দারিদ্র্য থেকে ৩৫ মিলিয়ন লোকের মুক্তি- কিন্তু ব্রাজিল কি পারবে বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতে?

জাতিসংঘ ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করার কর্মসুচী পরিচালনা করছে। কিন্তু অনেক দেশই এই লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে না। তবে কিছু দেশ অবশ্য লক্ষ্যমাত্রার কাছে যেতে পারবে।

দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিল। এর জনসংখ্যা ১৯৪ মিলিয়ন। গত এক দশকে ৩৫ মিলিয়ন লোককে দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র থেকে বের করে এনে দেশটি ইতোমধ্যে সবার বাহবা কুড়িয়েছে। তাছাড়া দ্রুত প্রবৃদ্ধিশীল অর্থনীতি দেশ হিসেবে দেশটিতে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে।

ইকোনমি ওয়াচ লিখেছে:

ব্রাজিলের মোট জনসংখ্যা ৫৩ শতাংশ- ১০৪ মিলিয়ন মানুষ ইতোমধ্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১০ বছর আগেও এই সংখ্যা ছিল ৩৮ শতাংশ। বৃহস্পতিবার একজন কর্মকর্তা সরকারি গবেষণায় এমনটিই উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন। […] যদি ব্রাজিলের মধ্যবিত্তরা দেশ গড়তো, মেক্সিকোর পরেই এটাই হতো ১২তম বৃহত্তম দেশ।

ফেভেলাস অথবা মেট্রোপলিটান বস্তি। ছবি সূত্র: ব্লগ ফরমি মেনটিস এনজিও। 

খ্রিস্টান এইড তাদের ২০১২ সালের ‘সত্যিকারের ব্রাজিল: পরিসংখ্যানের পেছনের বৈষম্য’ প্রতিবেদনে দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে আসার সরকারি প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা ব্যাখ্যা করেছে:

লুলা সরকার তাদের দুই টার্ম মেয়াদে দারিদ্র্য বিমোচনে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রভাব একটা পড়েছে। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে বলসা ফ্যামিলিয়া গ্র্যান্ট, ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য জমি বরাদ্দ, গ্রামীণ পেনশন ইত্যাদি। এগুলো বৈষম্য দূর করতে কাজে লেগেছে। এটা হয়েছে কারণ মজুরি থেকে দরিদ্র মানুষের আয় বেড়েছে। লুলা সরকার সফলভাবে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি করতে পারায় দারিদ্র্য কমেছে। তবে উচ্চ আয় এবং নিম্ন আয়ের মধ্যে যে বৈষম্য সেটা কমিয়ে আনা সম্ভব হয় নি।

বলসা ফ্যামিলিযার আগের নাম ছিল বলসা এসকোলা। সিনেটর ক্রিস্টোভাম বুয়ারকিউ ১৯৯৫ সালে ব্রাসিলিয়ার গভর্নর থাকাকালে এটা চালু করেছিলেন। ২০০৩-২০১১ সালে লুলা ডি সিলভার শাসনাকালে এটা জাতীয় পর্যায়ে চালূ হয়।

ব্রাজিলের দারিদ্র্য চিত্র

রিও ডি জেনিরো রাজ্যের সংসদ সদস্য রবসন লেইটি তার ব্লগে লিখেছেন, ব্রাজিল ২৫ বছরের মধ্যে দারিদ্র্য নির্মুলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে:

De acordo com a 16ª edição do relatório do Ministério da Fazenda, “Economia Brasileira em Perspectiva”, divulgada no final de agosto, a queda da taxa de pobreza vai atingir 70% em meados de 2014, seja pela ação dos programas sociais inclusivos, seja pelo crescimento de oportunidades no mercado de trabalho para jovens.

গেল আগস্টের শেষে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ব্রাজিলের অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতের ১৬তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে দারিদ্র্যসীমা ৭০ শতাংশ কমে আসবে। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে শ্রম বাজারে তরুণদের সুযোগ বেড়ে যাওয়ায় এটা সম্ভবপর হবে।

দারিদ্র্যের শতকরা হার। ছবি সূত্র: রবসন লেইটব্লগ 

উপরে উল্লেখিত ওই একই প্রতিবেদনে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে:

আঞ্চলিক এবং স্থানীয় পর্যায়ে সে বৈষম্য তা আয় স্থানান্তর এবং আনুষ্ঠানিক কর্মবাজার তৈরি করার মতো প্রথাগত নিয়মনীতির মাধ্যমে দূর করা যাবে না।

দারিদ্র্য এবং বৈষম্য। ছবি সূত্র: ওসিইডি, ফিলিপ স্পাগনলিব্লগ 

দারিদ্র্যের কারণ

বিভিন্ন প্রবন্ধ আর কার্টুনের লম্বা ফিরিস্তি দিয়ে ফিলিপ স্পাগনলি তার পি.এ.পি-ব্লগ, হিউম্যান রাইটস ইটিসি-তে দারিদ্র্যের কারণ লিপিবদ্ধ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি ঋণ, বিশ্বায়ন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অভাব, অর্থনৈতি প্রবৃদ্ধিহীনতা, শিক্ষা, অতি জনসংখ্যা, পারিবারিক কাঠামো এবং দাসত্ব:

আমরা যদি দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা কমাতে চাই, আমাদের প্রথমে জানতে হবে কী কারণে তারা গরীব হয়েছে।

তার সর্বসাম্প্রতিক লেখায় তিনি খাদ্য মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আরো বিস্তারিতভাবে বলেছেন:

গরীব মানুষেরা তাদের আয়ের বড় অংশই ব্যয় করে খাদ্যের পিছনে। তাই খাদ্যের দাম বাড়লে সেটা তার আর্থিক অবস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এটা তাকে না খেয়ে থাকার পরিস্থিতিতেও ফেলতে পারে। অন্যদিকে বেশিরভাগ গরীব মানুষ কৃষিকাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। বেশি দাম বলতে তাদের আয়ও বেশি বুঝায়। শহুরে গরীব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, খাদ্যের দাম বাড়া তাদের জন্য খারাপ খবর। তাই এটা বলা যায় না, খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে দারিদ্র্য বেড়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের মতে, খাদ্য পণ্যের দামের কারণে ২০১০-২০১১ সালে ৪৪ মিলিয়ন মানুষকে দরিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করতে বাধ্য করেছে।

ব্রাজিলের শিশু শ্রমিক। ছবি সূত্র: জাতিসংঘের ওয়েবসাইট 

ব্রাজিলে দারিদ্র্যতার ইতিহাস অনেকদিনের। এই ২০১২ সালেও প্রায় ১.৪ মিলিয়ন শিশু শ্রমে নিয়োজিত ছিল। জুন মাসের ১২ তারিখে বিশ্ব শিশু শ্রম বিরোধী দিবসে সরকারিভাবেই এই পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে।

শিশু শ্রমিক ব্রাজিলের গ্রামীণ বৈশিষ্ট্যের অংশ। একটি গবেষণা অনুসারে, বেশিরভাগ শিশু শ্রমিক গ্রামেই কাজ করে। গ্রামগুলোতে দারিদ্র্য বিরাজমান, স্কুলও কম এবং বেশ দূরে।

৫-১০ বছর বয়সী ৩০৪,৪১৫ জন (৯.৯%) এবং ১১-১৪ বছর বয়সী ৭৫৫,৯৭৩ জন (৩৬.৬%) মিলিয়ে ৫-১৪ বছর বয়সী প্রায় ১.৪ মিলিয়ন শিশু শ্রম বাজারে রয়েছে:

১১-১৪ বছর বয়সী প্রায় ১২.২% শিশু বাবার অবর্তমানে মায়েরাই যাদের পরিবারের প্রধান তারা কাজ করছে অথবা কাজ খুঁজছে। অন্যদিকে, ১৫% শিশু কাজ করে পরিজনসহ জীবিকা নির্বাহ করে।

দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করা নিয়ে যেখানে সরকারি প্রচেষ্টা নিয়ে বিতর্ক চলছে, সেখানে দারিদ্র্য কমানোর নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (আইএফএডি) ডাম টাভোরা এবং ফেইরি প্রজেক্টে ৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ তহবিল দিয়েছে।

প্রজেক্টটির নামকরণ করা হয়েছে, ব্রাজিলের বিখ্যাত শিক্ষাবিদ, গরীব দরদী, দারিদ্র্য দূরকরণের হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষার প্রবর্তকের নামে।

Exit mobile version