ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর রাজনীতিতে “গ্রীন পার্টি”-র জয়ের অর্থ কি?

ত্রিনিদাদ আর টোবাগো-এর চাঙ্গুয়ানাস ওয়েস্টের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ উপনির্বাচন শেষ হল সোমবার রাতে জ্যাক ওয়ার্নারের আলোড়ন সৃষ্টিকারী জয় দিয়ে, যিনি তার নিকটস্থ প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রভূত ভাবে পরাজিত করে নিজের আসন পুনরুদ্ধার করেন। ওয়ার্নারের নব গঠিত ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিবারেল পার্টি পেয়েছে ১২,৬৩১ ভোট; ইউনাইটেড ন্যাশনাল কংগ্রেস (অধুনা প্রধানমন্ত্রীর পার্টি), আইএলপি-র নিকটস্থ প্রতিদ্বন্দ্বী ও যে পার্টির প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন ওয়ার্নার, সেটি পেয়েছে মাত্র ৫,১২৬ টি ভোট। পিপল'স ন্যাশনাল মুভমেন্ট, যে পার্টি বর্তমানে বিধানসভার বিরোধীদের আসনে আছে, সেটি মাত্র ৪২২ টি ভোট জোগাড় করতে পেরেছে।

ভোটের দিন, ব্যালট গণনার আগে, আকা_লোল তার ব্লগে একটি লেখা প্রকাশ করেন উপনির্বাচন সংক্রান্ত কিছু “এলোমেলো ভাবনা” নিয়ে:

এলোমেলো ভাবনা ১

জ্যাকের স্বপক্ষে একটা ভোট আসলে কামলার বিপক্ষে একটা ভোট।

এলোমেলো ভাবনা ৪

ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর গ্রীনের বহু সমর্থকদের কাছে জ্যাক, তার আন্তর্জাতিক অর্থ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের কুখ্যাতি সত্ত্বেও, কামলার গুপ্ত চক্রের তুলনায় অনেক বেশী সৎ। পিপলস পার্টনারশিপ ক্ষমতায় আসার আগে জ্যাকই ছিল দলের নীতিগত ও অর্থকরী মেরুদণ্ড। এখন যখন প্রচুর ঠিকা দেওয়া হয়ে গেছে আর বহু নির্বাচিত ঠিকাদার টাকা পেয়ে গেছে,যারা একসময় জ্যাকের টাকার প্রেমে মত্ত ছিল, তারাও এখন সেই টাকাকে সুনজরে দেখছে না।

পিপি[অধুনা পিপল'স পার্টনারশিপ যৌথ সরকার]-র অধিকাংশ সমর্থকরা মনে করে, কামলা আর তার দল নির্বাচনে আকস্মিক বড় জয়ের পরে লাভের বখরা শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু পৃষ্ঠপোষকদের দিয়েছে তারা সম্পূর্ণ ভাবে ভুলে গিয়েছে যে কেন দেশবাসী ম্যানিং [প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আর পিপল'স ন্যাশনাল মুভমেন্ট পার্টির নেতা, যে পার্টি সাধারণ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এখন বিরোধী দল] সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। চাঙ্গুয়ানাস ওয়েস্ট উপনির্বাচনের ফলাফল সত্ত্বেও কামলা আর তার দলকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে তাদের সমর্থকদের একটা বড় অংশ তাদের প্রদর্শনে চরম হতাশ হয়েছে এবং তাদের প্রতিহিংসা পরায়ণ, লোভী, অসৎ ও স্বার্থান্বেষী মনে করছে। কামলার নেতৃত্বাধীন ইউএনসি র গুপ্তচক্রকে ম্যানিং আর তার উন্মাদনার সমকক্ষ বা তার থেকেও নিকৃষ্ট মনে করা হচ্ছে।

ফলাফল থেকে এই সঙ্কেতই পাওয়া যাচ্ছে যে নাগরিকেরা একটা পরিবর্তন চাইছিল। যখন ফলাফল নিশ্চিতভাবে জানা গেল তখন সেই একই ব্লগার এই সম্বন্ধে আরেকটি লেখা প্রকাশ করেন অজ্ঞাত একটি সংবাদপত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে :

প্রবন্ধ ১:

সাধারণত যারা টাকা দেয় তাদের থেকে নিয়ে উপ-নির্বাচনী প্রচারে কয়েকশ হাজার ডলার ঢালা স্বত্বেও ক্ষমতাসীন দল এত ব্যবধানে হেরেছে যে তার সামনে বিশালকে ছোট মনে হয়। গত রাতে ঠিক আটটার পরে যখন ফলাফল আসতে শুরু করল, আর এটা স্পষ্ট হতে থাকলো যে ওয়ার্নার ইউ.এন.সি আর তাদের ঔদ্ধত্য, প্রতিহিংসা পরায়ণতা এবং উচ্চপদস্থ নেতাদের গোহারানো হারাচ্ছে, উল্লাসের জোরালো চিৎকার সারা দেশ জুড়ে শোনা যাচ্ছিল। যদিও অধিকাংশ নাগরিকদের উপনির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার ছিল না, তাহলেও তারা এটা জেনে তৃপ্ত হয়েছিল যে পিপল ইন পাওয়ার (পিআইপি)কে সেই শিক্ষাটা দেওয়া গেছে যেটা তারা গত কয়েক বছর ধরে শিখতে চায়নি।

প্রবন্ধ ২:
অত্যন্ত অপ্রস্তুত প্রধানমন্ত্রী পরাজয়ের জন্য তার উচ্চপদস্থ নেতাদের প্রাদো [গাড়ি]-র ওপরে নীল আলোর ঝলসানিকে দায়ী করেছেন। তাঁর মতে ওই নীল আলো চাঙ্গুয়ানাস ওয়েস্ট নির্বাচন এলাকার ভোটারদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তাই তারা নির্বাচনী কেন্দ্রে হলুদের পরিবর্তে সবুজ দেখেছে।

প্লেইন টক আরও গম্ভীরভাবে এই বিষয়ের পর্যালোচনা করেছে :

চাঙ্গুয়ানাস ওয়েস্টের এই নির্বাচনী ফলাফল ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর ভবিষ্যতের জন্য শুভ ইঙ্গিত দেয় না…এই নির্বাচনে যা হল সেটা সমাজের অভিজাতদের ক্ষমতা দখলের সূচনা করতে পারে, যেখানে প্রার্থীদের পয়সা দিয়ে প্রতিনিধিসভায় দরাদরি করার জন্য বসানো হবে যাতে তারা সরাসরিভাবে তাদের স্বার্থে আর তাদের জন্য আলাপ আলোচনা করতে পারে।

তিনি ওয়ার্নারের নির্বাচনী প্রচারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন…

সত্যিই কি কেউ বিশ্বাস করে যে জ্যাক একাই এটা করেছে? উনি তো ভালো করে কথাও বলতে পারেন না, কিন্তু উনি যেটার প্রতিনিধিত্ব করছেন আর যেটা আমাদের কল্পনার থেকেও বেশী ভয়ঙ্কর, সেটা হল ঘরের ভিতরের শত্রু।

এই অলস সমর্থক আর দায়িত্বজ্ঞানহীন নাগরিকদের দেশে আমাদের সব মুস্কিল আসান করবে এমন ত্রাণকর্তা পাওয়ার আশায় আমরা একটা বাক্স নালা [এক রকমের নিষ্কাশনী ব্যবস্থা] আর ফুটপাথের আশ্বাসের পিছনে ছুটছি, আর কিছু দিনের ভিতরে আমাদের অপরিপক্ব স্বার্থপরতা আমাদের সেখানেই নিয়ে হাজির করবে।

…এরপর তিনি বিস্তারিত পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেছেন:

আমাদের কাছে প্রচুর সময় ছিল সবকিছু ঠিক করার জন্য, কিন্তু আমরা একান্ন বছর ধরে শুধু নালার চারপাশে ঘুরেছি আর জবুথবু ভাবে চলে একটা মাতাল উৎসব থেকে আরেকটা মাতাল উৎসবে হাজির হয়ে সন্তুষ্ট থেকেছি। আর এখন আমাদের কাছে শুধু থেকে গেছে এইটুকু আশা যেন আমাদের চিকিৎসার জন্য কোন সরকারী হাসপাতালে ভর্তি না হতে হয় বা ভগবান করুন আমরা যেন কোন অপরাধমূলক কাজের শিকার না হই। আমরা ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মানুষেরা আমাদের দেশ আর আমাদের শিশুদের হতাশ করেছি আর ইতিহাস আমাদের এই উন্মত্ততার কারণ জানতে চাইবে।

মনে হচ্ছে আমি ভুল বলছি? আন্তর্জাতিক সংবাদ পড়ে দেখুন, দেখুন যে বাকি বিশ্ব আমাদের এই বিচার বুদ্ধিহীনতা নিয়ে কি ভাবছে, আর তাদের আমাদের সম্পর্কে ধারনা এখন কি। এটা ঠিক যে যত দিন আমাদের পেট্রোলজাত রাসায়নিক দ্রব্যের জন্য কদর আছে, তারা মানচিত্রে আমাদের অবস্থান জানতে আগ্রহী থাকবে, কিন্তু তারপরে আমরা একা, আমাদের একাই চলতে হবে যেমন চলে অন্যান্য দুর্বল দেশের সেই প্রজন্ম, যারা কিছু সময়ের জন্য গৌরবোজ্জ্বল দিন দেখেছিল, কিন্তু সেটাকে তারা নিজেদের সভ্যতাকে জ্বালিয়ে শেষ করার জন্য ব্যবহার করেছে।

ডেমোক্রিসি আবার, রাজনৈতিক হাওয়া বদলের ইঙ্গিত দিয়েছে [en], “আরব বসন্তের হাওয়া”-র সঙ্গে এর তুলনা করেছে:

যখন যখন এমন হাওয়া বয়ে গেছে, তাদের পেছনে রেখে গেছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন: সরকার আর সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর আরও স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা, সুবিচার, ভারসাম্য আর সমতা, কাজ করা আর পণ্য ও পরিষেবা দেওয়ার জন্য এমন বাড়তি দাবি শুধুমাত্র তথাকথিত গণতন্ত্র বিরোধীদের নয়, বরং আমেরিকা, ইয়োরোপ আর এশিয়ার সুপ্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রকেও চাপে ফেলেছে। কিন্তু অন্যান্য অংশে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ঘটেছে আর এই হাওয়াকে নাগরিক স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও মুক্তির নিপীড়ন ও দমনকারী শক্তির প্রত্যাঘাতের সম্মুখীন হতে হয়েছে।

তো আপনি কি এটা অনুভব করছেন? এখানে, মানে আমি বোঝাতে চাইছি এই ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে। নাকি আমরা সেই বিলম্বিত সময়ে আছি- তথ্য পাওয়া আর সেটা মেনে নেওয়ার মাঝামাঝি?

তথ্য – অন্তত উপনির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত – অবাধে পাওয়া যাচ্ছিল টুইটারে। কিছু টুইটার ব্যবহারকারীর মতে এই ফলাফল আদিবাসী ভোটের থেকে বিচ্যুতির ইঙ্গিত দিয়েছে:

এটা উদ্দীপ্ত করে যে #chaguanaswest [চাঙ্গুয়ানাস ওয়েস্ট] কোনও জাতি বিভেদে ভোট দেয়নি…দেখা যাক #jackWarner [জ্যাক ওয়ার্নার] এরপর কি করেন… মানুষকে হতাশ করবেন না!

– ♡সেক্সিডুগলা♡ (@sheenajadon) জুলাই ৩০, ২০১৩

ক্রিস্টাল ডন জ্যাগদেও মনে করেন যে পুরোটা নির্ভর করেছে কাজের ওপর:

কাজ পুরনো কথাকে প্রতিবারই হারিয়ে দেয়! #JackWarner #ChaguanasWest #CHAGWEST #trinidad

— ক্রিস্টাল ডন জ্যাগদেও (@Crysslebee) জুলাই ৩০, ২০১৩

প্লেইন টক এখনও সংশয়ে আছে, বলছে:

ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মানুষ আন্তর্জাতিক স্তরে কলঙ্কিত এবং গুরুতর অবৈধ কাজের অনেক প্রশ্ন যার মাথার ওপর ঝুলছে এমন ব্যক্তিকে সমর্থন করেছে, তার জন্য জনসমাবেশ করেছে আর তাকে নির্বাচন করে পার্লামেন্টে পাঠিয়েছে। আর এটা আমরা করেছি সম্পূর্ণ সজ্ঞানে, বিচারবিবেচনা করার ক্ষমতা না হারিয়ে, আর কোনও রকম চাপ, বলপ্রয়োগ বা জোরজুলুম ছাড়াই। তাহলে এখন এই প্রশ্নটা প্রকট হয়ে উঠেছে যে আমরা কেমন নাগরিক?

এই পোস্টে ব্যবহৃত থাম্বনেইল ছবি জেমস বোয়ির সৌজন্যে অ্যাট্রিবিউশন ২.০ জেনেরিক ক্রিয়েটিভ কমনস লাইসেন্স এর আওতায় প্রকাশিত। দেখুন জেমস বোয়ির ফ্লিকার ফটোস্ট্রিম
Exit mobile version