সিরিয়াঃ হুলার গণহত্যা আন্তর্জাতিক প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে

এ পোস্টটি আমাদের সিরিয়া প্রতিবাদ ২০১১/১২ -এর বিশেষ কাভারেজের অংশ

গত ২৫ মে হমসের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত হুলায় মধ্য দুপুরে সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা বুঝতেই পারেনি যে তাঁদের এ বিক্ষোভ মিছিলকে নজীরবিহীন  বর্বরতা পূর্ণ গণহত্যার মাধ্যমে জবাব দেওয়া হবে। সরকার সমর্থক গোষ্ঠী কমপক্ষে ১১৬ জনকে হত্যা করে।

ওই দিনের এক ইউ টিউব ভিডিওতে [মর্মস্পর্শী দৃশ্য] দেখা যায় খুব সম্ভবতঃ ভারী গোলাবর্ষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একজন লোক দৌড়াচ্ছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে  যে এ আক্রমনে ট্যাঙ্ক, আর্টিলারি, রকেট চালিত গ্রেনেড এবং ভারী মেশিন গান ব্যবহার করা হয়েছে। একটি দালানের সামনের প্রবেশ পথের মাটিতে মৃতদেহ পড়ে থাকার দৃশ্য ক্যামেরাম্যান ধারন করেন এ সময় তিনি হুলা শহর বলে চিৎকার করছিলেন। আলো দেখে বোঝা যায় সেটা ছিল সাত-ঘণ্টা ব্যাপী গোলাবর্ষণের শুরু।

সামরিক পোশাক পরিহিত সশস্ত্র লোকেরা হমস এ এসে  অনেক শিশুসহ জনগণের উপর গুলি বর্ষণ শুরু করে

আরেকটি ভিডিওতে [মর্মস্পর্শী দৃশ্য] দেখা যায় একটি কক্ষে কম্বল দিয়ে মোড়ানো মৃতদেহের দৃশ্য। মৃত দেহগুলোর বেশিরভাগই ছিল শিশুদের, সেখানে একজন চিৎকার করে আরব বিশ্বের মৌনতার জন্য দোষারোপ করছিলেন।

গণকবরের আগে মৃতদেহের ছবি, হুলা, সিরিয়া। ছবি- স্নাইপারফটো এজেন্সি, স্বত্ব © ডেমটিক্স (২৬/০৫/২০১২)

হুলাতে সক্রিয়তাবাদী হাদি আব্দাল্লাহ জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকদের দ্রুত সেখানে আসার জন্য এবং সেখানে কী ঘটেছে তা প্রত্যক্ষ করার জন্য আবেদন জানান- কিন্তু তাঁর এ আবেদনে সাড়া মেলে নিঃ

@ থ্যাঙ্কইউফরদ্যাএঙ্গার: হাদি আব্দাল্লাহ জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক দলের প্রধান কে হুলা গণহত্যার বিষয়ে আবেদন জানান।  এ বিষয়ে তাঁর (পর্যবেক্ষক দলের প্রধান) জবাব ছিল “রাত্রি বেলা ভ্রমণের জন্য সরকার আমাদের অনুমতি দেয় নি”

@ থ্যাঙ্কু৪দ্যাএঙ্গার: হাদি আব্দাল্লাহ: প্রায় ৩০০ জন আহত ব্যক্তি আমাদের সামনে মরতে বসেছে আর আমরা এমনকি তাঁদের প্রাথমিক জরুরি চিকিৎসাও প্রদান করতে পারছি না।

জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক দল ওই দিন শেষ পর্যন্ত আসেন এবং হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিশ্চিত হন।

গণকবর, হুলা, সিরিয়া। ছবি-স্নাইপারফটো এজেন্সি, স্বত্ব © ডেমটিক্স (২৬/০৫/২০১২)

এ আঘাত ও আতঙ্কের বিষয়ে বিশ্বজুড়ে কিছু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হল:

@আকরাভিন: #হুলাম্যাসাকার হ্যাশট্যাগে শেয়ারকৃত ছবিগুলো রক্তাপ্লুত, গ্রাফিক এবং হৃদয়বিদারক। এতগুলো সুন্দর শিশু মৃত্যুবরণ করল। # সিরিয়া

@ এনএমসিরিয়াঃ ১০৮ জন মানুষ হত্যার জন্য ##হুলাম্যাসাকার- এ জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল সর্বসম্মত ভাবে ভারী অস্ত্রের ব্যবহারকে দায়ীকরেছে। সত্যিই তাই?

@হামাডিএক্স: #আলহুলাম্যাসাকার আমি আর শিশু চাইনা। দুনিয়া নিরাপদ নয়, মানুষও নয়।

মিশরীয় ব্লগার জেনবিয়া তাঁর ব্লগে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন:

যারাই এ নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করে থাকুকনা কেন তাদের কোন মানবিক অনুভূতি নেই,  মগজ ধোলাই করে তাদের মানুষ হত্যার যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে, তারা ভাল-মন্দের বোধ হারিয়ে ফেলে শিশুদের এ ভাবে হত্যা করেছে।

২৭ মে সিরীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এ ঘটনায় সিরীয় সেনাবাহিনী জড়িত থাকার বিষয়টিকে অস্বীকার করে, আল কায়েদা সমর্থিত সন্ত্রাসীদের উপর দায় চাপান। লেবাননী ব্লগার আস’আদ আবু খলিল (“ক্ষুব্ধ আরব”) এ ঘটনায় হতাশা ব্যক্ত করেনঃ

সিরিয়ার উন্নয়নের বিষয়ে কী করে আমি আবার আমার মতামত ব্যক্ত করব? আমি শুধু সিরিয়ার সরকার এবং বহিষ্কৃত সিরীয় বিরোধী দলগুলোকে অবিশ্বাস করিঃ তাঁদের প্রত্যেকেরই অপরাধ সঙ্ঘটন, নির্বিচারে হত্যা, মিথ্যা বলার প্রমাণিত নজীর ও অতিরঞ্জনের[…] দোষ আছে,  অবশ্যই সরকারের যুদ্ধাপরাধের রেকর্ড আছে (হাফিধ এবং বর্তমানে বাশার সরকারের) কাজেই এ নির্বিচার হত্যাকাণ্ডে তাঁদের দায়ী করা যায়। তাদের কোন নীতি- নৈতিকতা না থাকায় এ ধরনের অপরাধ সঙ্ঘটন থেকে তাঁদের বিরত রাখা যায় না। আমার একজন বন্ধু (আমের) আমাকে লিখেনঃ “কোন বক্তব্যই আমার কাছে কোন অর্থ বহন করে না, এত বেশি পরিমান মিথ্যা যে সত্য জানা দুস্করঃ বোমা হামলা? জবাই? সেনাবাহিনী? গ্রামে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া? এক সঙ্গে এত কিছু ঘটতে পারে না।”

ব্লগার মেস্যালুন আবু খলিলের এ স্ববিরোধী মন্তব্যের সমালোচনা করেনঃ

@মেস্যালুন: সিরিয়া বিষয়ে ক্ষুব্ধ আরবের অবস্থান পরিস্কারঃ বিরোধী ও ক্ষমতাসীনদের প্রতি অনাস্থা, বিশেষ করে বিরোধী দলের প্রতি, ক্ষমতাসীনদের প্রতি কিন্তু প্রধানতঃ বিরোধী দলের প্রতি

রাশিয়ার অবস্থান সম্পর্কে রুওয়াইদা মুস্তাফা মন্তব্য করেছেনঃ

@রুওয়াইদা মুস্তাফা: এই মাত্র খবর এল। ‘রাশিয়া বলেছে হুলা গণহত্যায় দুপক্ষই জড়িত’।

প্রতিবাদকারীরা কেন নিজেদের সন্তানকে হত্যা করবে?

অনেকেই সিরিয়ার সরকারকে ইসরাইলের সাথে তুলনা করেছে (১৯৪৮ সালে লেবাননী গ্রামে গণহত্যার জন্য তাদের দায়ী করা হয়। কাকতালীয়ভাবে ওই গ্রামের নামও হুলা):

@সুলতানআলেকাশেমীঃ  নিষ্পাপদের নির্বিচারে হত্যা- বাশার আল আসাদ হলেন নতুন আরিয়েল শ্যারন

ভুক্তভোগীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সিরিয়া জুড়ে ধর্মঘট চলছেঃ

@হামাইকো: সরকার সমর্থিত গণহত্যার প্রতিবাদে আজ দামাস্কাসের প্রধান বাজারে সাধারণ ধর্মঘট চলছে।

@জেইনসিরঃ  পুরনো চত্বরের মদাত ও হারেকার দোকানগুলো বন্ধ! প্রথম বারের মত তাঁরা ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছে! দামাস্কাস! আমরা ক্রমেই কাছাকাছি আসছি

ব্লগার ইওরিকিরি এ গণহত্যাকে কবিতায় স্মরণ করেছেনঃ

যুদ্ধের অনেক ভূমি ছিল

একটা হল পবিত্র ভূমি

গণহত্যার ভূমি, ঘুরে দাঁড়ানোর স্থান

কে করল এ কাজ? আমরা সবাই জানি। কিন্তু প্রশ্ন তুলবে কে?

জমিনের বাস্তবতা সত্যের গানে মুখরিত

হুলা আমার পবিত্র ভূমি, মে মাসের কোন দিনে।

এ পোস্ট আমাদের সিরিয়া প্রতিবাদ ২০১১/১২ -এর স্পেশাল কাভারেজের অংশ

Exit mobile version