকে বেশী ।

ব্রাজিলে নারী হত্যার [পর্তুগীজ, পিডিএফ] ওপর নিবন্ধিত রিপোর্টের একটা বিশেষ সংস্করণ অনুযায়ী, “৬৮.৮ শতাংশ নারী হত্যা ঘটে গার্হস্থ্য এলাকায়” এবং ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে “আক্রমণকারীদের ৬৫ শতাংশ মহিলার বর্তমান বা প্রাক্তন স্বামী।” এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে:

entre os 84 países do mundo que conseguimos dados a partir do sistema de estatísticas da OMS o Brasil, com sua taxa de 4,4 homicídios para cada 100 mil mulheres ocupa a 7ª colocação, como um dos países de elevados níveis de feminicídio

বিশ্বের ৮৪ টি দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থা থেকে পাওয়া তথ্য [বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা] অনুযায়ী যেসব দেশে নারী হত্যার হার সবথেকে বেশী তাদের মধ্যে ব্রাজিল প্রতি ১০০,০০০ জনের জন্য ৪.৪ জন হত্যার হার নিয়ে সপ্তম স্থানে আছে।

উইকিজেন্ডার অনুযায়ী:

১৯৮০-২০১০ পর্যন্ত ব্রাজিলে প্রতি ১০০,০০০ জন মহিলার জন্য নারী হত্যার হার। উৎস: ২০১২ সালের হিংসার মানচিত্র

২০০৬ সালের ৭ই অগাস্ট ১১.৩৪০ নম্বর আইন, যা মারিয়া দা পেনহা আইন [মারিয়া দা পেনহা ফার্নান্ডেজ [পর্তুগীজ] , যিনি নিজে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার ছিলেন এবং ব্রাজিলের নারী অধিকার আন্দোলনের পথিকৃতদের মধ্যে একজন, তার নামানুসারে] নামে পরিচিত, গৃহীত হওয়ার আগে গার্হস্থ্য হিংসা ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় অপরাধমূলক আইনের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সাম্প্রতিক কালে শুধুমাত্র আইন ব্যবস্থায় নয়, তার সঙ্গে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে প্রচেষ্টা বৃদ্ধি সত্ত্বেও গার্হস্থ্য হিংসা সংক্রান্ত ঘটনার সংখ্যা খুবই বেশী এবং আরও বেশী নিগ্রহ, সামাজিক কলঙ্ক ও শাস্তির ভয়ে খুব কম ঘটনাই কর্তৃপক্ষের গোচরে আনা হয়।

দুঃখের কথা এই যে, এই পরিসংখ্যান কমছে না। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ব্রাজিলীয় নারী সহায়তা কেন্দ্রে [ব্রাজিলিয়ান ওমেন'স অ্যাসিস্ট্যান্স সেন্টার] সাহায্যের আর্তি জানিয়ে করা কলের সংখ্যা ১৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে
“যেসব পুরুষেরা মহিলাদের মারধর করেন তাদের মাথার ঠিক নেই”

ব্রাজিলীয় জাতীয় কংগ্রেস ও কামারা টিভির সহযোগিতায় বিশ্ব ব্যাংক মারিয়া দা পেনহা আইন অবলম্বনে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যাতে পাঁচটি ছোট গল্পকে পুরস্কৃত করা হয়। যাদের জীবনযাত্রা নিয়ে এই গল্পগুলির লেখা হয়েছে তারা হলেন:

প্রথম স্থান: সাও পাওলোর এক দল মহিলা যারা লিঙ্গ নিগ্রহের বিরুদ্ধে কাজ করছেন।

দ্বিতীয় স্থান: কারুশিল্পী মহিলাদের একটা দল যাদের মধ্যে কারমেন তার অত্যাচারী স্বামীকে পরিত্যাগ করার সাহস খুঁজে পেয়েছিল।

তৃতীয় স্থান: লুসিলিয়া নামে এক আদিবাসী রমণী যিনি তার প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ দায়ের করা সত্ত্বেও পুলিশ কোন তদন্ত করেনি।

চতুর্থ স্থান: সক্রিয়তাবাদী সিলভিয়া যিনি নারী অধিকারের জন্য কাজ করতেন এবং নিজের জামাইয়ের হাতে খুন হন, সেই জামাই যে তার মেয়ের ওপর শারীরিক নিগ্রহ করতো।

পঞ্চম স্থান: ভেরোনিকা, কারমেন ও সারা নামে তিন মহিলা যারা তাদের অত্যাচারী স্বামীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছিলেন।

মানবাধিকার সক্রিয়তাবাদী নাতাশা বেকার মারিয়া দা পেনহার জীবন ও কাজের সম্পর্কে জানতে পেরে ওনার ব্লগে লিখেছেন, “নেটওয়ার্কিং-এর একটা সবথেকে বড় সুবিধা হল অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও আন্দোলন বিশ্বে আশার সঞ্চার করছে তাদের সম্পর্কে জানতে পারা”। যারা ব্রাজিলের কোন গার্হস্থ্য হিংসা বা লিঙ্গ নিগ্রহের ঘটনা জন সমক্ষে আনতে চান তারা কল করুন ১৮০ নাম্বারে:

যেসব পুরুষেরা মহিলাদের মারধর করেন তাদের মাথার ঠিক নেই। ১৮০ নাম্বারে কল করে এর রিপোর্ট করুন।

Exit mobile version